দেশীই হোক আর বহিরাগতই হোক, ভারত, বাংলাদেশের মাটিতে এসে চাষাবাদ শুরু হলে তা সে খাদ্য তালিকাযুক্ত হবে। তারপরে সেটির ভেষজগুণ আছে কি না তা নিয়ে নাড়াচাড়া হবেই। এই বিচারের হাত থেকে ফুলকপি (Cauliflower) নিয়েও গবেষণা হয়েছে। এই উপাদেয় খাদ্য সবজিটিকে কিভাবে রোগ-প্রতিকারে আমরা কাজে লাগাতে পারি, সেটাই নিয়ে এই প্রবন্ধ ।
ফুলকপি-এর ভেষজ ব্যবহার:
১. হৃদ্দৌর্বল্যে: নানা রোগে ভোগার পর এটি আসতে পারে অথবা সরাসরি হৃদয়ের নিজের গোলমালেও হতে পারে। সামান্যতেই বুক ধড়ফড় করে। এক্ষেত্রে ফুল কপি ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে ৪ কাপ জলে লবণ সহযোগে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ কাপ খানিক থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, হালকা গরম থাকতে থাকতে সকালের দিকে একবার এবং প্রয়োজনে বৈকালের দিকে পুনরায় তৈরী ক’রে আর একবার খাওয়া যেতে পারে। সিদ্ধ হওয়া কপির টুকরো তরকারি হিসেবে রান্না ক’রে খাওয়া যায়, তবে যাঁদের সামান্যতে বায়ু হয়, তাঁরা কেবল যূষ খাবেন, সবজি খাবেন না।
২. স্বপ্নদোষ ও অন্যান্য কারণজনিত শুক্রহ্রাসে: ক্ষয় করার নেশা যদি মাথায় চাপে, তখন ভোগের আধার পাওয়া গেল কি গেল না, সেদিকে আর নজর থাকে না। পেলেও অবাধ বিচরণ, না পেলেও তাই, ফলে ক্ষয়ের মাত্রাধিক্যে শরীর ও মনে ক্লান্তি। এমতাবস্থায় উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ফুলকপির যূষ ও সবজি তৈরি করে খান। মাসখানিকের মধ্যে উপকার পাবেন । এরপর আরও কিছুদিন খাওয়া উচিত।
৩. ক্রিমিতে: ছোট-বড় যে কোন ক্রিমির আধিক্যে কষ্ট পেলে ফুলকপি যূষ এবং সবজি সপ্তাহ দুই খেলে বেশ কিছুদিনের জন্য ভাল থাকবেন। এটি কেবল round worm এবং Thread worm-এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, অন্য ক্রিমির ক্ষেত্রে কাজ হবে কিনা বলতে পারবো না।[১]
ফুলকপির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
পুষ্টিসমৃদ্ধ ফুলকপি সবজি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। এর ভাজি আর তরকারি খেতে দারুণ। ফুলকপির তৈরি সিঙ্গারা, চপ, ফুলরি, পুরি এসব খাবার খুবই মজাদার। ব্রোকলি ছাড়া অন্য যে কোনো সবজির তুলনায় ফুলকপিতে ভিটামিন-সি’র পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এর প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন-সি রয়েছে ৯১ মিলিগ্রাম। অথচ করল্লায় এর পরিমাণ হচ্ছে ৬৮ মিলিগ্রাম, সাজিনায় ৪৫ মিলিগ্রাম, ওলকপিতে ৫৩ মিলিগ্রাম, মুলায় ৩৪ মিলিগ্রাম এবং টমেটোতে আছে ৩১ মিলিগ্রাম। ফুলকপিতে ভিটামিন-কে’র পরিমাণও রয়েছে যথেষ্ট। এর অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন ও ভিটামিন-বি আছে যথাক্রমে ২.৬ গ্রাম, ৭.৫ গ্রাম, ০.১ গ্রাম, ৪১ মিলিগ্রাম, ১.৫ মিলিগ্রাম, ৩০ মাইক্রোগ্রাম এবং ০.০৫৭ মিলিগ্রাম।[২]
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৮৫-৮৬।
২. নাহিদ বিন রফিক, শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ, তারিখহীন, কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), http://www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/১৪২৪/অগ্রহায়ণ/শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।