সব মশলার মধ্যে নুনের পরই দ্বিতীয় স্থান হলো মরিচ বা লঙ্কার। বাংলাদেশ ও ভারতে দুই প্রজাতির মরিচ চাষ হয়ে থাকে যাদের নাম হচ্ছে আকাশি মরিচ ও কাঁচা মরিচ। বলা হয়ে থাকে ব্যঞ্জনে বা তরকারিতে যদি নুন-লঙ্কা না থাকে তাহলে তা বিস্বাদ হয়ে যায়। আমাদের দেশে শুকনা লাল মরিচের সংগে সংগে তরকারিতে, ডালে বা যে কোনো নোনতা খাবারে কাঁচা মরিচও ব্যবহার করা হয়। কাঁচা মরিচ ঝালের জন্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই খাওয়ার সময় কাঁচা মরিচ খেলে মুখ থেকে যে লালা বেরোয় তা খাবার হজম করবার পক্ষে ভাল।
আজকাল লাল লঙ্কা বা শুকনা লঙ্কা বা শুকনা মরিচ খেতে অনেকেই আপত্তি করেন পেট জ্বালা বা ব্যথা করা বা গ্যাস্ট্রিক আলসার ও আমাশার ভয়ে। কিন্তু কাঁচা লঙ্কা সেদিক থেকে অনেকটা উপকারি। পরিমিতভাবে কাঁচা লঙ্কা খেলে মুখের স্বাদ ও খাওয়ার রুচি বেড়ে যায় এবং স্যালাইভা বা লালার উৎপত্তির জন্যে হজমের পক্ষে কাঁচালঙ্কা যে ভাল এ কথা আগেই বলা হয়েছে।
আয়ুর্বেদ মতে লঙ্কা লঘু, উষ্ণ, রুক্ষ, পাচক (খাবার হজম করায়), রোধক (মলরোধ করে), অগ্নি উদ্দীপক (খিদে বাড়িয়ে দেয়), দাহকর (বেশি খেলে জ্বালা করে), মলনাশক ও ভুক্ত দ্রব্য শোধক। চুলকুনি (কণ্ডু), কৃমি, কফ, ক্লেদ ও ব্রণ নাশ করে। অজীর্ণ, বিসূচিকা (কলেরা), মেহ (প্রস্রাবের পীড়া), প্রলাপ, অরুচি, ধ্বজভঙ্গ, স্বরভঙ্গ ও শুক্রমেহে উপকার দেয়। শিরার ভেতরে জমা শ্লেষ্ম কমিয়ে দেয়।
চিকিৎসকদের মতে আগ্নেয় (খিদে বাড়িয়ে দেয়) নিদ্রাকারক, অজীর্ণ রোগে উপকারী। ব্যথা ও বাতে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও কাঁচা মরিচের কয়েকটি ভেষজ উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
কাঁচা মরিচের ভেষজ উপকারিতা:
১. ঠাণ্ডা ও কফ যেসব লোকের বেশি হয় তেমন প্রকৃতির লোকের পক্ষে কাঁচা মরিচ খাওয়া উপকারি, ভাতের সাথে কাঁচা মরিচ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
২. অল্প পরিমাণে কাঁচা মরিচ খেলে কফের জন্যে যে স্থূলতা তা দূর হয়।
৩. কাঁচা মরিচ শরীরের বদ্ধমল ও লোমকূপ পরিষ্কার করে। কাঁচা মরিচ শরীরের ফোলা কমিয়ে দেয়, শিরায় খিচুনি এবং কফের জন্যে যে ব্যথা হয় তারও উপশম করে।
৪. বলা হয়ে থাকে শুকনা লঙ্কার শুষ্ক খোসা খেলে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস সারে, পাতলা পায়খানা বা ভেদ ও বমির নিবৃত্তি হয়।
লঙ্কার গুণাবলী সম্পর্কে আরও অভিমত আছে। লঙ্কা তীক্ষ্ণ, উষ্ণ, দীপন, পাচন, পিত্তকারক, রক্তবর্ধক এবং কলেরার পক্ষে উপকারী। কৃমিনাশক, দাহক এই দুটি গুণও আছে। এছাড়াও মু’শুদ্ধি করে, অগ্নিপ্রদীপ্ত করে বা খিদে বাড়িয়ে দেয় আহার শোষণ করে অর্থাৎ যা খাওয়া হয় তা শরীরে লাগে শরীর শোষণ করে নেয়, খাওয়া-দাওয়া জিভের কাছে রুচিকর করে। শুকনা লঙ্কা বায়ুনাশকও বলা হয়।
সুস্থ থাকতে মরিচের প্রয়োগ:
১. সর্দিজনিত পেটব্যথা: শুকনা লঙ্কার বীজ জলের সঙ্গে গিলে খেলে সর্দির জন্যে যে পেটব্যথা হয় তা সারে।
২. শূল ব্যথা: শূলের কষ্টে লঙ্কার আরক জলে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।
৩. আন্ত্রিক রোগে বা কলেরা: শুকনা মরিচের বীজ বের করে নিয়ে পেঁয়াজের রসে পিষে গুলি বা বটিকা তৈরি করে নিয়ে আন্ত্রিক রোগে বা কলেরায় দু তিনটি গুলি খাওয়ালে অনেক সময় উপকার হয়। লঙ্কা, কর্পূর আর হিং সম পরিমাণে নিয়ে পিষে গুলি বা বটিকা তৈরি করে জলের সঙ্গে এক ঘন্টা অন্তর দুটি গুলি খাওয়ালে অনেক সময় কলেরার উপকার হয়।
৪. ছারপোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা: শুকনা লঙ্কা জলে ফুটিয়ে ক্বাথ তৈরি করে যে খাটে ছারপোকার উপদ্রব ঢেলে দিলে ছারপোকা মরে যায়।
৫. কুকুর কামড়ে: কুকুর কামড়ালে তৎক্ষণাৎ লাল লঙ্কা পিষে নিয়ে ক্ষত স্থানে ভরে দিলে বিষ পুড়ে বা জ্বলে যায়।
বেশি মরিচ খাওয়ার অপকারিতা:
১. বেশি লঙ্কা খেলে যকৃৎ অথাৎ লিভার গরম হয়ে ওঠে।
২. শুক্র তরল হয় অতিরিক্ত লঙ্কা খেলে, রেতঃপাত (শুক্রপাত বা বীর্যপাত) রোগ হয়। রতিশক্তি হ্রাস পায়।
৩. নাড়ির গতি দ্রুত হয়, শরীর গরম হয়, মস্তিষ্ক দুর্বল হয়, পাকস্থলীতে ব্যথা হয়।
৪. হজম শক্তি নষ্ট হয়ে যায়-ভয়ঙ্কর রকমের অজীর্ণ রোগ দেখা দেয় যা সারানো প্রায় দুঃসাধ্য।
৫. মরিচ খেলে শরীর গরম হয়ে ওঠার জন্যে অস্বাভাবিক উত্তেজনা দেখা দেয়।
৬. চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়, সেই জন্যে অনেকে মনে করেন বেশি লঙ্কা খেলে দৃষ্টিশক্তি হারাবার ভয় আছে।
তথ্যসূত্র:
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, ২০১-২০২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।