জানা থাকা ভালো সর্ব প্রকার কলচিকামের কন্দ ও বীজ থেকে কলচিসিন নামক বীর্য বিশেষ বা উপক্ষার পাওয়া যায়। এই বীর্য শক্তিটিকে নিয়ে কিভাবে সমীক্ষা হয়েছে, তা এখানে দেওয়া হচ্ছে। ভারতে মাত্র ২টি প্রজাতি পশ্চিম হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানে ২-৯ হাজার ফুট উচ্চতায় জন্মে। সে দুটি প্রজাতি হলো Colchicum luteum এবং colchicum aitchisonii. ঔষধার্থে ভারতে কলচিকামের এই প্রজাতির কন্দই ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কারণ এ দেশের বাজারে কলচিকামের বীজ বিক্রয় হতে বড় একটা দেখা যায় না। তবে এর পাতা ও ফুল থেকে অল্প-বিস্তর কলচিসিন পাওয়া যায়। ফুল ও কন্দ বিষাক্ত। ফুল থেকে শিশুদের সাবধানে রাখতে হয়।
কলচিসিন অল্প মাত্রায় পরিবর্তক, বায়ুনাশক, বিরেচক, পিত্তনিঃসারক, বেদনানাশক, স্বেদজনক, অবসাদক, মূত্রকারক ও কামোদ্দীপক। তাছাড়া বাতের ব্যথায় (প্রথমাবস্থায়) প্লীহা ও যকৃতের, নানাবিধ রোগে ব্যবহার্য। কন্দ বেটে লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমে যায়। বর্তমানে গাছের প্রজনন বৃদ্ধির কাজে কলচিসিন প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। কন্দ মস্তিষ্কের স্নিগ্ধতাকারক এবং পুরাতন অর্শে লাগালে ব্যথা ও ঘা দুই-ই কমে।
অধিক মাত্রায় সেবন করলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তখন অত্যধিক দাস্ত ও বমি হয়, লালা নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া শিরঃশূল, অবসাদ ও দুর্বলতা দেখা যায়। অধিক মাত্রায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঔষধার্থে ব্যবহার্য : শুষ্ক কন্দ ও বীজ
সুরিঞ্জান-এর লোকায়তিক যোগ
শুষ্ক কন্দের চূর্ণ এককভাবে এবং অন্য দ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে নানা প্রকার রোগে ব্যবহার ক’রে কি ফল পাওয়া গেছে, তা নিম্নে দেওয়া হলো।
১. বাতের ব্যথায়: গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, অল্প অল্প ফোলা, তা সে এমনি গাউট হোক বা রিউম্যাটিক গাউট হোক, এটির অল্পমাত্রায় ব্যবহার করলে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া যায়। ২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার ক’রে খেতে হবে। ঘৃতকুমারীর শাঁসের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া চলে। এছাড়া শোধিত গুগ্গুলুর (৫০০ মিলিগ্রাম) সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো ভালো কাজ হয়। কন্দ বেটে ফোলায় প্রলেপ দিলে সত্বর ব্যথা ও ফোলা কমে। এক্ষেত্রে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, এই দ্রব্যটি রোগের প্রথমাবস্থায় চমৎকার কাজ করলেও পুরাতন অবস্থায় তা করে না। রোগীর দুর্বলতা ও উদরাময় থাকলে কোন অবস্থাতেই এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। কলচিকাম ব্যবহারের ফলে অত্যধিক ঘাম হতে থাকলে ও বমি বমি ভাব দেখা দিলে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
২. যকৃতের ক্রিয়াহ্রাসে: এর ফলে শরীরে পিত্তনিঃসরণ কম হয়, ক্ষুধাও ভাল হয় না, কিছু খেলেই পেটে বায়ু জমে। এ অবস্থায় যোনিকন্দের চূর্ণ ১২৫ মিলিগ্রাম, মাত্রায় ঘৃতকুমারীর শাঁসের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে একবার এবং ঐভাবে বৈকালে একবার খেলে মাসখানিক পরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। প্রথমে মাত্রা ১২৫ মিলিগ্রাম দিয়ে আরম্ভ করলেও ২৫০ মিলিগ্রাম থেকে ৩৭৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত মাত্রায় ব্যবহার করা যায়। তবে মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়।
৩. কামোত্তেজনা হ্রাসে: ‘আছে গরু না বয় হাল’–এ যেন সেই অবস্থা। এক্ষেত্রে ২৫০ মিলিগ্রাম যোনিকন্দ চূর্ণ এক টিপ গোল মরিচের গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে সারাদিনে একবার, মাসখানেক পরে দিনে ২ বার ক’রে মোট ২ মাস খেলে উপকার পাওয়া যাবে। তারপরও একবার ক’রে আরও মাসখানেক খাওয়া ভাল ।
৪. অর্শে: তা সে শুষ্কাশই হোক বা রক্তার্শই হোক, সব ক্ষেত্রেই যোনিকন্দের ব্যবহার সদ্য ফলপ্রদ। প্রথমত যোনিকন্দ চূর্ণ ১২৫ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার খেতে হবে। দ্বিতীয়ত যোনিকন্দ দিয়ে ঘৃতপাক ক’রে সেই ঘি গুহ্যদেশে দিনে ২/৩ বার লাগাতে হবে। এর ফলে রক্তশ্রুতি বন্ধ হয়ে ব্যথা ও ফোলা কমে, কোন কোন ক্ষেত্রে ঘা প্রস্তুত হওয়াটা বিধেয় । হয়ে গেলে তাও সারে। তবে ঘৃতপাক পদ্ধতিতে এটি কোন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৩৫-৩৮।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Shakir Ahmad
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।