ভূমিকা: গিরিশোভন শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Ampelygonum salarkhanii) হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। এছাড়াও শাক হিসাবে খাওয়া হয়।
গিরিশোভন শাক-এর বর্ণনা:
বর্ষজীবী এবং ঝোপাকার ছোট আকারের গুল্ম। প্রধান কান্ড খাড়া, ২ মিটার ততোধিক লম্বা এবং পাদদেশে ২ সেমি থেকে অধিক মোটা, সবুজ, মসৃণ, গৌণ শাখাসমূহ অধিক সরু।
পাতা সুস্পষ্ট বৃন্তবিশিষ্ট, ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ, কখনও পাদদেশে সমান বা অসমান ২টি সন্ধি বর্তমান, ফলক দীর্ঘায়ত থেকে দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার, ১৪ x ৫ সেমি পর্যন্ত।
পাতার উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, প্রায়ক্ষেত্রে গ্রন্থিল, নিম্নপৃষ্ঠ চকচকে, শীর্ষ তীক্ষা থেকে দীর্ঘা, কিছুটা হৃৎপিণ্ডাকার, খাতা, কদাচিৎ গোলাকার, কিনারা অখন্ড বা অণু সভঙ্গ ।
Ocrea ঝিল্লিময়, কর্তিত, ৬ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ, ক্ষুদ্রাকার গ্রন্থিল, সিলিয়াবর্জিত, পরিণত Ocrea ছিন্নপ্রান্ত।
পুষ্পমঞ্জরী মুণ্ডাকার, মঞ্জরীদন্ড শাখান্বিত এবং খর্বাকার ও বহুকোষী সাদা রোম বা বৃন্তক গ্রন্থিবিশিষ্ট।
Ocreolae ৪.২ x ১.১ মিমি পর্যন্ত, ভল্লাকার, মসৃণ, সিলিয়াবর্জিত, প্রান্ত-আচ্ছাদী।
পুষ্প বৃন্তক, বৃন্ত ৪ মিমি। (প্রায়) লম্বা, কিছুটা বহির্গামী, পুষ্পপুট ৫টি, ৩.৫-৪.০ মিমি লম্বা, সাদা।
পুংকেশর ৮টি, ২-৩ মিমি লম্বা এবং খাটো গর্ভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে বহির্গামী, ১.০-১.২ মিমি লম্বা এবং লম্বা গর্ভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে অন্তর্গত, পরাগধানী বেগুনি থেকে গোলাপী।
গর্ভাশয় ৩টি তলবিশিষ্ট, গর্ভকেশর ৩.৫৪.০ মিমি লম্বা এবং লম্বা গর্ভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে বহির্গামী, ১.৫-১.৭ মিমি লম্বা এবং খাটো গর্ভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে অন্তর্গত।
ফল ব্যক্কেট, রসালো, ৪ x ৪ মিমি পর্যন্ত, ফলের সাথে যুক্ত পুষ্পপুট ১ মিমি (প্রায়) পুরু, সম্পূর্ণ পরিপক্ক অবস্থায় পিচ সদৃশ কালো।
নাট ৩টি তলবিশিষ্ট, ৩ x ২ মিমি (প্রায়), কালো, জালিকাময়, সরস পুষ্পপুটের প্রতি সংসক্ত অতি ক্ষীন একটি আবরণবিশিষ্ট।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (Alam et al., 2000).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
পাহাড়ী এলাকা। ফুল ও ফল ধারণ অক্টোবর-জানুয়ারী। বীজের মাধ্যমে, কর্তিত কান্ডের মাধ্যমেও বংশবিস্তার করে থাকে।
গিরিশোভন শাক-এর বিস্তৃতি:
ভারত, চীন এবং মায়ানমার। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে চিম্বুক পাহাড়ে পাওয়া যায়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: আদিবাসীরা ইহার কচি পাতা শাক হিসেবে এবং কান্ড জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গিরিশোভন শাক প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে গিরিশোভন শাক সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ৪১৯-৪২০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।