ঘেট কচু খাওয়ার উপকারিতা

ঘেট কচু গাছ দেখতে অনেকটা কচু গাছেরই মতো। মূল প্রায় গোলাকার, কচুর আসল মূলটির মত। পাতা তিন অংশে বিভক্ত। পাতার ডাঁটা সাধারণতঃ ১০/১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। গাছ মরে গেলে মূলটা মাটির ভেতর থেকে যায় এবং বৃষ্টি পড়লে তা থেকেই নতুন করে গাছ বেরোয়। ফুল কচু ফুলের মতো, ফুল ফুটলে তা থেকে বিষ্ঠার ন্যায় গন্ধ বেরোয়। বর্ষাকালে ফুল ও তৎপরে ফল হয়। পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ছোটনাগপুর, আসাম, মাদ্রাজ প্রভৃতি স্থানের যত্রতত্র জলাভূমিতে অযত্নসম্ভূত হয়েই জন্মে। তবে এটির মূল, ডাঁটা ও পাতা খাওয়ার জন্য দক্ষিণ ভারতের কোথাও কোথাও চাষ করা হয়। ভারতের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর আফ্রিকা, সিংহল প্রভৃতি স্থানে এই গাছটিকে পাওয়া যায়। ঘেঁটকচুর কচি পাতা গরম কড়ায় ভেজে তাতে কালোজীরা, লঙ্কা ও লবণ। পরিমাণমত মিশিয়ে ভালভাবে বেটে লোকে ভাতের সঙ্গে খায়। এটি বাংলাদেশের লোকেদের কাছে প্রিয় খাদ্য। ডাঁটা ঘন্ট বা ঘ্যাঁট করে খাওয়া যায়। কন্দ (মূল) ও পাতা। মাছের সঙ্গে তরকারি রান্না করে লোকে খায়।

ঘেট কচুকে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে ঘেঁটকোলও বলা হয়ে থাকে। তামিল প্রদেশে করুণাইকিঝাংগু, তেলেগুতে দূরাদাকাণ্ডাগাড়া ও মালয়ে চেনা নামে এটি পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Typhonium trilobatum (Linn.)Schott. পূর্বে এটির নাম ছিল Arum trilobatum Linn.,ফ্যামিলী Araceae, ভারতে এই গণের ১৬টি প্রজাতি পাওয়া যায়। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ: কন্দ, ডাঁটা ও পাতা।

ঘেট কচু প্রয়োগ:

১. অর্শে: রক্তার্শ বা শুষ্কার্শ যাই হোক না কেন, সব অর্শেই কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে। এক্ষেত্রে ঘেঁটকচুর কন্দের তরকারি কয়েকদিন ভাতের সঙ্গে খেলে পায়খানা পরিষ্কার হয়ে গিয়ে কষ্টের লাঘব হয়। এটির সেবনে রক্তস্রাবও কমে যায়। বেশ কিছুদিন খেতে পারলে অর্শের বলি ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে।

২. উদরশূলে: পেটব্যথা, অবশ্য তা অম্বলের জন্য নয়, এর কারণ হিসেবে দেখা যায় যে, দাস্ত পরিষ্কার হচ্ছে না, পেটে মাঝে মাঝে বায়ু জমে, ক্ষিদেটা ঠিক ঠিক ভাল হয়; তখন এই ঘেঁটকচুর ডাঁটার বা কন্দের তরকারি কয়েকদিন ভাতের সঙ্গে খেলে পায়খানা পরিষ্কার হয়ে গিয়ে বায়ু নিঃসরিত হয়ে যায় এবং পেটের ব্যথা থাকে না, ক্ষুধাবৃদ্ধি হয়।

আরো পড়ুন:  সোনাপাতা বা কেতুরী হলদি-এর গুণাগুণ

৩. ফোড়া সারানো: যেসব ফোড়া খুবই শক্ত হয়, পাকে না আবার বসেও না, সেক্ষেত্রে এর কন্দ বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে ভাল কাজ হয়। দিনে ২ বার করে পর পর কয়েকদিন দিলে অবস্থাটা বোঝা যাবে।

৪. হুলের জ্বালায়: ভীমরুল, বোলতা, মৌমাছি, ভোমরা, বিছা, বিষাক্ত পিপড়া প্রভৃতি হুল ফোটালে যে যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, সেই যন্ত্রণা কমাবার জন্য যদি ঘেঁট কচুর মূল বেটে গরম করে লাগানো হয়ে থাকে তাহলে অতি সত্বর যন্ত্রণা কমে যায়।

CHEMICAL COMPOSITION

Typhonium trilobatum (Linn.) Schott. Edible portion of the tubers contain: moisture 69.9, protein 1.4, fat 0.1, fibre 1.0, carbohydrates 26.0 and mineral matter 1.6%, calcium 35 mg., phosphorus 20 mg., iron 1.3 mg., sodium 9 mg., potassium 237 mg, thiamine 0.07% and niacin 0.7 mg/100 g.; carotene 78%, folic acid 17.5 mg./100 g.; idone 0.8 ppm., fluorine 3.7 ppm. and choline 22.8 mg./100 g. (as chloride). Alcoholic extract of tubers contain: B-Sitosterol, two unidentified sterols (Sterol A and Sterol B) and a crystalline compound m.p. 95°.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ১৭৯-১৮১।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krzysztof Ziarnek, Kenraiz

Leave a Comment

error: Content is protected !!