জোয়ান বা যোয়ান ভারত বাংলাদেশের সর্বত্র কম-বেশি এই ক্ষুপজাতীয় গাছটির চাষ হয়ে থাকে। গাছটি সাধারণতঃ ২ বা ৩ ফুট পর্যন্ত উচুতে ওঠে। গাছগুলি দেখতে প্রায় ধনে গাছের মতো, সাদা রঙের ফলগুলি ছত্রাকারে হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে যোয়ানের দানা মাঠে ছড়ানো হয়, পৌষ-মাঘ নাগাদ ফল ও তৎপরে ফল হয়, বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে এর বেশি বিশেষ পরিচিতির কোন প্রয়োজন নাই।
জোয়ান বা যোয়ানের ইতিহাস:
পাশ্চাত্যমতে এটি সম্ভবতঃ ১৫৪৯ খৃষ্টাব্দ নাগাত মিশর থেকে ইউরোপে এসেছিল এবং ১৬৯৩ খৃষ্টাব্দে (সম্ভবতঃ) লণ্ডনে প্রথম ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়েছিল। এ তথ্যটি পরিবেশিত হয়েছে Economic Products of India (watts) গ্রন্থখানিতে। এই যোয়ান আয়ুর্বেদে বহুকাল ধরে ব্যবহত হয়ে আসছে, সেই বেদের যুগ থেকে।
নামের প্রকারভেদ:
এটিকে বাংলায় যোয়ান, জোয়ান; হিন্দীতে অজোয়ান এবং সংস্কৃতে যমানী বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Trachyspermum ammi (L.)Sp., ফ্যামিলী Umbelli.. ferae, পূর্বে এটির নাম ছিল Carum Copticum (L.) Cl..[১]
জোয়ান বা যোয়ানের গুণাগুণ:
জোয়ান বা যোয়ান (Trachyspermum ammi) খাবারকে সহজে হজম করায়। ঘরোয়া ওষুধের মধ্যে যোয়ানের ব্যবহার আমাদের দেশে প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। যোয়ান খাবার হজম করায়, রুচি উৎপন্ন করে, তীক্ষ্ণ, গরম, হালকা খিদে বাড়িয়ে দেয়, তেতো আর পিত্ত উৎপন্ন করে। শুক্র শূল, বায়ু, কফ, পেটের গ্যাস, গুল্ম, লিভারের অসুখ ও কৃমির প্রকোপ কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বাত নাশক, উদ্বিগ্নতা দূর করে, শূলের ব্যথা কমায়, কফ, জ্বর, কৃমি নাশ করে, দুর্গন্ধ দূর করে। বদহজম, পেটের অসুখ, আমাশায় আর সর্দি সারিয়ে দেয়। কলেরা রোগে যোয়ানের প্রভাব কম হলেও এই অসুখেও উপকারক।
প্রাচীন শাস্ত্র মতে:
জোয়ান রসবহ স্রোতে প্রধানতঃ উপকার সাধন করে, তথাপি রসবহ স্রোত বা অন্যান্য স্রোতে যে বায়-পিত্ত-কফ ধাতুগত হয়ে আছে অর্থাৎ ক্রিয়ার সঞ্চালন, আগ্নেয় শক্তি এবং পুষ্টিকরত্ব। পিত্ত হচ্ছে আগ্নেয় শক্তি। যোয়ান কাঁচা অবস্থায় কিন্তু পিত্তবর্ধক, এটা চরক এবং সুশ্রুত উভয়ের মত।
চরক যোয়ানকে শূল প্রশমন ব্যথা ও দীপনীয় বলেছেন অথাৎ শূল সারায় ও খিদে বাড়ায়। সুশ্রুত বলেছেন বাত-কফ নাশক, অরুচিনাশক, গুল্মশুলঘ্ন, দীপন আর আম পাচন বলেছেন। পচন নিবারক সব ওষুধের মধ্যে যোয়ানকেই শ্রেষ্ঠ বলা যায়। প্রসূতা নারীকে অর্থাৎ যিনি সদ্য মা হয়েছেন যোয়ান খাওয়ালে হজম ভাল হয়, যদি দ্বর আসে তা বন্ধ হয়, স্তন্যদুগ্ধ বেড়ে যায়। প্রসবের পর প্রসূতির শরীরে যোয়ানের চুর্ণ ঘধবার রীতি আছে।
যোয়ান গর্ভাশয়ে উত্তেজক প্রভাব সৃষ্টি করে যার ফলে মাসিক ঠিক মতো হয়। যদি গর্ভাশয়ে জীবাণু প্রবেশ করে থাকে সেই জীবাণু নাশ করে। এই সব জীবাণু নষ্ট করবার জন্যে যোনিমার্গে জোয়ানের ধোঁয়া লাগানো হয়। মাটির গামলায় কাঠ কমলার (আঁচ তৈরির করে যোয়ান ছড়িয়ে দেওয়া হয়) একটা ফুটো যুক্ত বেতের চেয়ারে বা মোড়ায় প্রসূতিকে বস্ত্র উচু করে বসানো হয়। মোড়া বা চেয়ারের নীচে রাখা হয় ধোঁয়া ভরা মালসা। এইভাবে যোনিপথে যোয়ানের ধোঁয়া প্রবেশ করে।
হাকিমি বা ইউনানি মতে, যদি কফ বেশি মাত্রায় বেরোয় কফ বন্ধ করবার জন্যে যোয়ান দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে যোয়ান পিষে নিয়ে পুলটিস তৈরি করে বাধার পরামর্শ দেন তাঁরা। জীবাণু নাশক কাজল তৈরি করবার জন্যে কাজলে যোয়ানের আরকের বাষ্প লাগিয়ে দেন। বৈজ্ঞানিক মতে যোয়ান গরম, পেটের ব্যথা সারায়।
পেটের বায়ু গোলক, অজীর্ণ, আমাশা, পায়খানা প্রভৃতি বন্ধ করবার পক্ষে উপযুক্ত। জনৈক চিকিৎসকের মতে যোয়ানে গোলমরিচ আর রাই-এর উষ্ণতা, চিরতার তিক্ততা আর হিং-এর অস্থিরতা-হেঁচকি ইত্যাদি নাশ করবার ক্ষমতা আছে। অর্থাৎ একটি ঘরোয়া ওষুধে আছে তিনটি ওষুধের গুণ-ইংরিজিতে যাকে বলা হয় থ্রি-ইন-ওয়ান, যোয়ান হলো সেই রকমই।[২]
খাওয়ার পদ্ধতি:
জোয়ান ব্যবহার করার পূর্বে একটু ভেজে নিতে হয়। এ ভাজা যেন বেশী ভাজা না হয়, অল্প একটু নেড়ে, যাকে বলে চানকে নিতে হয়, নইলে পিত্তবধক হওয়ার জন্য আমাশয়ে গিয়ে উৎক্লেশ, যাকে বলে বমন ভাব সৃষ্টি করে। আমাশয় হলে ক্লেদক শ্লেমার স্থান। কিন্তু ভাজা যোয়ানে সেই সমস্যা হয় না।
জোয়ান বা যোয়ান-এর ভেষজ ব্যবহার:
১. কাশি সারাতে: নিয়মিতভাবে কিন্তু অল্প একটু করে জোয়ান বা যোয়ান খেলে সর্দি কাশির কষ্ট দূর হয়ে যাবে। পুরাতন কাসি হলে এবং এর সঙ্গে চটচটে শ্লেষ্মা মাঝে মাঝে অল্প অল্প ওঠে, সেক্ষেত্রে ভাজা যোয়ান গরম জলে বেটে অল্প অল্প ক’রে যদি বার বার খাওয়ানো যায়, অন্ততঃ এক বা দেড় ঘণ্টা অন্তর তাহ’লে ওই চটচটে শ্লেমা কমে যাবে এবং কাসিটাও কমে যাবে। তবে এটা দেখা গেছে এই চটচটে শ্লেমা এলার্জিজনিত কাসি হলে তবেই এটা হ’য়ে থাকে।
২. জ্বর সারায়: বিভিন্ন প্রকার জ্বর সারাতে যোয়ান কার্যকরি। এটা খেলে ম্যালেরিয়া জ্বরের শীতের প্রকোপ কম হয়, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। যোয়ান, গুডুচ (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়) সমপরিমাণে নিয়ে এবং গোলমরিচ অল্প একটু জিরা একরাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পিশে আর ছেকে নিয়ে সেই জল পান করলে জ্বরে উপকার পাওয়া যায়।
৩. সর্দি দূর করতে: যোয়ান পিষে পেঁয়াজের রস মিশে শরীরে মালিশ করলে ঘাম বেরিয়ে সর্দির কষ্ট দূর হয় এবং শরীর মনে ফুর্তি আসে। জোয়ান বা যোয়ান পিষে পুটলি তৈরি করে নাকে কলে সর্দি কমে যায়।
৪. শ্বাস কষ্ট দূর করতে: যোয়ান গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে শ্বাসের কষ্ট দূর হয়। জোয়ান বা যোয়ানের আরক খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
৫. পেটের অসুখে: জোয়ান বা যোয়ান খেয়ে গরম জল খেলে পেটের শূল ব্যথা কমে যায়। মুখে থুতুর আধিক্য, অজীর্ণ এবং বদ্ধ বায়ুর প্রকোপ উপশম হয়। পেট ফাঁপা অনেক কারণেই হয়, পাকাশয়ে অগ্নিবল কমে গেলে হয়, আমাশয়ে কুটিল বায়ু প্রবেশ করে আমযুক্ত হলেও হয়। এক্ষেত্রে যোয়ান বাটা জল খেলে পেট ফাঁপাটা কমে যায়। অজীর্ণজনিত পেটের ব্যথার কারন হচ্ছে রসটা পক্কাশয়ে এসে সেটা পরিপাক হচ্ছে না, এমন অবস্থায় লোভ থেকেই হোক বা অনিচ্ছা সত্ত্বেই হোক, পুনরায় কোনকিছু খেয়ে ফেললে তখন অগ্নিবল খাবার হজম হয় না। তখন থেকে থেকে কুনকুনে ব্যথা হয়। এরমানে আমগত বায়ু তৈরি হয়েছে এবং স্বাভাবিক বায়ুর সঞ্চরণশালিতা নষ্ট হয়ে গেছে; এক্ষেত্রে যোয়ান বাটা জলে মিশিয়ে তাকে ছেকে অথবা না ছে’কেও খেলে বায়ুটা কমে যাবে, আর এটা কমে গেলে ব্যথাটাও কমে যাবে। যোয়ান, সৈন্ধব নুন আর হিং একসঙ্গে পিষে খেলে গুল্ম অর্থাৎ পেটের ভেতরে গোলার মতো হওয়া কমে।
৬. অম্ল দূর করতে: তাওয়ায় জোয়ান বা যোয়ান সেঁকে নিয়ে সম পরিমাণ সৈন্ধব নুন মিশিয়ে পিষে ফেলতে হবে। গরম জলের সঙ্গে এই চুর্ণ খানিকটা খেলে পেটের বায়ু দূর হয়।
৭. প্রসূতির জন্য উপকার: যোয়ান খাওয়ালে প্রসূতির খিদে বেড়ে যায়, খাবার হজ্জম হয়, অধোবায়ু মুক্ত হয়, কোমরের ব্যথা কমে আর গর্ভাশয়ের শুদ্ধি হয়।
৮. প্রসাব বা মূত্রসংক্রান্ত সমস্যায়: জোয়ান বা যোয়ান আর তিল একসঙ্গে পিষে খেলে বহুমূত্র রোগের বা ডায়বেটিসের প্রকোপ কমে। মূত্র রোধ এক কারণে হয় না, মূত্রের গ্রন্থি (Prostate gland) স্ফীত হ’লেও মূত্ররোধ হয়, আবার অর্শের বলি শক্ত হলেও মূত্র রোধ হয়, অর্থাৎ গুহ্যস্থানের শোথে অপানবায়ু, যখন আবদ্ধ হয় প্রায় ক্ষেত্রেই এই মুত্ররোধের হেতু থাকে। অনেকক্ষণ চেপে বসে থাকলেও মুত্ররোধ হয়, কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলে এমন সমস্যা হয় না, তার মানে হচ্ছে—আমাদের গুহ্যস্থানে যে অপানবায়ু চলে সেটা রুদ্ধ হয়ে গেছে। সেই ক্ষেত্রে জোয়ান বা যোয়ান বাটা খেলে মূত্রের বেগ আসবে।
৯. অর্শর ব্যথা কমাতে: জোয়ান বা যোয়ান আর গুড় সমপরিমাণে নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে পিষে সকাল ও সন্ধেবেলা অল্প অল্প করে খেলে অর্শর ব্যথা কমে কোমরের ব্যথা সেরে যায়। এছাড়া যে অর্শে দীর্ঘদিন থেকে রক্ত পড়ছে, সে রক্ত অন্তর্বলি থেকেই আসুক আর বহির্বলি থেকেই আসুক; এক্ষেত্রে ভাজা যোয়ান আধ গ্রাম ও ভাজা কালোজিরা আধ গ্রাম মাত্রায় একসঙ্গে মিশিয়ে দ’বার জলসহ খেতে হবে এর দ্বারা রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। অধিকন্তু ঐ অর্শের বলিটা চুপসে যাবে।
১০. বিভিন্ন কারনে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া: যোয়ান জল দিয়ে পিষে শরীরে মালিশ করলে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া শরীর গরম হয়। যোয়ানের পুটুলি তৈরি করে তাওয়ায় গরম করে হাতে পায়ে সেঁক দিলে কলেরা বা আন্ত্রিক রোগ, টাইফয়েড বা হাঁপানির কষ্টের জন্যে যদি হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়ে থাকে ক্রমশ গরম হয়ে ওঠে।
১১. বাত অসুখে: সন্ধিবাতের (গেটে বাতের) গাঁটে যোয়ান পিষে নিয়ে পুলটিস লাগালে বা যোয়ানের তেল মালিশ করলে আড়ষ্টতা কমবে। জোয়ান বা যোয়ান গুড় মিশিয়ে খেলে আমবাত সারে যায়।
১২. শীতপিত্ত রোগে: বায়ু ও কফের বিকারে পিত্তের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুরো শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেবে এবং সেখানে বোলতা ভীমরুলে হুল ফুটালে অথবা কাঠপিঁপড়ে কামড়ালে যেমন ফুলে ওঠে, সেই রকম ফুলে যায়। অনেক সময় তার সঙ্গে অল্প জ্বরও হয়, অবশ্য সব ক্ষেত্রে যে জ্বর হবে এমনটা নয়। এই চুলকানিটার সাধারনত দেখা যায় যে, পায়ের তলা না হয়। হাত-পায়ের আঙ্গুলের ডগায় বেশী হয়; এটা সারাতে আখের পুরোনো গুড় অ অল্প পরিমানে যোয়ান বাটা মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার খেতে হবে। একদিনেই চুল্কানি অ ফোলা কমে যাবে। তারপর ২/৩ দিন একবার করে খেতে হয়। তবে দাস্ত এক্ষেত্রে ঠিক রাখা বিশেষ দরকার আর চাপা অম্বল (অম্ল) যেন না হয়।
১৩. কোষ্ঠগত ক্রিমি রোগে: যাঁদের মাঝে মাঝে উঁকি অর্থাৎ গ্লা বেয়ে ওঠে মুখ দিয়ে নুন (লবণ) জল ওঠা; বা বমি ভাব হওয়া। বিশেষ করে শিশু বা বালকদের এই ঝঞ্চাট এসে যায়। এক্ষেত্রে বাসি জলের সাথে যোয়ান বাটা গুলে খেলে ২/৪ দিন থেকে মলদ্বার চুলকানো বন্ধ হবে ও বমি বা উকিটাও ঠিক হয়ে যাবে।
১৪. দমকা দাস্তে: দেখা যায় দুই/এক বার দাস্ত হওয়ার পরে বমি আরম্ভ হয়েছে, এমন অবস্থা যেন কলেরার উপক্রম; এক্ষেত্রে ২ গ্রাম জোয়ান বা যোয়ান বাটা বরফ জলে গুলে, সেটাকে ছেকে ঐ জলটা সারাদিনে ৩/৪ বার খেতে হবে তাহলে দাস্ত ও বমি দুটিই সেরে যাবে।
১৫. বমি হলে: যে বমি বিষজন্য হয় অর্থাৎ আরশোলা খাওয়া, মাছি খাওয়া, ইদুরের নাদি (বিষ্ঠা) কোন খাবারের মাধ্যমে মখে গেলে বমি হওয়া অথবা কোন অতৃপ্তির কারণে বমি হতে থাকলে অল্প ভাজা যোয়ান বেটে জলে গুলে খাওয়ালে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
১৬. ঘুমের বিঘ্নতা কাটিয়ে তুলতে: হাতের কাছে কোন কিছু নেই অথচ ঘুম হয় না বা হ’তে চায় না, এটা রসবহ স্রোত সংক্রান্ত সমস্যা। যদি মন ও শরীরে কোন প্রকারে তাতে অগ্নিবল কম থাকে, বায়ু অত্যন্ত কুপিত হ’য়ে ব্যাকুল হয় অথবা বায়ু যদি অন্য কারণে ব্যাকুল হয় তার জন্যও অগ্নিবল কমে যায়, তখনও ঘুম আসে না। সে সময় আহারের পর যোয়ান বাটার জল কয়েকদিন খাওয়ার অভ্যাস করতে হয়, শরীরে বায়র ব্যাকুলতা কমে যাবে এবং ঘুমও আসবে।
১৭. রজঃ কৃচ্ছতায়: মাসিক হ’লেও অল্প হয় এবং ঝিরঝির ক’রে হয়, থেমে গিয়ে আবার হয়তো কয়েকদিন বাদে দেখা গেল, এইরকম অবস্থায় যোয়ান বাটা খেলে, ভাল হয়ে যাবে।
জোয়ান বা যোয়ানের বাহ্য ব্যবহার:
১৮. যে কোন পচা ঘায়ে: যোয়ান বাটার প্রলেপ কিংবা যোয়ান চূর্ণ ঐ ঘায়ে ছড়িয়ে দিলেই চলবে। এটাতে ঘায়ের পচনটা প্রথমেই বন্ধ হবে। দ্বিতীয়তঃ ঐ ঘায়ে কোন কীটের জন্ম হবে না।
১৯. দাঁতের সমস্যায়: আর একটি কথা, এই যোয়ান সম্পর্কে হারীত সংহিতায় বলা হয়েছে— দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়তে থাকলে যোয়ান বেটে দাঁতের গোড়ায় খানিকক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে, তারপর ১০/১৫ মিনিট বাদ যোয়ানের ক্বাথ করে এ ক্বাথ দিয়ে গরগরা (Sargle) করতে হবে। আর তাতেও যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তাহলে যোয়ান বাট ক্ষাণিকক্ষণের জন্য লাগিয়ে রাখতে হবে।
২০. গলশণ্ডিকা রোগে: একে পাশ্চাত্য চিকিৎসকগণ লেরিনজাইটিস ব’লে থাকেন। আর সাধারণে বলে থাকেন আলজিভ বেড়েছে। আয়ুর্বেদ মতে, এটি শ্লেষ্মা ও রক্তবিকার জন্যে জন্ম নেয়, ওটা তালুমূলেই হয়। এটা কিন্তু উপেক্ষা করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে যোয়ান বেটে গুলি পাকিয়ে মুখে রাখতে বলেন, তাতে আলজিভ বৃদ্ধিজনিত যে খুসখুসনি কাসি হয়, অর্থাৎ আলজিভটা বেড়ে গেলে ওখানকার বায়ুটা স্বাভাবিক থাকে না বলেই কাসি হতে থাকে (অবশ্য এ নাসির কারণ বায়ুটা সরল না থাকা জনিত) উপরিউক্ত মস্তিকযোগটি করলে গলরোগটির উপশম হয়।
সবশেষে বলে রাখা দরকার যোয়ানের আরক খেলে উপকার পাওয়া যায়। যোয়ানের সহজ ওষুধ হিসেবে তা প্রায় ঘরে ঘরেই থাকে। বদহজম, পেটের অসুখ এবং পেট ফাঁপায় মাত্রা অনুসারে খেলে উপকার পাওয়া যায়। যোয়ান পিষে, শুকনা খোলায় ভেজে বা জলে ভিজিয়ে সব রকমভাবে খেলেই উপকার পাওয়া যায় কিন্তু যোয়ানের ক্বাথ না তৈরি করাই ভাল। কারণ যোয়ান জলে মিশিয়ে আঁচে বসিয়ে ফুটিয়ে নিলে যোয়নের অন্তর্লীন উর্ধ্বগমনশীল তেল উবে বা উড়ে যায় আর যোয়ানের গুণ কমে যায়। সব সময় টাটকা যোয়ান ব্যবহার করাই ভাল কারণ যোয়ান পুরনো হলেও যোয়ানের তেল উড়ে যায়। আর একথা তো জানা আছে যে যোয়ানের আসল গুণ রয়েছে যোয়ানের তেলের মধ্যেই।[১][২]
CHEMICAL COMPOSITION
Trachyspermum ammi (L.) Sprague
1. Essential oil : — (a) d-limonene, (b) CC-terpinene, (c) dipentene, (d) d-linalool, (e) terpeneol, (f) dl-piperitone (g) thymoquinol, (h) thymol, (i) ketonic acid.
Seseli divusum (Rorb. er Sm.) & Wagh.
Neutral unsaturated lactone 1.3%; furocoumarin 0.6%; Essential oil 2.5% (B-cyclolavendulic, d-limonene, seselin, bergaptene, isovaleric acid and selinene); fatty acids 20% (palmitic, petroselinic, oleic, linoleic, and resin acids); unsaponin matter 18.5%; and sesquiterpenes and its alcohol.
Hyoscyamus niger Linn.
Analysis of roots, leaves, flowering tops and seeds : — Alkaloids (henbane, hyoscyamine, hyoscine, tropine, scopolin, atropine, scopolamine and hyoscypikrin). Analysis of seeds : — Fatty acids 2.6% (myristic, palmitic, stearic, oleic and linoleic); unsaponifiable matter (Phytosterol); gum 6.2% and resins. In leaves and flowering tops :- A bitter glycoside (hyoscypicrin, choline, mucilage and albumin).[১]
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১-১১।
২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, ২২০-২২৩।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
TNX
খুব ভালো লাগল আপা
আপনার সব লেখা।