নীল টেংরাকাঁটা প্যারাবনের গুল্মজাতীয় গৌণ প্যারাগাছ

প্যারাগাছ

নীল টেংরাকাঁটা

বৈজ্ঞানিক নাম: Acanthus ilicifolius L. সমনাম: Acanthus doloarin (Blanco), Acanthus ilicifolius subsp. orientalis (Bremek.), Acanthus ilicifolius var. subinteger (Nees) ও Dilivaria ilicifolia (L.) (Juss.) সাধারণ নাম: Sea Holly বা Holy Mangrove বা Shore Purslane বা Holly-leaved Acanthus বাংলা নাম: নীল টেংরাকাঁটা বা টেংরাকাঁটা বা নীল হরগজা বা হরকুচ-কাঁটা, কটকি,
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Asterids বর্গ: Lamiales পরিবার: Acanthaceae গণ: Acanthus প্রজাতি: Acanthus ilicifolius L.

নীল টেংরাকাঁটা বা টেংরাকাঁটা বা নীল হরগজা বা হরকুচ, কটকি (বৈজ্ঞানিক নাম: Acanthus ilicifolius) (ইংরেজি: Sea Holly বা Holy Mangrove বা Shore Purslane বা Holly-leaved Acanthus) প্যারাবন বা বাদাবনের ঝোপ ধরনের গুল্মজাতীয় গৌণ প্যারাগাছ। বেড়ে ওঠার পরিবেশ বিবেচনায় নীল টেংরাকাঁটাকে লালবাদার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। লালবাদার অর্থ হলো যে উদ্ভিদ প্রজাতিটি অতিরিক্ত লবণাক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে ও টিকে থাকতে পারে।[১]

বিবরণ: এই গুল্ম ১ থেকে  ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এটির হালকা অগভীর শেকড় জন্মায় এবং মাঝে মাঝে ভারসাম্য রাখার জন্য শুষ্ক শেকড় [stilt root]  জন্মায়। এর কাণ্ড শক্ত নয়। ফলে এ গাছ কিছুটা সোজা হয়ে,  লতানো পদ্ধতিতে বা চারপাশে নিজেকে বিস্তৃত করে উঠতে পারে। সাধারণত উপকূলীয় হ্রদ, নদী, ডোবা, খালের পাড়, জলাভূমি ও সমুদ্র সৈকতে এরা জন্মাতে পারে। ঈষৎ লবণাক্ত থেকে তীব্র লবণাক্ততায়ও এ গাছটি জন্মাতে এবং বেড়ে উঠতে সমস্যা হয় না।(২)

নীল টেংরাকাঁটার ফুল ফোটে এর শাখা থেকে বেরোনো ছোট্ট শীষের মাথায়। ফুলের রঙ হতে পারে নীল এবং পাতা হয় গাঢ় সবুজ। এদের পাতা খুব শক্ত। নিজেকে রক্ষা করার জন্য গাছগুলোর পাতার গোড়ায় ও অগ্রভাগে কাঁটা থাকে। টেংরাকাঁটার ফুল থেকে ক্যাপসুলের মতো ফল হয়। প্রত্যেকটি ফলে চারটি করে বীজ থাকে।[৩] এর কাঁটা যথেষ্ট শক্ত। ফলের বীজগুলো চ্যাপ্টা ও শাদাটে। ফল পাকার পর শুকিয়ে গেলে শব্দ করে ফেটে যায়। এতে ফলের বীজ ছুটে প্রায় ২ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এভাবে নীল টেংরাকাঁটা বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি বসতির এলাকা বাড়ায়।

আরো পড়ুন:  বাদাবন বা প্যারাবন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশের বনাঞ্চল

ব্যবহার: হরগজা ফুলে প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের মধু হয়। বাংলাদেশের সুন্দরবনের বনজীবীরা হরগজার অল্পবয়স্ক কচিপাতাকে শাক হিশেবেও ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও ভারত ও চীনের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিতে নীল টেংরাকাঁটার ব্যবহার রয়েছে। হাঁপানি, প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত ও পঙ্গুত্বের চিকিৎসায় টেংরাকাঁটার মূল ব্যবহৃত হয়। কফ, কাশি, সন্ধিবাত ও স্নায়ুশুলের  উপশমে টেংরাকাঁটার পাতা ব্যবহারের নজির আছে। অল্পবয়স্ক কচি কাণ্ড ও পাতা সাপে কাঁটার নিরাময়েও ব্যবহার করা হয়। টেংরাকাঁটার মূলের ক্বাথ গড়গড়া করলে দাঁতব্যথা ও মুখের ঘায়ের উপকার হয়। পক্ষাঘাতের চিকিৎসায় হরগজার সিদ্ধ মূলের সঙ্গে সরিষার তেল মিশিয়ে সুন্দরবনের আদিবাসীরা ব্যবহার করে।(৪)

প্রাপ্তিস্থান: নীল টেংরাকাঁটা সাধারণত উপকূলের নোনা বালু ও পানিতে জন্মে থাকে। বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ হয়ে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত। মাটির ক্ষয়রোধে এদের ভূমিকা অনন্য। এছাড়াও এই গাছটি অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, শ্রী লংকা, তাইওয়ান তিমুর লেস্টে, ভিয়েতনাম এবং প্যাসিফিক দ্বীপের নোনা এলাকায় পাওয়া যায়।[৫]

স্বভাব: এ গাছটি লোনা পানির ধারে হয় এবং দীর্ঘকাল লোনা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকলে বা প্রতিদিন জোয়ার-ভাটায় ডুবে এবং জেগে উঠলেও গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। সে কারণে অযত্নসম্ভূত এ গাছও মাঝে মধ্যে ভাঙন এড়ানোর জন্য নদী বা খালের ধারে। লাগানো হয়। এর খাদ্যমান (Calorific value) অধিক বলে ফুল ফোটার আগে গাছ থেকে কাঁটা ফেলে দিয়ে গবাদি পশুকে খেতে দেয়া হয়।[৬]

সংরক্ষণ: আইউসিএন নির্ধারিত বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় (IUCN Red List) টেংরাকাঁটাকে ন্যুনতম বিপদাপন্ন (Least Concern) হিশেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৭] গোটা দুনিয়ায় এই প্রজাতির ঘনত্ব ও সংখ্যাগত কোনো উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা না হলেও এটুকু বলা যায় যে, প্যারাবন বা  বাদাবনের আয়তন ও ঘনত্ব যে হারে কমছে তাতে টেংরাকাঁটার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

মন্তব্য: একান্থাসি পরিবারের অন্যান্য প্রজাতি সাধারণ পরিবেশেও বেড়ে উঠতে পারে। একান্থাস গণে প্রায় ২০টির মতো প্রজাতি রয়েছে।

আরো পড়ুন:  সুন্দরবনে ক্যামেরার ফাঁদ পদ্ধতিতে বাঘ জরিপের কাজ শেষ, বিশ্লেষণ বাকি

তথ্যসূত্র:

১. মেহেদী, হাসান. “Acanthus illcifolius (হরগজা) .” Mangropedia, 9 Apr. 2016, mangropedia.blogspot.com/2016/04/acanthus-illcifolius-bn.html.

২. Hyland, B. P. M., Whiffin, T., Zich, F. A., et al. (Dec 2010). Factsheet – Acanthus ilicifolius. Australian Tropical Rainforest Plants. Edition 6.1, online version [RFK 6.1]. Cairns, Australia: Commonwealth Scientific and Industrial Research Organisation (CSIRO), through its Division of Plant Industry; the Centre for Australian National Biodiversity Research; the Australian Tropical Herbarium, James Cook University. Retrieved 29 May 2013.

৩. Begum, Momotaz. (2009). Acanthus illcifolius. In Ahmed, Z. U., Hassan, M. A., Begum, Z. N. T., Khondkar, M., Kabir, S. M. H., Ahmad, M., and Ahmed, A. T. A. (eds.). Encyclopaedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol. 6. Angiosperms: Dicotyledons (Acanthaceae – Asteraceae). Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka. pp 1-2.

৪. Singh, D., and Aeri, V. (2013). Phytochemical and pharmacological potential of Acanthus ilicifolius. DOI: 10.4103/0975-7406.106557. J Pharm Bioallied Sci. 2013 Jan-Mar; 5(1): 17–20

৫. Barker, R. M. (১৯৮৬)। “A taxonomic revision of Australian Acanthaceae”Journal of the Adelaide Botanic Gardens 9: (1–) 64–75 (–286)। সংগৃহীত ২৯ মে ২০১৩।

৬. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার),  দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ৪৪-৪৫।

৭. Juffe Bignoli, D. (2011). “Acanthus ilicifolius“. IUCN Red List of Threatened Species. IUCN. 2011: e.T168780A6536949. Retrieved 9 July 2017.

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis

Leave a Comment

error: Content is protected !!