
উলট চন্ডাল একটি বর্ষজীবী লতানো বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি অতি পরিচিত ঔষধি উদ্ভিদ। এর পাতা সরল, একান্তর, ওভেট-লেন্সিওলেট, বৃন্তহীন, পাতার শীর্ষ ক্রমশ আকর্ষীর মত লম্বা এবং পেঁচানো, শিরাবিন্যাস সমান্তরাল। পুষ্প একক, কাক্ষিক, লম্বাবৃন্তযুক্ত, পুষ্পপত্র ৬টি, লম্বা, সরু, কিনার ঢেউ খেলানো, উপরের দিকে মুখ করানো, প্রথমত সবুজাভ কিন্তু পরে লালচে হলুদ বর্ণের, পুংকেশর ৬টি, পুংদণ্ড বেশ লম্বা এবং সোনালী হলুদ, গর্ভপত্র তিনটি, সংযুক্ত, অধিকগর্ভ, ফল লম্বা ক্যাপসিউল। এর মূল দেখতে অনেকটা মিষ্টি আলুর মতো।
উলট চন্ডাল উদ্ভিদের সাধারণ গুণাগুণ: ইহা উষ্ণাবীর্য, কফ ও বায়ুনাশক, গর্ভপাত কারক, বিরেচক, ক্রিমিনাশক। উলট চণ্ডাল উদ্ভিদের ব্যবহার্য অংশ হলো লতা ও মূল।
রোগ নিরাময়ে উলট চন্ডাল উদ্ভিদের ব্যবহার:
১. গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় প্রসবের পর অনেক সময় ফুল’ পড়তে দেরী হয়। এরূপ ক্ষেত্রে উলট চণ্ডালের মূল পিষ্ট করে প্রসুতির হাত ও পায়ের তলে ঘষলে অতি সত্বর ‘ফুল’ পড়ে থাকে।
২. উলট চণ্ডালের পাতার রস মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়।
৩. এর পাতার রস মাথার টাকের জন্য বেশি হিতকর বলে উল্লেখ আছে।
৪. উলট চণ্ডাল-এর কন্দমূল বৃহৎ মাত্রায় বিষাক্ত, তবে স্বল্পমাত্রায় অনেক উপকারী। পাকস্থলীর গণ্ডগোলে, ঋতুস্রাবের অনিয়মে উলট চণ্ডালের কন্দমূল ৫-১০ গ্রেন মাত্রায় সেবন করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: উলট চন্ডাল আলংকারিক ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন আরোহী বীরুৎ
৫. এই পাতার রস ১০-১২ গ্রেন মাত্রায় মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে গনোরিয়া রোগে বেশ উপকার হয়ে থাকে।
৬. মূল মণ্ড করে একটু গরম করতে হবে এবং এই গরম মণ্ড অঙ্গে প্রলেপ দিলে বাত ও স্নায়বিক ব্যথা নিরাময় হয়।
৭. মূলের গুঁড়া ৪ থেকে ১০ গ্রেন মাত্রায় শরীরের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া শূলবেদনা, কুষ্ঠ ও ক্রিমিনাশ করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
৮. উলট চণ্ডালের মূল গর্ভপাত ঘটায়।
৯. এছাড়া এর কন্দ মূল পিষ্ট করে গর্ভিনীর তলপেট ও যোনিতে প্রলেপ দিলে প্রসব বেদনা বৃদ্ধি পায়।
১০. এর কন্দাল মূল সঙ্কোচক, কাশরোগ সারাতে বেশ উপকারি।
উলট চণ্ডাল ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মাতে দেখা যায়। অনেক বাগানে এটি শোভাবর্ধনকারী ফুলের জন্যও লাগিয়ে থাকে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১১৮-১১৯।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Captain-tucker