আলু ও শাক-এর নানাবিধ উপকারিতা

আলু (Solanum tuberosum) এশিয়ার সব দেশে জন্মে। এটা সবজি হিসাবে অনেক জনপ্রিয়। এছাড়া আলু দিয়ে নানা প্রকার নাস্তা তৈরি করা হয়। শারীরিক নানা সমস্যার জন্য আলু ও এর শাক খাওয়া হয়। এই লেখাতে আলু ও শাকের সাতটি উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হলও।

আলু ও শাক-এর ভেষজ ব্যবহার

১. কোষ্ঠবদ্ধতায়: নানা কারণে এটির শিকার হতে হয় প্রায় প্রত্যেককেই কখনো না কখনো। এর পাল্লায় জীবনে পড়েননি, একথা হলফ করে কেউ বলতে পারবেন বলে মনে হয় না। যাই হোক, কোন প্রকার রোগে ভোগার পর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে থাকলে এবং সেইসঙ্গে দুর্বলতা দেখা দিলে আলু ও আলু শাক কিভাবে ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন সেটা জেনে রাখা ভালো—

(১) আন্দাজ ১০০ গ্রাম করে আলু ভাতে দিয়ে নতুবা জলে সিদ্ধ করে তারপর ছাল ছাড়িয়ে পরিমাণমত লবণ মিশিয়ে দিনে দু’বার ভাত বা রুটির সঙ্গে কিংবা জলখাবারের সঙ্গে খেতে হবে ।

(২) আলু গাছের নরম নরম ডগা ও পাতা আন্দাজ ৫০ গ্রাম নিয়ে অল্প ভাপিয়ে জলটা নিংড়ে সেটিকে ভেজে অথবা আলু, বেগুন সহযোগে তরকারী রান্না ক’রে একবেলা কিংবা দু’বেলা খেতে হবে।

(৩) মসুর অথবা ছোলার ডালে কচি আলু শাক আন্দাজ ২৫। ৩০ গ্রাম দিয়ে রান্না করে পরিমাণমত ডাল খেতে হবে।

উপরিউক্ত পদ্ধতির যেকোন একটি একবেলা, প্রয়োজনে দু’বেলা কিছুদিন খাওয়া উচিত। উপকার বুঝতে পারলে তারপর নিয়মিত খাবারও প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন— যদি আলু খেলে অম্ল হতে থাকে অথবা অঙ্কুরিত আলু যাঁরা অম্লপিত্তে ভুগছেন, কিংবা যাঁদের মধুমেহ (ডায়াবিটিস) রয়েছে, তাঁরা কিন্তু আলু সিদ্ধ করে খাবেন না; সেক্ষেত্রে আলু গাছের ভাজা বা ডালে আলু গাছ দিয়ে খেতে পারেন।

২. সর্দি-কাসিতে: হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে পাতলা সর্দি, সেই সঙ্গে অল্প অল্প কাসি, এটা আলুর সীজনেই হয় অধিক। এ সময় ২০। ২৫ গ্রাম কাঁচা নরম আলু শাক ভালভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে কাপ দুই জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ আধ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, সেইসঙ্গে অল্প একটু লবণ মিশিয়ে গরম গরম অবস্থায় চায়ের মতো দু’বেলা পান করলে দিন দুয়েকের মধ্যে ওটা প্রায় চলে যায়। অবশ্য প্রয়োজনে এই যূষ তিনবারও খেতে পারেন ।

আরো পড়ুন:  কান্‌কানটী বা ডেংগা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ

৩. স্নায়ুদৌর্বল্যে: প্রায় ক্ষেত্রে অত্যধিক মসলা দিয়ে আমরা আলুর তরকারি খেয়ে থাকি, তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালভাবে ছাল ছাড়ানোর পর আলুর তরকারি প্রস্তুত হয়, যার ফলে এটির উপকারিতা অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই স্নায়বিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে লবণ সহযোগে আলু সিদ্ধ করার পর ছাল ছাড়িয়ে দু’বেলা সেটিই ব্যবহার করবেন। আলু নেবেন প্রত্যেকবারে ১০০ গ্রাম আন্দাজ। এছাড়া ১০০ গ্রাম সিদ্ধ আলু ও গাজরের টুকরো সামান্য, সেইসঙ্গে কিছুটা পেঁয়াজের কুচি দিয়ে স্টু তৈরী করে প্রত্যহ একবার খালি মুখে কিংবা জলযোগের সঙ্গে কিছুদিন খেতে হবে, তা ২। ৩ মাস তো বটেই। যেকোন একটি উপায়ে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

৪. স্তন্যহ্রাসে: আলু-গাজর-পেঁয়াজের স্টু করে দু’বেলা প্রসবের পর থেকে ৫ । ৬ মাস খাবেন। এর দ্বারা দুর্বলতা কমবে, দাস্ত পরিষ্কার হবে, সেইসঙ্গে বুকের দুধে টানও পড়বে না। একটানা স্টু খেতে ভাল না লাগলে হালকা মসলায় আলুর দম তৈরী করে কিংবা আলু সিদ্ধ ক’রে লবণ দিয়ে মেখে মাঝে মাঝে খেতে পারেন। আলুর পরিমাণ ১০০ গ্রামের মত হওয়া উচিত। যদি একটু-আধটু অম্ল দেখা দেয়, তাহলে আলুর মাত্রা কম করবেন এবং স্টু ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে খাবেন না। তা সত্ত্বেও অম্ল হতে থাকলে আলুর ব্যবহার একটানা না করে মাঝে মাঝে করবেন, কিংবা একেবারে বন্ধ করে দিতে পারেন। সেটা নির্ভর করবে নিজেরই উপর।

৫. অরুচি ও অগ্নিমান্দ্যে: এটা শীতকালে মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। তখন আলু গাছের কচি কচি পাতা ও নরম ডগা ভেজে প্রথম ভাত বা রুটির সঙ্গে দুপুরের দিকে একবার করে সপ্তাহখানিক খান। আলু শাকের পরিমাণ এবং সেটিকে ভাজার পদ্ধতি পূর্বে বলা হয়েছে।

৬. অগ্নিদগ্ধ ব্রণে: কোন জায়গা আগুনে পুড়ে গেলে তা যদি সামান্যই হয়, তাহলে আলু থেঁতো করে ভালভাবে বেটে সেইস্থানে প্রলেপ দিলে উপকার হয়।

আরো পড়ুন:  দেশি পেটারি গুল্ম-এর বারোটি ভেষজ গুণাগুণ

৭. শুক্রবল অটুট রাখতে হলে: মাঝে মাঝে পরিমাণমত আলু শাকের ভাজা কিংবা তরকারি করে খাবেন, তবে গুরুপাক দ্রব্য অধিক যেমন খাবেন না, তেমনি যৌনজীবন যাপনে অত্যধিক অনিয়মিততা করা চলবে না। বয়সটা আবার যৌবন গড়িয়ে গেলে ভেবে-চিন্তে সব কাজ করাই শ্রেয় ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৩১-১৩২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Thingnam Girija

Leave a Comment

error: Content is protected !!