ভূমিকা: তুলসি বা তুলসী বা তুলশী (ইংরেজি: Basil) মহা উপকারি ভেষজ বিরুত জাতীয় উদ্ভিদ। এরা লামিয়াসি পরিবারের ওসিমাম গণের উদ্ভিদ প্রজাতি। বাংলাদেশ ভারতে সাধারণত ওসিমাম গণের ৮টি প্রজাতির গাছকে তুলসি বলা হয়।[১] বাংলাদেশে যে পাঁচ প্রজাতির তুলসি পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে কালো তুলসি, বন তুলসি, বাবুই তুলসি, রাম তুলসি এবং শ্বেত তুলসি। এছাড়াও ভারতে আরো ৩ প্রজাতির তুলসি পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে কর্পূর তুলসি, লেবু তুলসি, Ocimum filamentosum. সবগুলো তুলসিই ভেষজগুণে অনন্য এবং একটির পরিবর্তে অন্যটি ভেষজ কাজে লাগানো যায়। সারা দুনিয়ায় ১৫ প্রজাতির তুলসি খুবই জনপ্রিয়। সাধারণত প্রচলিত তুলসি বা কালো তুলসির ভেষজ উপকারিতা পড়ুন
মহা উপকারি তুলসি গাছের ঔষধি গুনাগুণ
১. কালো তুলসি: তুলসি বা তুলসী বা তুলশী কালো তুলসি বা কৃষ্ণ তুলসি (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum tenuiflorum, ইংরেজি: Sacred Basil, holy basil, বা tulasi) বাংলাদেশ ভারতে সচরাচর দেখা যায় এবং মানুষ এটিকেই বেশি ব্যবহার করে। এরা সুগন্ধিময় বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, ১৪০ সেমি পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন কালো তুলসি
২. বন তুলসি বা বনবর্বরিকা (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum americanum, ইংরেজি: Rosary Ocimum) ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে যথেষ্ট ব্যবহৃত হয়। এরা খাড়া, শক্ত, সুগন্ধিযুক্ত বর্ষজীবী বীরুৎ, ৪০ সেমি পর্যন্ত লম্বা। কাণ্ড সরল হতে অনেক শাখান্বিত, তরুণ অংশ অণু রোমশ থেকে রোমশ।[২]
মূল নিবন্ধ পড়ুন বন তুলসি
৩. বাবুই তুলসি বা দুলাল তুলসি (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum basilicum,ইংরেজি: Common Basil) বিভিন্ন প্রজাতির তুলসির ভেতরে আরো একটি প্রজাতি। বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ বাবুই তুলসি ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এরা প্রায় মসৃণ, তরুণ অংশ খর রোমাবৃত। কাণ্ড চতুষ্কোণাকার, আঁজযুক্ত।[২]
মূল নিবন্ধ বাবুই তুলসি
৪. রাম তুলসি (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum gratissimum, ইংরেজি: Shrubby Basil) গাছের বীজ ইউনানি সম্প্রদায় খুবই ব্যবহার করেন। নব্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণের মতে এই দলটির আদিম বাসস্থান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। রাম তুলসি একটি গুল্ম, ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু, তরুণ অংশে রোমশ।
মূল নিবন্ধ রাম তুলসি
৫. শ্বেত তুলসি (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum suave) বর্ষজীবী বীরুৎ এটি বাংলাদেশ ভারতে কম পাওয়া যায়। এরা প্রায় ৬০ সেমি লম্বা। কাণ্ড রোমশ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাজের উপর।
মূল নিবন্ধ শ্বেত তুলসি
৬. কর্পূর তুলসি (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum kilimandscharicum) গাছ থেকে কর্পূর (camphor oil) পাওয়া যায়; এটির আদিম জন্মস্থান নাকি আফ্রিকার কিলিমানজারো পর্বত। এটি ভারতে তুলসি নামে বা বন তুলসি নামে পরিচিত হলেও এটি ঠিক তুলসি নয়।
৭. লেবু তুলসি (ইংরেজি: Thai lemon basil, বা Lao basil, বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum × africanum) হচ্ছে বাবুই তুলসি এবং বন তুলসির সংকর প্রজাতি।
মূল নিবন্ধ লেবু তুলসি
৮. Ocimum filamentosum: Ocimum filamentosum (সমনাম: Ocimum adscendens Willd.) হচ্ছে আরেক প্রজাতির তুলসি যা তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি অঞ্চলে পাওয়া যায়।
অন্যান্য তথ্য: তুলসির ভেষজগুণ অনেক বেশি বিধায় সবগুলো তুলসিই সংরক্ষণ করা জরুরি। তবে উল্লেখ করা উচিত হবে যে Ocimum গণে ৬০টির অধিক প্রজাতি আছে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৭৬-৭৮।
২. মাহবুবা খানম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০৭-৩১২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: cchatfield
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
Ocimum sanctum