সর্পগন্ধা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ গুণসম্পন্ন বন্য প্রজাতি

বন্য প্রজাতি

সর্পগন্ধা

বৈজ্ঞানিক নাম: Rauvolfia serpentina (L.) Benth. etKurz, Forest Fl. Brit. Burm. 2: 171 (1877). সমনাম: Ophioxylon serpentinum L. (1753), Ophioxylon trifoliatum Gaertn. (1791), Tabernaemontana cylindracea Wall. (1829). ইংরেজি নাম: Serpentina. স্থানীয় নাম: সর্পগন্ধা, চান্দ্রা, ছোট চান্দা, ছুরছান (চাকমা), বুমরাজা (মারমা)।

ভূমিকা: সর্পগন্ধা (বৈজ্ঞানিক নাম: Rauvolfia serpentine, ইংরেজি নাম: Serpentina.) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অতি প্রযোজনীয় ভেষজ উদ্ভিদ।

সর্পগন্ধা-এর বর্ণনা:

খাড়া, মসৃণ, বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, অনূর্ধ্ব ৩০ সেমি লম্বা। পত্র সরল, চক্রাবর্তী, পত্রবৃন্ত ১.৪ সেমি লম্বা, পত্রফলক উপবৃত্তাকার-বল্লমাকার বা ডিম্বাকার-বল্লমাকার, ৮-১৬ X ২-৬ সেমি, মাঝখানে প্রশস্ততর, দুই প্রান্ত ক্রম সরু, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র। সাইম নিবিড়, কাক্ষিক বা প্রান্তীয়, পুষ্পদন্ড অনূর্ধ্ব ১২ সেমি লম্বা, পুষ্পবৃন্তিকা লাল। পুষ্প সাদাটে বা গোলাপিআভ। বৃতি খন্ডসমূহ ২.৫ মিমি লম্বা, বল্লমাকার, সূক্ষাগ, মসৃণ, উজ্জ্বল লাল । দলমণ্ডল নল অনূর্ধ্ব ২ সেমি লম্বা, সরু, মধ্যবর্তী স্থানের কিঞ্চিৎ উপরে ফীত, খন্ড দৈর্ঘ্যে নলের চেয়ে বেশ খর্ব, গলদেশ রোমশ। ফলিক্যাল অনুর্ব ০.৮ সেমি লম্বা, কমবেশী যমক, যথাযথভাবে তীক্ষ্মা, পরিপক্ক অবস্থায় রক্তিম-কালো।

আরো পড়ুন: সর্পগন্ধা উদ্ভিদের ঔষধি ব্যবহার ও প্রযোগ বিধি

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২০, ২২ (Kumar’ and Subramaniam, 1986)

সর্পগন্ধা-এর চাষাবাদ:

অরন্যতল আশ্রয়ী উদ্ভিদ রূপে চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী উভয় প্রকার বনাঞ্চলেই জন্মে। উচ্চ বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ বনাঞ্চলের পাহাড়ী ঢলের কিনারায় ও এটি জন্মায়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল এপ্রিল-অক্টোবর। সর্পগন্ধা উদ্ভিদদের বীজ এবং মূলের কাটিং দ্বারা সহজেই এর বংশ বিস্তার সম্ভব।

বিস্তৃতি:

ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় হিমালয়সহ ভারত, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশে ইহা সাধারণভাবে পাওয়া যায় না তবে বিক্ষিপ্তভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী জেলায় পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

Rauvolfia serpentina এর মূল নিদ্রাকর্ষক বিশেষতঃ মানসিক অসুস্থতার ও উত্তেজনা প্রশমনকর, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং রোগাক্রান্ত অন্ত্রের বেদনা কমায়। মূলের ক্বাথ জরায়ুর সংকোচন সৃষ্টি করে এবং জ্বনের নিষ্কাশন ঘটায়। এটি উদরাময় এর একটি মূল্যবান নিরাময়ক (Kapoor, 1990)।

আরো পড়ুন:  কান্‌কানটী বা ডেংগা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় মারমারা এর মূলের নির্যাস লবণের সাথে কাশি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দিয়ে থাকে। চাকমারা এর পাতা এবং ফল পেটের ব্যথা ও অচেতন নিদ্রার বড়ি তৈরীর জন্য ব্যবহার করে থাকে (Rahman et al., 2000)।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) সর্পগন্ধা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, অত্যধিক ব্যবহারের কারণে আবাসস্থল বিনাশ এবং বাংলাদেশে এটি সংরক্ষণ নির্ভর (cd) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে সর্পগন্ধা সংরক্ষণের জন্য আবাদের আওতায় আনা হয়েছে এবং বেশ কিছু উদ্ভিদ উদ্যানে এর জার্মপ্লাজম ব্যাংক মাঠ পর্যায়ে চালু করা হয়েছে (Khan et al., 2001)। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে বন্য এই গাছের অত্যধিক আহরণ হতে রক্ষার জন্য বানিজ্যিকভাবে এর রোপন কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন (Khan et al., 2001)। 

তথ্যসূত্র:

১. এম আতিকুর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ২০৫-২০৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj

Leave a Comment

error: Content is protected !!