ছায়া গুল্ম-এর নানা গুণাগুণের বিবরণ

ছায়া মাটিতে সামান্য গড়িয়ে পড়ে বা শক্ত খাড়া কাণ্ডযুক্ত, অত্যন্ত রোমশ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণতঃ বর্ষজীবী, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাছ মরে যাবার পর মূলটা তাজা থাকতে থাকতে জল পেলে তা থেকেই গাছ বেরোয়। বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট এক থেকে দেড় ফুট লম্বা এই উদ্ভিদটি যখন ফুলে ভরে ওঠে, তখন সত্যিই অপূর্ব লাগে। ছোট বোঁটাযুক্ত প্রায় গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি পাতা, ধূসর-সাদা এবং নরম রোমাবৃত। সবুজাভ সাদা রঙের ছোট ছোট ফুলগুলি পাতার কোলে কোলে সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। ফুল হালকা সুগন্ধযুক্ত। ফুলের বালিশ বড়ই আরামপ্রদ। ফল খুবই ছোট, ডিম্বাকৃতি, ডগা সূচের মত সরু, তার মধ্যেই কালো রঙের বীজ থাকে।

অবস্থান ও চাষাবাদ:

পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশে পতিত জমিতে বর্ষাকালে প্রায় আগাছার মতই জন্মে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শীতের পূর্বে, কখনো বা শীতের শেষে গাছে ফুল ও তৎপরে ফল ধরে। অত্যধিক গরমের পূর্বে গাছ মরে যায়। কোন কোন স্থানের লোকে পাতার তরকারি খেয়ে থাকেন। ভারতের প্রায় সর্বত্রই এটি জন্মে।

ছায়া-এর অন্যান্য নাম:

দুধফুলকার গাছটি হিন্দী ভাষাভাষী অঞ্চলে গোরখ গাঞ্জা, গোরখ বুটী, কপুরী জড়ী প্রভৃতি ও বাংলায় ছায়া নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম – Aerva lanata Juss. ex Schult., ফ্যামিলী Amaranthaceae. বাংলার কোথাও কোথাও এটিকে আবার ‘দৈয়ে-খৈয়ে’ বলে। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ— সমগ্র উদ্ভিদ।

ছায়া-এর গুণাগুণ

১. ফুল পাতা সমেত কাণ্ড: পিচ্ছিল, স্নিগ্ধ, মূত্রকারক, বেদনাহর এবং সর্দি, কাসি, ক্রিমি, অশ্মরী (মূত্রাশ্মরী), গলক্ষত, অজীর্ণ, অতিসার, প্রবাহিকা, বিসূচিকা, ক্ষত, মধুমেহ, বস্তি প্রদাহ, মূত্রকৃচ্ছ্র, মূত্রপ্রদাহ প্রভৃতিতে বিশেষ ফলপ্রদ।

২. মূল: পিচ্ছিল, মূত্রকারক, বলকর, শিরঃশূল নাশক। গর্ভিণীদের পক্ষে বলকর ও হিতকর। এরও অশ্মরীনাশক গুণ বিদ্যমান।

৩. ফুল: বৃক্কের পাথুরী নাশ করতে ও গনোরিয়া রোগে ব্যবহার্য।

সমগ্র উদ্ভিদটিতে অল্প পরিমাণে ট্যানিন পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২১২।

আরো পড়ুন:  সোনাপাতা বা কেতুরী হলদি-এর সাতটি ভেষজ প্রয়োগ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!