নাগদনা হচ্ছে এশিয়ার জন্মানো সুগন্ধযুক্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন গুল্ম

নাগদমনী আর নাগদনা শব্দ দুটির পার্থক্য করা বেশ কষ্টকর। তবে এটা বলা যাবে প্রথমোক্ত এবং শেষোক্ত শব্দগুলো দুটি প্রজাতির বাংলা নাম যাদের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম যথাক্রমে Artemisia vulgaris Linn. এবং A. Maritima Linn. প্রথমোক্ত প্রজাতি আমাদের সমতলভূমিতে জন্মালেও শেষোক্ত প্রজাতি পর্বতাঞ্চল—কাশ্মীর থেকে কুমায়ুন পবর্তমালার ৭-৯ হাজার ফুট উঁচুতে জন্মে।

নাগদনা গাছের বর্ণনা:

নাগদনা একটি সুগন্ধযুক্ত গুল্ম; যা ৯০-১২০ সেমি পর্যন্ত উঁচু হয়। নাগদনা গাছের গোঁড়ার দিকটায় অনেক শাখা-প্রশাখা হয় এবং পাতাগুলো রোমশ ও মূল কাষ্ঠগর্ভ। এদের পাতা অপেক্ষাকৃত ছোট, ৩ সেমি-এর অধিক বড় হয় না। হলুদ রঙের ফুল হয়। চীনে এ প্রজাতি প্রচুর জন্মে এবং থাইল্যান্ডেও এর চাষ করা হয়।

এর কয়েকটি পর্যায়িক নাম আছে- কীটমারী, যমনী, গন্ধা, গাহর, জনাশনা। বিভিন্ন ভাষায় এর নামগুলো: সংস্কৃতে- চৌহার; হিন্দিতে- কিরমালা, শিয়া- কিরমানী। অজবায়ন; ইউনানীতে- দেরমানা তুর্কী, শীহ খোরাসানী; ফারসিতে- দির্মনা; আরবিতে- শীহ; ইংরেজিতে- worm seed, উদ্ভিদাত্ত্বিক নাম Artemisia taritima Linn. গোত্র কম্পোসিটী।

উদ্ভিদের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার:

বৈদিক গ্রন্থ, সংহিতাসমূহে এর উল্লেখ দেখা যায় না। তবে লোকায়ত বেশ কিছু শ্লোক এদের (নগদনা, নাগদমনী) সম্পর্কে প্রচলিত আছে যা থেকে বোঝা যায় এদের কার্যকারিতাও ফেলে দেবার মতো নয়। তবে এ গণ Artemisia-এর বেশ কয়েকটি প্রজাতি এতদঞ্চলে উঁচু পর্বতাঞ্চল থেকে সমতলভূমিতে পাওয়া যায়। কোন প্রজাতিকে ভালোভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল তা নির্ধারণ করা মুশকিল। কাজেই এ ব্যাপারে আরও গবেষণার সুযোগ নব্যবিজ্ঞানী এবং ওষুধশাস্ত্রীদের রয়েছে। কবিরাজ নিকেতন চক্রবর্তী এর কিছু গুণ বর্ণনা করেছেন- এটি তিক্ত কটুরস, ক্রিমি রোগনাশক, অগ্নিমান্দ্য ও পেট ফাপা নিবারক এবং রোমসঞ্জনন ।

অগ্নিমান্দ্য, আধান, উদররোগ এবং সর্ববিধ ক্রিমিরোগে প্রযোজ্য। রাতে নাগদনী খেয়ে সকালে বিরেচন নিলে সকল ক্রিমি মরে বের হয়ে যায়। পুরাতন রোগ হলে প্রথম মাত্রা সেবনের সাতদিন পর পুনরায় আর এক মাত্রা নিতে হয়।

আরো পড়ুন:  দামেস্ক গোলাপ-এর গুণাগুণ, উপকারিতা ও প্রয়োগ

আয়ুর্বেদ সংহিতায় উল্লেখ আছে, যে মাসিকের প্রথম ৩ দিন ৩ গ্রাম পরিমাণ নাগদনার শিকড় বাটা শরবত করে খেতে হয়। এভাবে কয়েকটা ঋতুতে ব্যবহার করলে আর গর্ভধারণ করে। দাদ,  চুলকনা, ছুলি হলে নাগদনা পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পরধুয়ে ফেলতে হয়। এভাবে ২-৪ দিন ওটা ব্যবহার করলে রোগ নিরাময় হবে।

কর্ণশূলে পাতার রস গরম করে ২-৪ ফোঁটা কানে দিলে উপশম হয়। যে বয়সে ঋতু বন্ধ হওয়ার কথা নয়, সে বয়সে ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে নাগদনার পাতা বা ডাঁটা ও পাতার রস আধ বা এক চা-চামচ রস আধ কাপ পানিতে মিশিয়ে ২-৩ দিন খেলেই ঋতু পরিষ্কার হয়ে যায়।

মূত্রকৃচ্ছ্র হলে এক কাপ পানিতে নাগদনা পাতার রস ২০-২৫ ফোটা মিশিয়ে সকালে কিালে দুবার খেলে ঐ কষ্টটা আর থাকবে না।

বাংলাদেশ জাতীয় ইউনানী ফর্মুলারী ১৯৯৩-তে একটি ওষুধ যথা এত্রিফল দীদান এ দেরমানা তুর্কী (নাগদনা) ব্যবহারের উল্লেখ দেখা যায়। ওষুধটি আন্ত্রিক ক্রিমি, কেঁচো ক্রিমি নাশক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার),  দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ১৬২-৬৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Sten Porse

Leave a Comment

error: Content is protected !!