ত্রিশিরা ফণিমনসা > নাগফনা > ফণিমনসা > ক্যাকটাস। বৈজ্ঞানিক নাম Cactus বা Opuntia dillenii Haw. এরা Cactaceae পরিবারের সদস্য। ইংরেজি নাম Prickly pear, slipper Thorn. এদের চাকমা সম্প্রদায় বলেন ‘নাগফনা’ বা ‘বিদব’। ক্যাকটাস চাষ বাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে করে তোলে দৃষ্টিনন্দন।
শিরদাঁড়ার কাঁটাওয়ালা বন্ধু । এরা আসলে ‘জঙ্গল উদ্ভিদ’। আমাদের গ্রামে এদের ফণিমনসা বা ত্রিশিরা ফণিমনসা বলে ডাকা হয়। এদের পাতার বৈশিষ্ট্য হলও পাতাগুলো কাটায় রূপান্তরিত হওয়া। সব ক্যাকটাসের চরিত্র এক নয়। জাতভেদে এদের নানা চেহারায় দেখা যায়।
প্রকৃতিতে এদের বংশ বিস্তার হয় অন্য সব উদ্ভিদের মতো বীজ থেকে। পাকা ফলের রঙ যথেষ্ট উজ্জ্বল। সহজেই পশু-পাখিদের আকৃষ্ট করে। এরাই বীজ ছড়িয়ে দেয় নানা জায়গায়। বীজ ছাড়াও এদের দেহখণ্ড থেকে বংশ বিস্তার করা যায়।
কাণ্ডের কিছুটা অংশ স্ফীত ও দুটি স্ফীত অংশের মধ্য থেকে আরেকটি ছোট সংযোগস্থল থাকে। ঝড়-বাতাসেও এই স্ফীত অংশ আলাদা হয়ে যায়। এ থেকেও স্বাভাবিক নিয়মে এদের বংশ বিস্তার ঘটে থাকে। অনেক প্রজাতির কচি শাখার সংকীর্ণ সংযোগস্থল থেকে শেকড় গজায়। জন্ম নেয় নতুন গাছ।
অন্দরমহলে ক্যাকটাস লাগানোর জন্য এদের বীজ বা কাটিং থেকে চারা তৈরি করে নেওয়া যায়। টবের ক্যাকটাস যেমন আছে আবার ঝুলন্ত স্বভাবেরও ক্যাকটাস আছে। এপিফাইলামা ও ফাইলো অন্দরমহলে ঝুলন্ত গাছ হিসেবে বেশ মানানসই। বীজ ও গাছের গা থেকে বের হওয়া গাঁট থেকে এদের নতুন গাছের জন্ম হয়। বেশিরভাগ ক্যাকটাসের গা থেকে বের হওয়া গাঁট কেটে পুঁতে রাখলেই নতুন ক্যাকটাস জন্মাবে।(১)
ক্যাকটাস চাষের যন্ত্রপাতি (Implements for growing Cactus)
ক্যাকটাস, উৎসাহীদের বীজবপন, চারা রোপন (বীজশোধন, ঔষধ ছড়ানোর যন্ত্রপাতি, রোয়ার জন্য যন্ত্রপাতি, প্রভৃতি), লেভেল, জোড়কলম প্রভৃতির জন্য যন্ত্রপাতি, যথা— লম্বা ধারাল ছুরি, বিভিন্ন শক্তির রাবার ব্যান্ড, আগাছা দমন ও গাছের ছাল থেকে কাঁটা ছাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের টইজার (tweezers), টব ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের চিমটা (tongs) প্রভৃতির প্রয়োজন হয়।
এছাড়া, স্প্রে করার জন্য সিরিঞ্জ, জল দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পাত্র (Watering Cans), লম্বা সরুমুখ সহ অথবা বিভিন্ন জায়গায় যুক্ত করার জন্য হোসপাইপ প্রভৃতিও দরকার। ক্যাকটাস-চাষীরা জল অম্ল করার জন্য এক বোতল অম্ল, কলের জল নরম করার জন্য একটা বড় বোতল (vassel for de-alkalizing or softening tap water) প্রভৃতিও রাখা আবশ্যক।
তাছাড়া, কতকগুলি মাটির স্তর (substratum), যথা— fireclay, perlite, vermiculite, pumice প্রভৃতি বা মাটির উপযুক্ত মিশ্রণ এবং গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত পাত্র, যথা— টব, টিন, বাটি অথবা প্ল্যাস্টিক কিংবা ধাতুর বাক্স প্রভৃতি দরকার। এছাড়া যথেষ্ট সংখ্যক ব্রাশ পরাগ-সংযোগ ঘটানোর জন্য দরকার এবং কিছু টেস্টটিউব দরকার পরাগরেণু রাখার জন্য, এবং ফল ও পরিষ্কার বীজ রাখার জন্য।
ক্যাকটাসের ব্যবহার (Uses of Cacti)
ক্যাকটির ব্যবহার বহুবিধ। উদাহরণস্বরূপ কতকগুলি Cerci-এর বড় ফল এবং Opuntias এর ফল মেক্সিকো আদিবাসীদের ক্ষেত্রে একটি সুস্বাদুখাদ্য। “টুনাস” (“tunas) বা “ক্যাকটাস ডুমুর” (Cactus fig) তাজা অবস্থায় খাওয়া যায় বা চিনির সঙ্গে সংরক্ষণ করা যায়, অথবা এর থেকে সুরা (alcohol) তৈরী করে খাওয়া যায়। শুষ্ক সময়ে ফলগুলি পাকে এবং ফলগুলি অসময়ে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
আমেরিকায় ক্যাকটি প্রায়ই সমস্ত উপজাতিদের তৃষ্ণা বা ক্ষুধা থেকে অনেক সময় বাঁচাতে সাহায্য করে। ব্রাজিলের কিছু অংশে কণ্টকবিহীন Opuntias এখনো স্বাদ ও উৎকৃষ্ট পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
অতিবৃহৎ দক্ষিণী এরিজোনাতে (Southern Arizona-Carnegia gigantea) অতি খরাতেও ফল ধরে। অন্যান্য অনেক ক্যাকটির মতো এগুলোতে বিভিন্ন প্রকার ক্ষার জাতীয় পদার্থ পাওয়া যায় এবং এগুলোর বিশদ গবেষণা এখনো দরকার, যাতে এসব থেকে জীবন-প্রদায়িণী ঔষধপত্র তৈরী করা যেতে পারে।
Selenicereus grandiflorus- থেকে সুপরিচিত গ্লাইকোসাইড যায়, যা নাকি হদরোগীদের একটি মহৌষধ। এই ক্যাকটাসের ফুলকে“Queen of the Night” বা“রাতের রাণী” বলে।
মেক্সিকোরLophophora wlliamsii (একে “Peyotl” ও বলে) ভাল মাদকজাত দ্রব্য (narcotics)তৈরী হয় এবং একে একসময় “ভারতীয়আচারের নিদর্শন” বলা হত। এতে যে সব ক্ষারীয় পদার্থ (যথা—mescal, anhalonin এবং pelotin) থাকে, তার থেকে রং এবং গভীর মতিভ্রমের (sound halucinations) দ্রব্য তৈরী করা সম্ভব। এই ক্যাকটিগুলি সম্পূর্ণ কণ্টকবিহীন, ছোট্ট শরীর এবং এতে লম্বা শালগমের মতো মূল (turnip-like root) থাকে।
উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার সুবৃহৎ ক্যাকটির থামের মতো কাণ্ড থেকে “কাঠ” পাওয়া যায়, যা খুবই হাল্কা, কিন্তু শক্ত এবং গাছবিহীন ফাঁকা এলাকায় এই ক্যাকটাস সহজেই ঘরবাড়ী, আসবাবপত্র, বাসনপত্র প্রভৃতি তৈরীতে সাহায্য করে ও জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
মেক্সিকোতে জীবিত Cerei (C. marginatus) ক্যাকটি বাগান ও বারান্দার সামনে লনে লাগিয়ে মোটা ও অপ্রবেশ্য বেড়ার কাজে লাগান হয়। সস্তার এনিলিন রং আবিষ্কার হওয়ার আগে কতকগুলি opuntias প্রজাতিকে কয়েকটি পোক বসবাসকারী গাছ হিসাবে ব্যবহার হত এবং এইসব পোকা থেকে বহুমূল্য রং “কোচিনীল” (Cochinil) তৈরী হতো। মেক্সিকোতে এই রঙের উৎপাদন প্রায় বছরে ৫০০ টনে পৌছেছিল এবং জাতীয় আর্থিক সাশ্রয়ের প্রতীক বলে প্রতিপন্ন হয়েছিল।
সুতরাং ক্যাকটাসের আর্থিক গুরুত্ব আজ সারাবিশ্বে সহজেই অনুমেয়। শুধুমাত্র শখের গাছ না হয়ে ক্যাকটাসের বিধি ব্যবহারের কথা সবাইকে আজ ভাবতে হবে ও এ ব্যাপারে মৌলিক গবেষণার আশ প্রয়োজন। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম জার্মানীতে শাঁসবহুল গাছ বা সাকুলেট ও ক্যাকটাসের উপর ব্যবসাভিত্তিকভাবে বড় বড় সব ফার্ম বা খামার গড়ে উঠেছে এবং বিশ্বের বাজারে তারা ভাল ব্যবসা করছে। আমরা এদিকটাও ভেবে দেখতে পারি।(২)
ক্যাকটাসের প্রজাতিসমূহ:
অন্দরমহলে লাগানোর জন্য জিমনোক্যালিসিয়াম, সোনি রেবুসিয়া, মাইগো ক্যাকটাস ট্রানকাটা, অ্যাস্ট্রোফাইটাম মাইরিওস্টিগমা, ম্যামিলামারা বোকাসানা, ম্যামিলারিয়া ইলঙ্গাটা, এরিথ্রিরিপসালিস, ডাইসো ক্যাকটাস ম্যাকারানথাম, ক্রিসটেটা সিরিয়াস, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
Aporocatus-এর কাণ্ড বেশ লম্বা ও সরু। লতানো ধরনের কাণ্ড নিচের দিকে ঝুলে থাকে। কারমাইন রঙের ফুল এদের সৌন্দর্য আলো বাড়িয়ে দেয়। গাছে ফুল এলে এর গোড়ায় তরল সার ব্যবহার করা দরকার। দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্যাকটাসের ফুল এক দিনের বেশি থাকে না, কিন্তু এর ফুল কয়েক দিন তাজা থাকে। বেশি বৃষ্টি কিংবা কড়া রোদ-সবই সহ্য করতে পারে এরা।
a.flagelliformis অতি সাধারণ প্রজাতির ক্যাকটাস। অনেকে একে র্যাট টিল ক্যাকটাস নামেও ডাকে। এর কারণ হলো এরা দেখতে অনেকটা ইঁদুরের লেজের মতো দেখতে। ১০টি শিরাযুক্ত উজ্জ্বল রঙের হয় এরা। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের শরীরের উজ্জ্বলতা কমতে থাকে।
a.flagiformis-এর শিরার সংখ্যা অনেক কম। কাটার সংখ্যাও কম থাকে। অন্দরমহল এরা মানিয়ে থাকে। a.martianus কাণ্ড খাড়া ও লাতানো-দুই ধরনেরই হতে পারে এই জাতের ক্যাকটাস মৌসুমে এরা লাল ফুলে সেজে থাকে ariocarpus খর্বাকৃতি হলেও অপরদিকে চ্যাপ্টা ধরনের। সবুজ রঙের ত্রিকোণের মাথার ওপর কাঁটাহীন ছোট এরিওল থাকে। a.fissurtatus প্রজাতির নাম split exterior, অর্থাৎ বাইরে থেকে দুই ভাগে বিভক্ত। ফুল কখনো সাদা ও হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এর শরীর বাদামি রঙের বলে এরা পাথরের সঙ্গে মিশে থাকে। অনেকে এক living rock cactus বলে ডাকে। a.retusus ভোতা, গোল মাথায় খাঁজ কাটা। মাথার রঙ পুরোটা চ্যাপ্টা ও সবুজ। শরীরে পশমির মখমলের মতো ঢাকা থাকে।
astropytum-এর অর্থ হলো নক্ষত্রাকৃতি ক্যাকটাস। এদের অনেক ধরনে জাত রয়েছে। গোলাকার, শিরা স্পষ্ট, তারার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশে ঢাকা। বেশিরভাগ ক্যাকটাসের মতো এরাও চুন-মাটি পছন্দ করে। সেজন্য অনেকেই ‘চুন প্রেমিক’ বলে থাকে। শীতকালে এদের বৃষ্টি দরকার হয় না। গরমকালে অন্য সব ক্যাকটাসের মতো অনেক পানি ও রোদ দরকার বৈচিত্র্যের দিক থেকে অ্যাস্ট্রোফাইটাম চাষ করা অনেক সহজ।
a.asteries দেখতে অনেকটা গম্বুজের আকৃতি। আটটি শিরা । এরিওল, কাটহীন ও পশমি। ফুল আকারে বড়। রঙ হলুদ ও মাঝে কারমাইন। এর বা অংশে ফুল আসে। এরিওলগুলোতে মোচড়ানো কাটা থাকে। হলুদ রঙের ফলের মাঝের দিকটা লালচে কমলা। এর গুটিকয়েক জাত রয়েছে এবং এদের প্রত্যেকটি জাতই সুন্দর।
a.myrostigum একটি সাধারণ জাতের ক্যাকটাস কিন্তু জনপ্রিয়। গোলাকার কাণ্ডটির মাথায় কিছুটা নিচু। পুরো গা ধূসর আঁশে ঢাকা বলে পাথরের মতো দেখায়। চার থেকে আটটি শিরা। কোনো কাটা নেই। ফুল হলুদ বর্নের। কখনো কখনো নিচের দিকটা লালচে দেখায়। এদের সূর্যের আলোতেও চাষ করা যায়।
a.ornatum-এর কাটা খুব ধারালো এবং এরিওলে সুন্দরভাবে তা সাজানো থাকে। গায়ের আঁশগুলো আকারে বড়। শিরাগুলো কোণাকৃতি ও আঁকাবাকা, ফুল বড় ও সবুজ আভাযুক্ত।
austrocylindropuntia লম্বা আকারের। এই জাত দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আমাদের দেশে এসেছে বলে অনেকেই মনে করেন। কাণ্ড লম্বা ও খণ্ডে খণ্ডে জোড়া। এর গায়েও বিকৃত ছোট ছোট পাতা দেখা যায়। কাটিংয়ের মাধ্যমে এর চারা তৈরি করা যায় ।
a.cylindrica লম্বা আকারের গাছ। চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এরা। প্রতিটি এরিওলে দুই থেকে তিনটি ছোট সাদা কাঁটা থাকে। বিকৃত পাতার আকার লম্বা। রঙ সবুজ। পাতা কেবল বাড়ন্ত অংশে দেখা যায়, বেশি দিন থাকে না। ঝরে পড়ে।
a.pachypus বাহারি পাতার ক্যাকটাস। এদের কাণ্ড খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত। এরিওলে হলুদ রঙের গ্লাচিডের ওপর অসংখ্য হলুদ রঙের কাঁটা থাকে। ফুল বেশ বড়-প্রায় ৭৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। রঙ উজ্জ্বল লাল।
a.vestita অত্যন্ত বাহারি ও জনপ্রিয় জাত। স্তম্ভের মতো বড়। শাখাবহুল কাণ্ড সাদা লোমে ঢাকা। বাড়ন্ত অংশে হঠাৎ সবুজ পাতা দেখা যায়। ফুল বেগুনি। ক্ষণস্থায়ী aztekium-এর মাত্র একটি প্রজাতি খবর জানা যায়।
a.ritteri কাণ্ড গোলাকার। শিরা আট থেকে ১১টি। এরিওলে গুটিকয়েক কাঁটা থাকে। বাড়ন্ত অংশে ফুল ফোটে। ফুলের রঙ সাদা। বাইরের পাপড়িগুলোতে লাল রঙের ছোপ দাগ দেখা যায়। carnegia-আমেরিকার বিখ্যাত লেখক কার্নেগির নামে নাম রাখা হয়েছে এর নাম। এটি অন্দরমহলের জন্য একটি আদর্শ ক্যাকটাস।
c.gigantea ক্যাকটাস পরিবারের সবচেয়ে বড় জাতের গাছ এটি। উচ্চতায় ১০ থেকে ১৫ মিটার। তিন থেকে পাঁচ মিটার উঁচুতে শাখা গজায়। এদের জীবনকাল সবচেয়ে বেশি। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বলেছেন, এরা আড়াই শ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকে। এরিওলে অনেক কাটা। গাছের ডগায় ফুল ফোটে। ফুলের রঙ সাদা। পাপড়ির বাইরে থাকে সবুজ আভা। গাছ ধীরে ধীরে বাড়ে। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। অনেক বড় জাতের এই ক্যাকটাস সাগুয়ারো, অ্যারিজোনা জায়ান্ট, জায়ান্ট ক্যাকটাস নামে পরিচিত। এরা ধীরে ধীরে বাড়ে বলে টবে চাষ করা খুব সহজ। এরা প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০০ বছরে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। টবে এরা বাড়ে ১০ বছরে মাত্র ছয় ইঞ্চি। কাণ্ড শিরাবহুল থামের মতো। কাঁটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র। অ্যারিজোনা ও দক্ষিণ-পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এদের।
c.senilis এই জাতের ক্যাকটাস সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এরা ‘ওল্ড ম্যান ক্যাকটাস’ নামে পরিচিত। বাড়ে খুব ধীরে। ছোট অবস্থা থেকে স্তম্ভাকার পর্যন্ত দেখতে খুবই সুন্দর। এরিওলে লম্বা লম্বা সাদা রোম ও কাটা বের হয়।
c.peruvianas বাড়ি বা ক্ষেতের বেড়া হিসেবে ভালো। এজন্য এদের হেডজু ক্যাকটাস বা বেড়ার ক্যাকটাস বলে। কাণ্ড মোটা ও স্তম্ভকার। বাড়ন্ত অংশ গাঢ় সবুজ। পরে রঙের উজ্জ্বল্য কমে যায়। শিরা পাঁচ থেকে আটটি। দুটি এরিওলের মধ্যে ফাঁকা এক থেকে তিন সেন্টিমিটার। বাড়ন্ত অংশ রোমে ঢাকা । এরিওলের মাঝের কাঁটা সবচেয়ে বড়। কাণ্ডের নিচের অংশে ফুল ফোটে। ফুল বড় হলেও অন্যান্য প্রজাতি থেকে ছোট।
c.elephantidens মেক্সিকো শহরের পাশের উর্বর তৃণভূমিতে জন্মে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বলিষ্ঠ টিউবারকিউলসহ স্কুল চেহারা। এলিফ্যান্টিডেনাসের ফুলগুলো দেখতে গাঢ় গোলাপি, কাঁটাগুলো লম্বায় ও ব্যাসে এক নয়। কাটার আকৃতি ও বর্ণ হাতির শুড়ের মতো; আর এ কারণেই এই প্রজাতির নাম ‘এলিফ্যান্টিডেনাস’। এরা মাটির হিউমাস ও অনেক পানি পছন্দ করে। টবে এদের জন্য মাটি তৈরি করার সময় বেশি পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা দরকার।
e.grusonii হালকা সবুজ রঙের কাণ্ড। ছোট অবস্থায় গোলাকার। বয়স বাড়লে লম্বা হয়ে যায়। ফুল রং হলুদ।
e.micromeris অত্যন্ত বাহারি জাতের ক্যাকটাস। সাদা কাঁটাগুলো ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট। কাণ্ড বর্তুলাকার। ব্যাস ৬৫ সিন্টিমিটার। ফুল সাদা কিংবা হালকা গোলাপি। এরা খুব রোদ পছন্দ করে।
f.latispinus শৌখিন চাষিদের অত্যন্ত প্রিয় ক্যাকটাস। শিরা ১০ থেকে ১৪টি। ফুল গোলাপি, আবার বেগুনিও হয় ।
g.minhanovichii খর্বাকৃতির ক্যাকটাস। এরিওলের নিচের চিবুক উন্নত নয়। রঙ হালকা লাল । ফুল ঘণ্টাকৃতি লাল। এরা রুবি বল নামেও পরিচিত। কমলা, হলুদ ও বাদামি রঙের জাতও আছে এর। রঙিন ক্যাকটাস হিসেবে এগুলো খুব জনপ্রিয়। এর শরীরে সবুজ অংশ নেই বলে খাদ্য তৈরি করতে পারে না। সেজন্য কলম ছাড়া গাছ করা যায় না। মা , কাণ্ড খাড়া ও লতানো। শাখাবহুল। বাড়ন্ত অংশ লাল। এরিওল লম্বা ও রেশমি। কাঁটা পাঁচ থেকে আটটি। পাপড়ি লাল । নিচের দিকটা সবুজ।
l.silvestrii আগে chamaecereus silvestrii নামে পরিচিত ছিল। এ বলা peanut cactus হয়। কাণ্ডের একেকটি খণ্ড দেখতে চিনা বাদামের খোলার মতো। বাড়ন্ত অংশ বেশ সুচালো। শিরা অগভীর। এরিওলে চুলের মতো সরু কাটার গুচ্ছ থাকে। হালকা সবুজ রঙের কাণ্ড বেশ সুন্দর দেখায়। দ্রুত বাড়ে। কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হলে গাছ ভালো হয়। হালকা সব রঙেরও এদের একটি জাত রয়েছে।
সাধারণ জনপ্রিয় প্রজাতির ক্যাকটাস n.wagenknetchii এর কাণ্ড স্তম্ভাকার। উচ্চতা ৩০ সেন্টিমিটার। শিরা ১১ থেকে ১৭। জেমলোক্যালিসিয়ামের মতো চিবুক আছে। ফুল গোলাপি। ফুল দুই সপ্তাহ তাজা থাকে।
n.leninghausii লম্বা কাণ্ড। শিরা ৩০টি। এরিওলে কাটা থাকে ১৮ থেকে ২৫টি। ফুল হলুদ রঙের হয়। নিচের পিঠ ফিকে সবুজ। এরা ছায়া পছন্দ করে। এই জাতের ক্যাকটাস অন্দমহলের সৌন্দর্য বাড়ায় অনেক গুণ।
0.denegrii দেখতে অনেকটা হাতিচোখ টিউবারকিউল পাতার মতো। কাঁটা সোজা নয় এবং বেশি দিন তা থাকেও না। ফুল হয়। সহজে এদের চাষ করা যায়।
ছোট জাতের ক্যাকটাস S.glomeriseta। কাটার রঙ সুন্দর। ছোট অবস্থাতেই ফুল দেয়। বলা হয় এরা। বলিভিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রজাতি।
এদের প্রায় সব ক্যাকটাস কাঁটাময় ও পাতাহীন। প্রকারভেদে ছোট ও বিশালকর উদ্ভিদ। কাণ্ড শাখায়িত, শাখাহীন, গোলাকৃতি, চ্যাপ্টা, কোণাকার, গিঁটযুক্ত বা মিরাদারা। অনেক ক্যাকটাসে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, ফুল হয়। আসলে কাঁটা রূপান্তরিত পাতা বা শাখা মাত্র। অধিকাংশ ক্যাকটাসের উৎপত্তিস্থান উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মরু অঞ্চলে। তবে আর্দ্র নিরক্ষীয় অঞ্চলে বা নাতিশীতষ্ণ অঞ্চলেও বহু ক্যাকটাসের উৎপত্তি হয়েছে। গণে প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ১৫০।(১)
তথ্যসূত্র:
১ শেখ সাদী, উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ১১৪-১১৮।
২ . বালাইলাল জানা: ক্যাকটাস ও ফুলচাষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তকপর্ষৎ, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ মার্চ ১৯৮৮, পৃষ্ঠা, ১৪৬-১৪৭।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।