ভূমিকা: মাঝারি আকন্দ বা পাহাড়ি আকন্দ হচ্ছে এপোসিনাসি পরিবারের ক্যালোট্রপিস গণের নাম একটি উদ্ভিদ। পাহাড়ি আকন্দ হচ্ছে এক প্রকারের ঝোপ ও গুল্ম জাতীয় ছোট ধরনের ওষধি গাছ।
বিবরণ: মাঝারি আকন্দ খাড়া, বীরুৎ বা ছোট গুল্ম। কাণ্ড গোড়া থেকে বহু শাখা বিন্যাসিত। কচি অংশ পশমতুল্য-ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ০.৮-১.৫ সেমি লম্বা, তুলাতুল্য-ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, পত্রফলক ডিম্বাকার বিবল্লমাকার, ৯-১৮ X ৫-৯ সেমি, পুরু, মসৃণ, কচি অবস্থায় অঙ্কীয় পৃষ্ঠ তুলাতুল্য-ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, মধ্যশিরা স্থূলাকার, শীর্ষ ঈষৎ তীক্ষ্মাগ্র, নিম্নাংশের দিকে ক্রমান্বয়ে সরু, নিম্নাংশ কীলকাকার, পার্শ্ব শিরা ৬-৭ জোড়া।
ফুল রক্তিমাভ, যৌগিক ছত্রমঞ্জরীতে সজ্জিত, পুষ্পদন্ড অনূর্ধ্ব ২ সেমি লম্বা, ঈষৎ শাখা বিন্যাসিত, পুষ্পবৃন্তিকা ২.০-২.৩ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র রৈখিক, ৫-৭ মিমি লম্বা, বহির্দেশ সূক্ষ্মভাবে পশমতুল্য-ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। দলমণ্ডল খন্ড ডিম্বাকার-বল্লমাকার, সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, ১.০-১.৫ x ০.৫-০.৭ সেমি, পুরু, খাড়া, উপরিভাগ রক্তিমাভ, প্রান্ত তরঙ্গিত। কিরীটীয় শল্ক পাঁচটি, গ্রন্থিল, পুংকেশরীয় স্তম্ভ লগ্ন ও দৈর্ঘ্যে পুংকেশরীয় স্তম্ভের চেয়ে খবর, শীর্ষ উভয় পার্শ্বে দুইটি স্থূলাগ্র কর্ণসদৃশ অভিক্ষেপ বিশিষ্ট দ্বি-খন্ডিত, মূলীয় দলপুট আকস্মিকভাবে ভিতরের দিকে বক্র, রোমশূন্য, সূক্ষ্মভাবে ঘন সিলিয়াযুক্ত। পরাগধানী পাতলা ঝিল্লিসদৃশ শীর্ষ বিশিষ্ট, পলিনিয়া আয়তাকার-বল্লমাকার, বিলম্বী, প্রতি পরাগধানী কোষ্ঠে একল। কপাস্কেল গাঢ় বাদামি, ২-কোষী। ফলিক্যাল দেখা যায় না। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে এপ্রিল থেকে আগষ্ট মাসে।
মাঝারি আকন্দের ক্রোমোসোম সংখ্যা জানা নেই।
চাষাবাদ ও আবাসস্থল: সড়কের কিনারা এবং তৃণভূমি। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, পূর্ব ভারত ও নেপাল। বাংলাদেশে ইহা কদাচ চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর জেলায় এবং মধুপুরের শাল বনে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: মাঝারি আকন্দের কাণ্ড থেকে এক ধরনের সূক্ষ্ম তন্তু পাওয়া যায়। বীজ থেকে প্রাপ্ত ফ্লস ভারতীয় উপমহাদেশে বালিশ তৈরীতে সালমালিয়া কটন এর প্রতিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের বাকল পরিবর্তন সাধক পদার্থ, বলকারক, খিচুনীনাশক, কফ নিঃসারক এবং কোষ্ঠবর্ধক। দুগ্ধবৎ নির্যাস কুষ্ঠরোগের উপশমকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মূলের বাকল কঠিন আমাশয়ে অত্যন্ত কার্যকরী। গাছের জলজ শুরা জাতীয় দ্রবণ এবং চূর্ণ ব্রংকাইটিস এবং আমাশয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অল্পমাত্রায় সেবন করা হলে গাছের সমগ্র অংশেরই পরিবর্তন সাধক গুণাবলী আছে। আকন্দের গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে, বাঙ্গালী ও আদিবাসি উভয়েই শোথ এবং বাতের ব্যথার জন্য এর তাজা পাতা শুষ্ক উষ্ণ সেঁক হিসেবে প্রয়োগ করা হয় বলে জানা গেছে। (Rahman and Wilcock, 1995)। গাছের পাতার রস সদ্য হওয়া ক্ষতে জীবাণুনাশক হিসেবেও প্রয়োগ করা হয়। ভারতে এর পাতা হতে “বার” নামক প্রমোত্ততাকারক শুরা তৈরী হয় (Santapau and Irani, 1962)। ভারতে পাঠানরা গাছের মূল দাতন হিসেবে ব্যবহার করে এবং ইহা দাঁত ব্যথা কমায় বলে কথিত আছে (Watt, 1889)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ষষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মাঝারি আকন্দ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে প্রজাতিটির সংকটের কারণ ও আবাসস্থল বিনাশ এবং বর্তমান অবস্থায় এটির তথ্য সংগৃহীত হয়নি (NE), তবে মনে হয় বিরল। বাংলাদেশে এটিকে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং বর্তমানে প্রস্তাব করা হয়েছে যে মাঝারি আকন্দ ইন-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম আতিকুর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ০৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৩৬-২৩৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।