অড়হর ডাল (বৈজ্ঞানিক নাম: Cajanus cajan) মুখের কান্তি উজ্জ্বল করে। আয়ুর্বেদ মতে, এই ডাল কষায়-মধুর, রস, শরীর শীতল করে, রুক্ষ, লঘু, মলরোধ করে, বায়ুজনক, মুখের কান্তি উজ্জ্বল করে বা বর্ণপ্রসাদক। এই ডাল কফ, পিত্ত ও রক্তের দোষ নাশ করে।
এই ডাল হজমও হয় তাড়াতাড়ি। লাল অড়হর ডালও পাওয়া যায়। এই ডাল হালকা, মলরোধ করে, তীক্ষ্ণ তথা উষ্ণ। খিদে বাড়িয়ে দেয়, কফ, বিষ, রক্তবিকার, চুলকুনি, কুষ্ঠ, পেটের ভেতরের কৃমি দূর করে।
এমনিতে দু-রকমের অর্থাৎ হলুদ ও লাল অড়হর ডাল পথ্য হিসেবে ভাল, কিছুটা বাত বৃদ্ধি করে, কৃমি ও ত্রিদোষ অর্থাৎ বাত, কফ, পিত্ত নাশ করে। অর্শ ও বায়ুগোলক বা পেটের টিউমার রোগেও উপকারী।
হাকিমি বা ইউনানি মতে এই ডাল বিষ নাশক। অড়হর পাতা অর্শ নাশক। এই ডাল খেলে পেট ফাঁপে ও বায়ু হয়। পিত্তের জন্যে যে পায়খানা তাতে এই ডাল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
এই ডাল কফ, রক্তের দোষ ও বিষক্রিয়া নষ্ট করে। হাকিমি মতে এর পাতার সঙ্গে নিম পাতা খেলে অর্শ রোগের উপশম হয়। এইভাবে অড়হরের পাতা খেলে খিদে বেড় যায় এবং মূত্রের ব্যাধিতেও উপকার পাওয়া যায়। অড়হরের পাতা পুড়িয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বীর্য স্খলন কমে যায়।
অড়হর ডালের আরও কয়েকটি গুণ:
১. এই ডাল খেলে শ্রবণশক্তির দোষ সারে, পিপাসা মেটে— শরীরে সব রকমের জ্বালা সারে।
২. আগেই বলা হয়েছে এই ডাল রুক্ষ। দই বা দুধ দিয়ে রান্না করলে এই রুক্ষতা নষ্ট হয়।
৩. এই ডাল জলে পিষে একশিরা রোগে প্রলেপ লাগালে রোগ কমে।
৪. অড়হরের শিকড় ঘষে নিয়ে ছানির ওপর দিলে উপকার পাওয়া যায়।
৫. পাতা সেদ্ধ করে জল দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যথার উপশম হয়।
৬. জন্ডিস রোগীর পক্ষে অড়হরের পাতা খাওয়া বা পাতা বেটে নিয়ে তার রস খুবই উপকারী।
৭. এই ডালে ঘি মিশিয়ে খেলে আর বায়ুকারক থাকে না।
৮. এই ডাল পুষ্টির দিক থেকে ছোলার ডালের চেয়ে কম হলেও এই ডাল ত্রিদোষ নাশক (কফ, বায়ু ও পিত্ত নাশক)।
৯. অড়হরের পাতার রসে ঘি মিশিয়ে পান করলে রক্তপিত্ত সারে- নাক, মুখ থেকে রক্তপড়া বন্ধ হয়।
১০. অড়হরের পাতা আগুনে পুড়িয়ে সেই ছাই-এ টক দই মিশিয়ে লাগালে চুলকুনি সারে।
১১. অড়হরের পাতা ও দূর্বা ঘাসের রস একসঙ্গে মিশিয়ে নস্য নিলে আধকপালে মাথাব্যথা সেরে যায় ।
১২. অড়হর ডাল পিষে জল মিশিয়ে খেলে সিদ্ধির নেশা ছুটে যায়।
এই ডাল অবাঙালি মহলেই বেশি প্রচলিত। চাপ চাপ অড়হর ডাল রান্না করে তাতে হিং ও আস্ত জিরে ফোড়ন দেওয়া হয়। ওপর থেকে দেশী ঘি ঢেলে রুটি দিয়ে খাওয়া হয়। দক্ষিণ ভারতে এই ডাল দিয়েই সম্বর বা টক ডাল তৈরি করা হয় এবং পরিবেশন করা হয় ধোসা, ইডলি বা উত্থাপমের সঙ্গে। গুজরাতে এই ডালের পুর দিয়ে তৈরি করা হয় ‘পুরন পোলি’ বা পুর ভরা মিষ্টি কচুরি।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা, ৭০-৭১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।