টোকাপানা বা টাকাপানা ভেষজটি যদিও সকলের কাছে সুপরিচিত এবং একান্তই সহজলভ্য, তথাপি ভারতের চিকিৎসক সমাজ এটিকে নিয়ে খুব একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি। ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় এটিকে নিয়ে কিছু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তার ফলে যেগুলিতে উপকার পাওয়া গেছে সেগুলি এবং দেশ-গাঁয়ে ব্যবহৃত সদ্যফলপ্রদ কয়েকটি যোগ এখানে দেওয়া হচ্ছে।
টোকাপানা বা টাকাপানা-এর ভেষজ গুণাগুণ
১. পেটফাঁপায়: বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। পেটটাতে বায়ু জমেছে, পায়খানাটাও পরিষ্কার হয়নি, প্রস্রাবের মাত্রাও কম, কিছু খেতে চাইছে না, যখন-তখন কাঁদছে, এক্ষেত্রে একেবারে প্রথম অবস্থায় যদি টোকাপানার পাতা বেটে নাভির চারদিকে প্রথমে সরিষার তেল হালকা করে মাখিয়ে তার উপর প্রলেপ দেওয়া যায়, তাহলে কাজ হয় । সরিষার তেল না দিলে চুলকানোর সম্ভাবনা থাকে। আধ ঘণ্টা পরে ওটা ফেলে দিয়ে পেটটা ধুয়ে দিতে হবে। এতে প্রথমে বায়ুনিঃসরণ ও প্রস্রাব হয়ে যায়, পরে পায়খানা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পায়খানা না হলেও অন্যান্য উপসর্গ কমে গেলে সুস্থতা আসে।
২. মূত্রকৃচ্ছতায়: গরমের দিনে কারো কারো প্রস্রাব সরলে হতে চায় না, প্রস্রাব অল্প অল্প হয়, সেই সঙ্গে তলপেটটা ভারিবোধ, কোন কোন সময় দাহ, প্রস্রাবের সময় সামান্য যন্ত্রণা এবং মনে হয় যেন খুবই উত্তপ্ত প্রস্রাব নির্গত হচ্ছে। এর সঙ্গে পৌরুষগ্রন্থির বৃদ্ধির বা জীবাণু সংক্রমণের কোন সম্পর্ক নেই। এ অবস্থায় টোকাপানার কাঁচা পাতা ৫/৬ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে, ওটিকে দুবারে অর্থাৎ সকালে অর্ধেকটা ও বৈকালে অর্ধেকটা খেতে হবে। খুব বেশি জরুরী হলে একবার খাওয়ার ঘন্টা দুই পরে বাকিটা খাওয়া যেতে পারে। ২/৩ দিনে কষ্টের লাঘব হবে। গাছ বেটে নাভির চারদিকে প্রলেপ দিলেও সত্বর কাজ হয়।
৩. ফোড়ায়: প্রথম অবস্থায় পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোড়া বসে যায়, আর না। বসলে বিশেষ কষ্ট না দিয়ে পাকে, ফাটে এবং শুকোয়।
৪. দাদ, কণ্ড ও চুলকানিতে: সমগ্র গাছ অন্তর্ধূমে ভস্ম করতে হবে। শুকনো টকাপানা বা টাকাপানা একটা মাটির হাঁড়িতে পুরে তার মুখে সরা চাপা দিয়ে কাপড় জড়িয়ে ভাল ভাবে মুখ বন্ধ করে তার উপর মাটির প্রলেপ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নেবার পর একটা গর্তের মধ্যে হাঁড়িটি বসিয়ে সেটার চারদিকে ঘুটে সাজিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে পোড়ালে হাঁড়ির ভেতরের পানা কালো ছাইতে পরিণত হয়। সেই ছাই সরষের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মলমের মত তৈরী করে লাগালে উপকার হয়।
৫. পুরনো ক্ষতে: ঘা কিছুতেই সারতে চায় না, তার কারণ হিসেবে দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবহেলা এবং এটা দেশ-গাঁয়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ দেখা যায়। এক্ষেত্রে জলকুম্ভীর পাতা বেটে কয়েকদিন লাগালে ক্ষত শুকিয়ে যায়। ঘা বা ক্ষত অনেক কারণেই হতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
৬. কর্ণস্রাবে: টোকাপানা বা টাকাপানা পাতার রস সরষে তেলের সঙ্গে জ্বাল করে সেই তেল কান পরিষ্কার করার পর ফোঁটা হিসেবে কয়েক দিন নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার হয়।
৭. অর্শে: যন্ত্রণা লাঘবের জন্য টোকাপানার পাতা বাটা গরম করে প্রলেপ দিলে কষ্টের উপশম হয়ে থাকে।
সাবধানতা:— এটি Araceae ফ্যামিলীর গাছ, অথাৎ ওল, কচু প্রভৃতি যে পরিবারভুক্ত, এই জলজ পানাটি সেই পরিবারেরই (family) ভেষজ। সুতরাং চুলকানোটা তার স্বভাবধর্ম। এমনিতে পানা পুকুরে নামলে গা চুলকায়। তার উপর যাদের এলার্জির ধাত, তাদের তো আর কথাই নাই। এজন্য এটির ব্যবহার খুব সাবধানে এবং বিচার করে করাই উচিত।
CHEMICAL COMPOSITION
Pistia stratiotes Linn. Var. Pistia cuneata Engl. Leaves and stems contain:- moisture 92.9%; protein 1.4%; fat 0.3%; carbohydrates 2.6%; fibre 0.9%; ash 1.9%; calcium oxide 0.2%; phosphorus 0.06%; digestable protein 1.2% and vitamins (A, B and C). Incinerated plant contains:- a saltish ash rich in potassium chloride and potassium sulphate.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৪১-৪২।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prashant Awale
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।