সঞ্জীবনী পাহাড়ে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

সঞ্জীবনী প্রজাতিটি দেখতে অনেকটা ফার্ন-এর মতো। পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মে। এর ভেষজ গুণ আছে। পেটের সমস্যা, মেয়েদের শারীরিক বিভিন্ন দুর্বলতা, ছেলেদের আভ্যন্তরীণ অসুস্থতা ইত্যাদি সারাতে এই গাছটি বেশ কার্যকর।

পরিচিতি:

এটির মূল বা রাইজম মাটির উপরে সমান্তরালভাবে বাড়ে এবং তা থেকেই পাতা বেরোয়। পাতা ঝিরঝিরে, গাঢ় সবুজ এবং নরম। সহজেই শুকিয়ে যায়। শুকনো গাছ কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখলে তা পুনরায় সজীব হয়ে ওঠে, হয়তো-বা এজন্য এর সঞ্জীবনী নামকরণ। অবশ্য এটির গুণপনাও দেহ-মনে জীবনীশক্তির সঞ্চার করা। এটির ফুল ও ফল হয় না। তাই বংশ-বিস্তারের জন্য স্পোর (spore) তৈরী হয়। সাধারণতঃ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্পোরের সৃষ্টি হয় এবং তা থেকেই নতুন গাছ জন্মে।

প্রজাতিসমূহ:

ভারতের প্রায় সর্বত্র পাহাড়ী অঞ্চলে ছায়াযুক্ত ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে সঞ্জীবনী জন্মে। এটি ঠিক ফার্ণ না হলেও ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ বলা যেতে পারে। ইংরেজীতে একে তাই Fern-allies বলা হয়। Selaginellaceae পরিবারভুক্ত Selaginella গণের প্রায় ৫০টি প্রজাতি ভারতে পাওয়া গেলেও মাত্র কয়েকটি ওষধি গুণসম্পন্ন। তন্মধ্যে Selaginella involvens Spring ভারতে প্রায় সর্বত্র কম-বেশি পাওয়া যায় এবং এটিকে সঞ্জীবনী বলা হয়। এই গণের আরও দু’টি গাছকে সঞ্জীবনী বলা হয়ে থাকে, প্রায় সমগুণ-সম্পন্ন, তবে সেগুলি উত্তর কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়। এই দু’টি প্রজাতির নাম হলো — Selaginella tarariscina Spring, Selaginella wallichii Spring.

সঞ্জীবনী-এর গুণপনা

গাছটি ভারতীয়, কিন্তু তবুও ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ সম্বন্ধে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীকালের সমীক্ষা থেকে যেসব প্রামাণ্য তথ্য সংগৃহীত করা সম্ভব হয়েছে, তা থেকে সঞ্জীবনীর নিম্নলিখিত গুণাবলীর পরিচয় পাওয়া যায়। এটি বায়ুবিকার, অপস্মার (মৃগী), সর্দি-কাসি, কৃশতা, অর্শ, রজোরোধ, গুদভ্রংশ (Prolapse of anus), ক্ষুদ্র মূত্রাশ্বরী, রক্তপিত্ত, ধাতুদৌর্বল্য, প্রসবাস্তিক দুর্বলতা, ক্ষয়জনিত অজীর্ণ ও অগ্নিমান্দ্য, গ্রহণী, শ্বেতপ্রদর, মূত্রকৃচ্ছ্র, ইন্দ্রিয়দৌর্বল্য এবং বার্ধক্যজনিত কিংবা রোগান্তিক দুর্বলতায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এই ভেষজটি দীর্ঘায়ুলাভের সহায়ক। কিভাবে এটিকে ব্যবহার করবেন, সেটি জানা দরকার। এই গাছ কাঁচা বা শুকনো সংগ্রহ করে রেখে দিলে বছরখানিক ভালভাবেই থাকবে।

আরো পড়ুন:  খাড়া মুরালি ছোট আকৃতির ভেষজ বিরুৎ

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৩৪-১৩৫।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Salicyna

Leave a Comment

error: Content is protected !!