ভূমিকা: ঝুমকা লতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Passiflora foetida, ইংরেজি নাম: Passion-flower, Love-in-a-mist,Wild Passion Fruit, Wild Water Lemon)হচ্ছে প্যাসিফ্লোরাসিস পরিবারে প্যাসিফ্লোরা গণের সপুষ্পক বিরুৎ। এই বিরুৎটি দেখতে চিরসবুজ পত্রঘন লতা। এটি ব্রাজিলের একটি প্রজাতি। এই ফুলের প্রধান সৌন্দর্য হলও মাঝখানে প্রায় ৫ সেমি চওড়া পরাগমুকুট; তাতে থাকে অনেকগুলো সরু সরু ডাটা। বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়ে থাকে। অনেকে এটিকে টবে লাগিয়ে বেল্কোনিতে সাজিয়ে রাখে।[১]
বৈজ্ঞানিক নাম: Passiflora foetida L., Sp. Pl.: 959 (1753). সমনাম: Passiflora hirsuta Lodd. (1818), Passiflora polyaden Vell. (1835), Dysosmia foetida M. Roem. (1846), Dysosmia hirchina SW. ex Roem. (1846). ইংরেজি নাম: Passion-flower, Love-in-a-mist, Wild Passion Fruit, Wild Water Lemon. স্থানীয় নাম: ঝুমকা, ঝুমকা লতা, গোরক ফল। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malpighiales পরিবার: Passifloraceae গণ: Passiflora প্রজাতি: Passiflora foetida
বর্ণনা:
ঝুমকা লতা আরোহী বা অনুসৰ্পী বীরুৎ। বিস্বাদ গন্ধবিশিষ্ট এবং ঘন রোমাবৃত এই বিরুৎটির শাখা-প্রশাখা। পাতা একান্তর, উপবর্তুলাকার-ডিম্বাকার। পাতার দৈর্ঘ্য ৪-১১ ও প্রস্থ ৩-৮ সেমি। পাদদেশ দেখতে হৃৎপিণ্ডাকার, ঝিল্লিময়, সচরাচর ফলকের অর্ধেক পর্যন্ত ৩৫ খন্ডিত, কখনও অখন্ড, কিনারা অখন্ড বা প্রায় অখন্ড। পত্রবৃন্ত দেড় থেকে ছয় সেমি লম্বা, গ্রন্থিবর্জিত, উপপত্র অর্ধ কর্ণবৎ।
পুষ্পমঞ্জরী অবৃন্তক, ১ (-২)টি পুষ্পবিশিষ্ট, মঞ্জরীপত্র এবং মঞ্জরীপত্রিকা (১-) ২-৪ সেমি লম্বা। ফুল গোলাপী, ফ্যাকাশে গোলাপী অথবা বেগুনি, কখনও বৃত্যংশ ৫টি, ডিম্বাকার-ভল্লাকার। পাপড়ি ৫টি, দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার হয়। ফুল বৃতির নল থেকে কিছুটা খাটো। মুকুট এক বা একাধিক শ্রেণীতে সজ্জিত সূত্রবৎ পুংদন্ড বা বলয়ের সমন্বয়ে গঠিত, কখনও মুকুট অনুপস্থিত।
পুংকেশর ৫টি, পুংদন্ড চেপটা, ৫-৬ মিমি লম্বা, পরাগধানী সবুজাভ হলুদ। গর্ভাশয় গোলকাকার থেকে উপবৃত্তাকার, সচরাচর মসৃণ, গর্ভদন্ড ৪-৫ মিমি লম্বা। ফল শুষ্ক বেরী, হলুদাভ থেকে লাল, মসৃণ। বীজ অনেক, ডিম্বাকৃতি থেকে গোঁজ আকৃতির।[২]
ক্রোমোসোম সংখ্যা :
2n = ১৮, ২০ [৩]
বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
প্রখর সূর্যালোকযুক্ত বা আংশিক ছায়াযুক্ত উভয় স্থান এই গুল্মের জন্য উপযুক্ত। যে স্থানে লাগানো হবে সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে। ত্রিশূল আকৃতির পাতা বিশিষ্ট্য এই ঝুমকা লতার জাত অনুসারে নানা রঙের ফুল ফুটে থাকে। মূলত খরিপ মৌসুমে গাছে ফুল ফুটে। মে থেকে ডিসেম্বর মাসে এই লতায় ফুল ও ফল ধরে। বীজ, শাখা বা দাবা কলম দ্বারা এর বংশবিস্তার হয়।[৪]
বিস্তৃতি:
সম্ভবত দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উৎপন্ন, বর্তমানে ইহার চাষ হয় এবং প্রায়শই অধিকাংশ গ্রীষ্ম প্রধান দেশে দেশ্যভূত। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে ইহা বুনো পরিবেশে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভেষজ ব্যবহার:
ইহার পাতায় কম হলেও ৫ প্রকার ফ্লাভোনয়েড বিদ্যমান এবং কান্ডের রেজিন থেকে এ্যামানিনসহ প্রায় ১০ প্রকার ফ্লাভোনয়েড (apigenin) পৃথক করা হয়েছে। উদ্ভিদটিতে আরও আছে ইনডোল উপক্ষার (হরমোন), হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইডস।
পাতার ক্বাথ পিত্তাধিক্যজনিত অসুস্থতায় এবং এ্যাজমায় ব্যবহৃত হয়। শুষ্ক পাতা থেকে তৈরি চা গলার ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। মাথা ঘুরা এবং মাথা ব্যাথা দূর করতে মাথায় ইহার পাতা লাগানও হয়। ফল এক প্রকার বমনকারক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফল বেদনা নাশক, এন্টিসপাজমোটিক এবং উপশমকারী গুণাবলী বিদ্যমান (Ghani, 2003).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
পাকা ফল টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়। ইহা মিষ্ট এবং রসালো। কাঁচা ফল বিষাক্ত। ইহা। ঘেড়ার উদ্ভিদ এবং কৃষিক্ষেতে শস্য আচ্ছাদনকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Verheij and Coronel, 1992).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ঝুমকা লতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ঝুমকা লতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[২]
তথ্যসূত্র:
১. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৭৪, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
২. এম আহসান হাবীব (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ম ১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮৩-৩৮৪ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0
৩. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
৪. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ফুলের চাষ প্রথম সংস্করণ ২০০৩ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ১২৬। আইএসবিএন 984-483-108-3
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Renjusplace
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।