ভূমিকা: আখ বা ইক্ষু (বৈজ্ঞানিক নাম: Saccharun officinarum, ইংরেজি নাম: Sugarcane) পোয়াসি পরিবারের Saccharum গণের বিরুৎ। আঁখের রস মিষ্টি ও সেই রস থেকে গুড় ও চিনি তৈরি করা হয়। স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় দেশে আঁখ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আখ গাছটির কাণ্ড থেকে চিনি ও গুড় তৈরি করা হয়, কান্ডের রস ক্লান্তি অবসান করে এছাড়া কুষ্ঠরোগ, অন্ত্রের সমস্যা, রক্তস্বল্পতা ও আমাশয়েও ইক্ষুরস উপকারী।[১]
আখ যে ভাবেই খাওয়া যাক দাঁত দিয়ে ছিলে চুষে বা রস বের করে খেলে উপকার দেয়। কিন্তু সবচেয়ে ভাল ফল পেতে হলে দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে খাওয়াই ভাল, এতে কোনো রকম ভাবে ময়লা, জীবাণু ইত্যাদি মিশতে পারে না, এবং রসও খাওয়া হয় টাটকা টাটকা। বাসী, মাছি-বসা অস্বাস্থ্যকর রসের রোগ জীবাণু পেটের মধ্যে যাওয়ার ভয় থাকে না।
আখের রস রক্তপিত্ত দূর করে, বলপ্রদ, মৈথুনশক্তি বাড়িয়ে দেয়, রস তথা পাকে মধুর, স্নিগ্ধ, ভারী, মূত্রবর্ধক, ঠাণ্ডা বা শীতবীর্য। কিন্তু এই সব গুণ থাকা সত্ত্বেও কফকারক।
জ্বাল দেওয়া আখের রস ভারী, স্নিগ্ধ, অত্যন্ত তীক্ষ্ণ, কফ, বায়ু, গুল্ম দূর করে, গ্যাস শান্ত করে কিন্তু খানিকটা পিত্তকারক।
সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় আখের রসের প্রয়োগ
১. দাঁত দিয়ে চুষে খেলে আখের রস রক্তবিকার (রক্তের দোষ) ও রক্তপিত্ত নাশ করে, চিনি বা শর্করার মতো শক্তি বা এনার্জি দেয়, জ্বালা পোড়া আরাম দেয়, কিন্তু এটির দোষের মধ্যে কফকারক। যন্ত্রে পেষা আখের রসে ময়লা ও জীবাণু মিশে যায় বলে সব দিক থেকেই হানিকারক।
২. গরমকালে আখের রস অমৃতের সমান।
৩. গরমকালে টাটকা আখের রস বের করে তাতে নুন ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে ঠাণ্ডা পানীয় হিসেয়ে পান করলে শীতল ও রুচিকর লাগে। আখের রস একটি উত্তম ও ঠাণ্ডা পানীয়। আহারের দিক থেকে সাত্ত্বিক ও পুষ্টিকর।
৪. আখ জন্ডিসের শ্রেষ্ঠ ওষুধ। জন্ডিস হলে মিষ্টি আখের রস আখ থেকে চুধে খাওয়া উচিত। এতে প্রস্রাব পরিষ্কার হয় এবং জন্ডিস তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
৫. যে মায়ের দুধ কম হয় তাঁরও আখের রস চুষে খেলে স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি পাবে।
৬. আখের রস খেলে ক্লান্তি ও শ্রান্তি দূর হয়ে যায়। আখের রস খেলে বল, বুদ্ধি ও বীর্য বৃদ্ধি পায়।
৭. একটু পরিশ্রম করেই যিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাঁর পক্ষে আখের রস যুবই ভাল।
৮. পা ও হাতের তালুর, চোখের, পুরো শরীরের জ্বালা দূর করবার ব্যাপারে আখের রস খুব সুফল দেয়।
৯. খাওয়ার আগে আখ খেলে পিত্ত নাশ হয় কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার পরে আখ খেলে মন্দাক্ষি ও বায়ুর প্রকোপ হয়।
১০. আখের রস খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয় এবং রক্তপিত্ত রোগের উপশম হয়।
১১. আখের রস, আমলকীর রস, ডালিমের রস ও মধু এক সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে খেলেও জন্ডিস সেরে যায়। রক্ত ও শক্তি বৃদ্ধি পায় ।
১২. আখ রাতের বেলা খোলা ছাদের ওপর রেখে দিয়ে সকালবেলা সেই আখের রস চুষে খেলে বলা হয় জন্ডিস খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
ভালভাবে না পাকা, কাঁচা ও অপুষ্ট আখের রস শরীরের পক্ষে অতটা ভাল না হলেও মাঝামাঝিভাবে পুষ্ট আখের রস বায়ুনাশ করে, মধুর, কিছুটা তীক্ষ্ম ও পিত্তনাশক। পরিপূর্ণভাবে পুষ্ট আখের রস রক্তপিত্ত দূর করে ক্ষত সারিয়ে দেয়, বল ও বীর্য বৃদ্ধি করে। অত্যন্ত পুরনো আখ বল বৃদ্ধি করে বীর্যবর্ধক, রক্তপিত্ত ও ক্ষয়রোগ নাশ করে।
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৮-৩১৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,৪৪-৪৫।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।