ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদটির পরিচিতি: সাধারণত ভৃঙ্গরাজ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে; সচরাচর আমরা দেখতে পাই পীতপুষ্প বা হলদে ফুল; এছাড়াও দেখা যায় আরও দুই প্রকারের গাছ, শ্বেত বা সাদা ও নীল ফুলের। এই প্রজাতির আর এক প্রকার গাছ দেখা যায়, সে গাছের ডাঁটা একটু লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এই সাদা ও লাল ডাঁটা ভৃঙ্গরাজ বারো মাসই প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়; তবে বাংলা, আসাম, মাদ্রাজ (তামিলনাড়ু, নাড়ু অর্থে পল্লী), মালাবার প্রভৃতি অঞ্চলে এগুলি বেশি জন্মে।
আরো পড়ুন: ভীমরাজ বা ভৃঙ্গরাজ অযত্নে জন্মানো এশিয়ার ভেষজ বিরুৎ
ভৃঙ্গরাজ-এর হিন্দি নাম পীলা ভাঙ্গরা; এইটির বোটানিক্যাল নাম Wedelia Calendulace ব্যবহার্য অংশ মূল সহ সমগ্র গাছ। দ্বিতীয় শ্বেতপুষ্প ভৃঙ্গরাজ বা ক্ষুদ্র ভৃঙ্গরাজ। কালমেঘের (Andrographis Paniculata) মতো ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ, স্থান ভেদে কখনও ভূলণ্ঠিতও হয়। একে কেশরাজ বা কেশুর্তে বলে, এর চলতি নাম কেশুত; হিন্দীতে একেও ভাঙ্গারা বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Eclipta alba আর নীল ফুলের ভৃঙ্গরাজ যে কি সেটি আজও আমাদের কাছে অজানা। ঔষধার্থে ব্যবহার করা হয় মূল সমেত সমগ্র গাছ। এটির ফ্যামিলি Compositae.
এই ভেষজটি বেশি তিক্ত ও অল্প কষ রস বিশিষ্ট্য; তারই ফলে স্বাভাবিকতায় এটি পিত্ত ও শ্লেষ্মা বিকার কফের উপর তার প্রভাব বিস্তার করে এবং এইসব বিকারজনিত রোগের উপশম হয়।
রোগ প্রতিকার
১. শিরোরোগে: সূর্যোদয়ের পর অনেকের মাথার যন্ত্রণা হয়, আবার কারও বা আধকপাল মাথাব্যথা হয়; সেক্ষেত্রে ভৃঙ্গরাজের নস্য নিলে বা মাথায় মাখলে এর উপশম হয়।
২. কেশপতনে বা চুল পড়া বন্ধ করতে: ভৃঙ্গরাজ বা ভীমরাজ পাতার রস করে দুপুর বেলার দিকে লাগাতে হয়। এই পাতার রস দিয়ে তেল পাক করে লাগালেও কেশপতন বন্ধ হয়।
৩. মাথায় উকুন: এই পাতার রস মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়।
৪. পোড়ার সাদা দাগে: এক্ষেত্রে ভৃঙ্গরাজ রস থেকে ও কেশুর্তের রসে দুবা বেটে লাগালে কয়েকদিনের মধ্যে গায়ের স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।
৫. চোখ ওঠায়: পুজ পড়তে থাকলে ২০ থেকে ২৫ ফোঁটা ভৃঙ্গরাজ রস জলে মিশিয়ে ঐ জলে চোখ ধুলে পুজ পড়া বন্ধ হয়।
৬. পায়োরিয়ায়: ভৃঙ্গরাজের পাতা চূর্ণ করে মাজনের মতো ২ থেকে ৪ মিনিট মেজে মুখ ধুয়ে ফেলতে হয়। এর দ্বারা ঐ দোষটি সেরে যায়।
৭. পেটের সমস্যা: যাদের দাস্ত হতে চায় না, তাঁদের এটি বিশেষ কার্যকরী হয়ে থাকে। তবে এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করাই ভাল।
৮. পুরাতন আমাশায়: অজীর্ণ মল, আর সঙ্গে আমও আছে, মলের রংও ভাল নয়; সেক্ষেত্রে এর পাতার রস ২৫ থেকে ৩০ ফোঁটা প্রতিদিন আধ কাপ ছাগল দুধের সঙ্গে কয়েকদিন খেতে হয়।
৯. শোথে: সর্বশরীর অথবা হাত-পায়ে একটু ফোলা ফোলা ভাব, সেক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ ফোঁটা এই পাতার রস দুধের সঙ্গে খেলে ও ভাবটা কেটে যায়।
১০. রক্তে শ্বেতকণিকা বেড়ে গেলে: এই পাতার রস উপরিউক্ত মাত্রায় দুধের সঙ্গে খেতে দিলে ওটি আবার স্বভাবে ফিরে আসে।
১১. চুল পড়া কেশপতনের বিশেষ ক্ষেত্র: যেসব মা শ্বেতপ্রদরের শিকার হয়েছেন, তাঁদের মাথার চুল প্রায় ক্ষেত্রেই উঠে যেতে থাকে। তাঁরা ভৃঙ্গরাজের পাতা সিদ্ধ করে সেই জলে দিনে ২ বার মাথা ধুয়ে ফেলবেন, এর দ্বারা ৩।৪ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাবেন।
১২. ক্রিমির উপদ্রবে: লম্বা বা ঝুরো কৃমি সব বয়সের লোককেই ব্যতিব্যস্ত করে, সেক্ষেত্রে এই ভৃঙ্গরাজের পাতার রস ১ চা-চামচ (পুর্ণবয়স্কদের জন্য) সিকি কাপ জলে মিশিয়ে খেলে ওটির উপদ্রব কমে যায়।
১৩. দাদে: ভৃঙ্গরাজের রসের প্রলেপ দিলে বেশ কাজ হয়।
১৪. স্নায়ুবিক দুর্বলতা: ভৃঙ্গরাজের রস ২৫। ৩০ ফোঁটা প্রত্যহ সকালে মধু সহ খেলে স্নায়ুবল ফিরে আসে।
১৫.পান্ডুরোগ : কুলেখাড়ার পাতার রস না দিয়ে ভৃঙ্গরাজের পাতার রস খাওয়ালে আরও বেশি কাজ হয়।
১৬. পুরাতন জ্বর ও অজীর্ণে: যাঁরা এতে ভুগছেন, তাঁরা সকালে ও বিকালে ১ চা-চামচ মাত্রায় ভৃঙ্গরাজের পাতার রস খেয়ে দেখুন, এতে উপকার পাবেন।
১৭. দাঁতের মাড়ির দুর্বলতা: ভৃঙ্গরাজের পাতার গুড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে মাড়ি শক্ত হয়।
১৮. মাড়িতে ঘা: ঘা থাকলে ঐ পাতার ক্বাথে কয়েকদিন মুখ ধুলে সেরে যায়।
রাসায়নিক গঠন:
তিনটি উপাদান (a) Alkaloids viz., ecliptine, nicotine. (b) Steroidals constituents. (c) Fatty acids.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৭৪-২৭৫।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
খুব ভালো একটা লেখা লিখেছেন। কৃতজ্ঞতা নিন।