ভূমিকা: ভীমরাজ (বৈজ্ঞানিক নাম: Wedelia chinensis, ইংরেজি নাম: Wedelia, Trailing Daisy.) হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ প্রজাতি। এর হলুদ ফুলের জন্য অনেকে টবে লাগিয়ে থাকে।
ভীমরাজ-এর বর্ণনা:
শয়ান বা উর্ধ্বগ বীরুৎ, কাণ্ড অর্ধঋজু, পর্ব থেকে পুণঃ পুণঃ মূল গজায়, মসৃণ, প্রায়শঃ লালচে, শাখা অনূর্ধ্ব ৩০ সেমি লম্বা, শীর্ষ অণুরোমশ, নিম্নাংশ মসৃণ। পত্র অবৃন্তক বা অর্ধবৃন্তক, বিরলক্ষেত্রে অতি খর্ব বৃন্তযুক্ত, উপবৃত্তাকার-বিবল্লমাকার, বিরলক্ষেত্রে বিডিম্বাকার-আয়তাকার, অনূর্ধ্ব ৬.৫ x ১.৮ সেমি, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, নিম্নাংশ ক্রমান্বয়ে সরু, অস্পষ্টভাবে ত্রি-শিরিত, প্রান্ত অর্ধঅখন্ড বা উপরের অর্ধেক অনিয়মিতভাবে সভঙ্গ ক্রকচ, বিরলক্ষেত্রে নিম্নাংশ দ্বি-খন্ডিত, উভয় পৃষ্ঠ সর্বাংশে দৃঢ়, শক্ত রোমাবৃত।
আরো পড়ুন: ভৃঙ্গরাজ বা ভীমরাজ-এর ১৮টি ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা
পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, একল, প্রান্তীয়, অসম জননকোষী, পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, পুষ্পদন্ড অনূর্ধ্ব ৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরী পত্রাবরণ ১.০-১.২ x ০.৫-০.৮ সেমি। মঞ্জরীপত্র ৬-৮ X ২-৩ মিমি, আয়তাকার, শীর্ষ প্রায় সূক্ষ্মাগ্র বা স্থূলাগ্র, রোমশ, অধিকতর অন্তর্বর্তী গুলি বল্লমাকার-বিবল্লমাকার, শল্কবর্ম বল্লমাকার, অবতল, ৫-৬ মিমি লম্বা ।
পুষ্প হলুদ। প্রান্ত পুষ্পিকা ৮-১০টি, স্ত্রী, দলমণ্ডল ৭.০-৭.৫ মিমি লম্বা, অণুফলক ৩.৫ মিমি লম্বা, প্রশস্ত, শীর্ষ ২-৩ খন্ডিত। মধ্য পুষ্পিকা ১০-১২টি, উভলিঙ্গ, দলমণ্ডল ৩.৫-৪.০ মিমি লম্বা, নলাকার। ফল সিপসেলা, ২.৫-৩.০ মিমি লম্বা, বিডিম্বাকার, উপরের অংশ গুটিকাযুক্ত বা ঈষৎ রোমশ, বৃতিরোম অনিয়মিত প্রান্তযুক্ত কুচবৎ বা ক্ষয়প্রাপ্ত পেয়ালা যুক্ত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২ = (২০ (Fedorov, 1969)।
ভীমরাজ-এর চাষাবাদ:
শস্য ক্ষেত, সমুদ্রতট এবং আর্দ অনাবাদী জমির ধারে অযত্নেই জন্মায়। ভীমরাজ চাষাবাদের দরকার হয় না। আগাছার মতো জন্মায়। এদের ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি থেকে আগষ্ট মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি:
ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া এবং চীন। বাংলাদেশে ইহা চট্টগ্রাম, সিলেট, পিরোজপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং টাঙ্গাইল জেলা হতে বর্ণনাকৃত হয়েছে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
এটি একটি বলকারক এবং পরিবর্তন সাধক পদার্থ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং কাশি, ত্বকের অসুখ এবং টাক পড়া প্রতিরোধে অত্যন্ত উপকারী।
ভীমরাজ-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বাংলাদেশে নেত্রকোনা, শেরপুর এবং টাঙ্গাইল জেলার গারো (মান্দি) আদিবাসী জনগোষ্ঠী। শিশুদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার দ্বারা সৃষ্ট শারীরিক দুর্বলতা। যাকে ‘খারাপ বাতাস লাগা’ বলা হয়; সেটা নিরাময়ে উদ্ভিদটির পাতার রস ব্যবহার করে থাকে।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ভীমরাজ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ভীমরাজ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ৩৮৩-৩৮৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।