তেঁতুলে কড়ই বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জন্মানো ভেষজ গুল্ম গুল্ম by Dolon Prova - February 24, 2021February 24, 20210 LikeShareTweetPinLinkedIn গুল্মতেঁতুলে কড়ইবৈজ্ঞানিক নাম: Albizia myriophylla (Roxb.) Benth., Lond, J, Bot, 3:90 (1844). সমনাম: Mimosa microphylla Roxb. (1832), Albizia myriophylla Benth. var. foliolosa Bak, (1878), albizia thorelii Piet (1899). ইংরেজি নাম: Littlo-leaf Sensitive Briar, Sensitive Vine, Little-leaf Mimosa. স্থানীয় নাম: তেঁতুলে কড়ই। ভূমিকা: তেঁতুলে কড়ই (Albizia myriophylla) বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জন্মানো সপুষ্পক আরোহী গুল্ম। বাগান, প্রতিষ্ঠান, উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এটা লাগানো হয়। এছাড়াও এই গুল্মের নানা ভেষজ গুণও আছে। তেঁতুলে কড়ই-এর বর্ণনা: বৃহদাকার আরোহী গুল্ম থেকে আরোহী, কান্ড গাঢ় বাদামী বর্ণের এবং প্রস্থচ্ছেদে বৃত্তাকার, ক্ষুদ্রাকার বক্র পত্রকন্টক ও গাত্রকন্টক দ্বারা কন্টকিত, গাত্রকন্টক ৫ মিমি (প্রায়) লম্বা, ঝরে পড়া পাতার কক্ষ থেকে বের হয়। কচি বিটপ বাদামী রোমাবৃত। পাতা পক্ষল যৌগিক, অণুপর্ণী, উপপত্র ২-৩ মিমি লম্বা, সূত্রাকার, পত্রাক্ষ ৮-১৫ সেমি লম্বা, কোমল ও বাদামী রোমাবৃত। পত্রবৃন্তের পাদদেশ থেকে ৫ মিমি (প্রায়) উপরে এবং ১-৬ দূরবর্তী জোড়া পক্ষের সংযোগস্থলের মাঝখানে পেয়ালাকৃতির উপবৃদ্ধি বর্তমান, নিচের উপবৃদ্ধিটি ২-২৫ মিমি লম্বা, উপবৃত্তাকার, চেপটা থেকে অবতল, অবৃন্তক, উপরের উপবৃদ্ধিসমূহ খর্বাকার, বৃত্তাকার। পক্ষ ৮-২০ জোড়া, ৪-৮ সেমি লম্বা। পত্রক ২০-৬০ জোড়া, ৬-৮ x ১-২ মিমি, সরু ভল্লাকার থেকে রৈখিক, কাগজবৎ, প্রতিমুখ, অবৃন্তক, নিম্নপ্রান্ত। অসমভাবে খাতাগ্র, শীর্ষ তীক্ষ্ণ, মধ্যশিরা প্রায় কেন্দ্রিক, কিনারা সিলিয়াযুক্ত, পুরু, অণুররোমশ থেকে মসৃণবৎ। পুষ্পমঞ্জরী অধিক শাখান্বিত প্রান্তীয় মঞ্জরীদন্ডক শিরের। যোগিক মঞ্জরী, ৩-৪টি মঞ্জরীদন্ড একসাথে গুচ্ছবদ্ধ, ১.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ১০-১২টি পুষ্পের সমন্বয়ে গঠিত। পুষ্প বি-রুপা, উভলিঙ্গ, সাদা থেকে ফ্যাকাশে হলুদ। বৃতি ০.৭ মিমি (প্রায়) লম্বা, চুঙ্গি-আকৃতি থেকে ঘন্টাকার, অণুরোমশ, দস্তক ৫টি, ০.২ মিমি (প্রায়) লম্বা, ত্রিকোণাকার, তীক্ষ্ম। দলমন্ডল ৩.৫-৫.৫ মিমি লম্বা, চুঙ্গি-আকৃতির, বিবর্ণ রেশমা, খন্ডাশে ১-২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার, তীক্ষ্ণ। আরো পড়ুন: পটল লতার পনেরোটি ভেষজ গুণ ও প্রযোগ পদ্ধতিপুংকেশর অসংখ্য, সাদা, পুংকেশরীয় নল দলনলের সমান লম্বা। গর্ভাশয় ১ মিমি (প্রায়) লম্বা, মসৃণ, বৃন্তক। ফল পড, ৭.৫-১২.০ x ১.৫-২.০ সেমি, চেপটা, কাগজবৎ, উভয়প্রান্ত সরু, বাদামী হলুদ, বিদারী। বীজ প্রতিটি পডে ৬-৮টি, ৬.৫ x ৫০ মিমি (প্রায়), বর্তুলাকার থেকে বি-ডিম্বাকার, কিছুটা উত্তেল, চকচকে, চকোলেট বাদাম। আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার: চিরহরিৎ অরণ্য থেকে শুষ্ক পত্রঝরা অরণ্য, সচরাচর বনের প্রান্তে, উপদ্রত মৃত্তিকা, বালিকাময় নদীর তীর এবং সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ের চূড়ায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল এপ্রিল-জুলাই। বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং শাখা কলমের সাহায্যে। তেঁতুলে কড়ই-এর বিস্তৃতি: ভারতের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়। পেনিনসুলা এবং সমুদ্রের বুকে দ্বীপ। বাংলাদেশে ইহা জামালপুরের গজনী বন, সিলেটের জাফলং এবং চট্টগ্রামের বনভূমি থেকে লিপিবদ্ধ হয়েছে। অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ইহা জ্বালানী কাঠ, সৌন্দয্যবর্ধন, গোখাদ্য এবং ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইহার বাকল ও বীজ কোষ্ঠবদ্ধতাকারী, পাইলস ও ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বারকিলের মতে ইহার পাতা। যষ্টিমধুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ইহার কান্ড, পাতা ও ফুল সর্প দংশন এবং বৃশ্চিকের হুল ফোটায় প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তেতুলে কড়ই প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটির তথ্য সংগৃহিত হয়নি (NE), কিন্তু ধারণা করা হয় ইহা একটি বিরল প্রজাতি। বাংলাদেশে তেতুলে কড়ই সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে -স্থানে এবং স্ব-স্থানের বাইরে উভয় ধরনের সংরক্ষণ ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: ১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ১৬৩-১৬৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0 আরো পড়ুন: রাম বাসক চিরহরিৎ ঔষধি গুল্মছবির সূত্র: boldsystems LikeShareTweetPinLinkedIn