উলট চন্ডাল বিরুৎ-এর দশটি ভেষজ গুণাগুণ

উলট চন্ডাল একটি বর্ষজীবী লতানো বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি অতি পরিচিত ঔষধি উদ্ভিদ। এর পাতা সরল, একান্তর, ওভেট-লেন্সিওলেট, বৃন্তহীন, পাতার শীর্ষ ক্রমশ আকর্ষীর মত লম্বা এবং পেঁচানো, শিরাবিন্যাস সমান্তরাল। পুষ্প একক, কাক্ষিক, লম্বাবৃন্তযুক্ত, পুষ্পপত্র ৬টি, লম্বা, সরু, কিনার ঢেউ খেলানো, উপরের দিকে মুখ করানো, প্রথমত সবুজাভ কিন্তু পরে লালচে হলুদ বর্ণের, পুংকেশর ৬টি, পুংদণ্ড বেশ লম্বা এবং সোনালী হলুদ, গর্ভপত্র তিনটি, সংযুক্ত, অধিকগর্ভ, ফল লম্বা ক্যাপসিউল। এর মূল দেখতে অনেকটা মিষ্টি আলুর মতো।

উলট চন্ডাল উদ্ভিদের সাধারণ গুণাগুণ: ইহা উষ্ণাবীর্য, কফ ও বায়ুনাশক, গর্ভপাত কারক, বিরেচক, ক্রিমিনাশক। উলট চণ্ডাল উদ্ভিদের ব্যবহার্য অংশ হলো লতা ও মূল।[১]

রোগ নিরাময়ে উলট চন্ডাল উদ্ভিদের ব্যবহার:

কন্দ— পাকস্থলীর প্রদাহকারক, বমনকারক, বিরেচক, স্বাদে কটু, বলকারক, পেটের দোষ নিবারক; ক্রিমি, কুষ্ঠ, ব্রণ, চর্মরোগ, উদরশূল, পুরাতন ক্ষত, অর্শ প্রভৃতিতে ব্যবহার্য। ফাঙ্গাস বা ছত্রাক সম্ভত চর্মরোগে (Parasitic skin diseases) এটির বাহ্যপ্রয়োগ করা হয়। স্নায়ুশূল বা বাতশূলে পুলটিশ হিসাবে ব্যবহার্য। গরু-বাছুরের ক্রিমি নষ্ট করার জন্য উক্ত কন্দের ব্যবহার আছে। পাতার রস মাথার চুলের উকুন বিতাড়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়। অনেক সময় এর কন্দ মিঠাবিষের সঙ্গে ভেজাল দেওয়া হয়ে থাকে। মূল বেটে প্রলেপ দিলে বাতে ও পক্ষাঘাতে ভাল ফল পাওয়া যায়, তবে এই সঙ্গে অল্প মাত্রায় মূল সেবনেরও উল্লেখ দেখা যায়। বিষাক্ত কীট দংশনে, সর্প দংশনে, বোলতা-ভীমরুলের হুলের জ্বালায় । কন্দের প্রলেপ দেবার বিধি দেখা যায়। মূলচুর্ণের মাত্রা ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম।

কন্দটি সংগ্রহ করে ভালভাবে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে শুকিয়ে নিতে হয়। তারপর সেগুলিকে লবণ মিশ্রিত ঘোলে ডুবিয়ে রাখতে হবে ৪/৫ দিন। প্রত্যহ ঘোল বদল করতে হবে। ৪/৫ দিন পরে ওগুলিকে ভালভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিলে ঔষধার্থে ব্যবহারের উপযোগী হয়।[২]

আরো পড়ুন:  ছোট ঝুনঝুনা দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

১. গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় প্রসবের পর অনেক সময় ফুল’ পড়তে দেরী হয়। এরূপ ক্ষেত্রে উলট চণ্ডালের মূল পিষ্ট করে প্রসুতির হাত ও পায়ের তলে ঘষলে অতি সত্বর ‘ফুল’ পড়ে থাকে।

২. উলট চণ্ডালের পাতার রস মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়।

৩. এর পাতার রস মাথার টাকের জন্য বেশি হিতকর বলে উল্লেখ আছে।

৪. উলট চণ্ডাল-এর কন্দমূল বৃহৎ মাত্রায় বিষাক্ত, তবে স্বল্পমাত্রায় অনেক উপকারী। পাকস্থলীর গণ্ডগোলে, ঋতুস্রাবের অনিয়মে উলট চণ্ডালের কন্দমূল ৫-১০ গ্রেন মাত্রায় সেবন করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন: উলট চন্ডাল আলংকারিক ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন আরোহী বীরুৎ

৫. এই পাতার রস ১০-১২ গ্রেন মাত্রায় মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে গনোরিয়া রোগে বেশ উপকার হয়ে থাকে।

৬. মূল মণ্ড করে একটু গরম করতে হবে এবং এই গরম মণ্ড অঙ্গে প্রলেপ দিলে বাত ও স্নায়বিক ব্যথা নিরাময় হয়।

৭. মূলের গুঁড়া ৪ থেকে ১০ গ্রেন মাত্রায় শরীরের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া শূলবেদনা, কুষ্ঠ ও ক্রিমিনাশ করতে এটি ব্যবহৃত হয়।

৮. উলট চণ্ডালের মূল গর্ভপাত ঘটায়।

৯. এছাড়া এর কন্দ মূল পিষ্ট করে গর্ভিনীর তলপেট ও যোনিতে প্রলেপ দিলে প্রসব বেদনা বৃদ্ধি পায়।

১০. এর কন্দাল মূল সঙ্কোচক, কাশরোগ সারাতে বেশ উপকারি।

উলট চণ্ডাল ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মাতে দেখা যায়। অনেক বাগানে এটি শোভাবর্ধনকারী ফুলের জন্যও লাগিয়ে থাকে।[১]

CHEMICAL COMPOSITION

Gloriosa superba linn.

Tuber contains: alkaloids (calchicine, gloriosine, N-formyldesacetyl calchicine, methyl calchicine, a new alkaloid, mp. 239-42°), essential oil, furfuraldehyde, benzoic acid, 2-hydroxy-6-methoxy benzoic acid, salicylic acid, choline, dextrose, palmitic acid, unsaturated fatty acids, hydrocarbon, a fatty alcohol, mp.77°, phytosterols, stigmasterols, glucoside, stigmasterol amygdalin and resinous matter. Young leaves contain: cholidonic acid.[২]

আরো পড়ুন:  করবী ভূমধ্যসাগরীয় ও এশীয় অঞ্চলের ঔষধি ও উদ্যানের আলংকারিক উদ্ভিদ

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১১৮-১১৯।

২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ১১০-১১৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Captain-tucker

Leave a Comment

error: Content is protected !!