ভূমিকা: পান কর্পূর (বৈজ্ঞানিক নাম: Clausena excavata) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
পান কর্পূর-এর বর্ণনা:
সুগন্ধি গুল্ম, ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু, শাখাপ্রশাখা বেলনাকার, সামান্য রোমশ থেকে ধূসর-রোমাবৃত, কদাচিৎ গ্রন্থিল-রোমশ। পত্র সচূড় পক্ষল, ২০-৩০ সেমি লম্বা, পত্রবৃন্ত এবং কচি পত্রক রেশমী রোমশ, পত্রক ১৫-৩০টি, অর্ধপ্রতিমুখ বা একান্তর, ডিম্বাকার, ডিম্বাকার আয়তাকার থেকে বল্লমাকার, ২-৭ x ১-৩ সেমি, গোড়া তির্যক এবং কীলকাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র বা দীর্ঘাগ্র, প্রান্ত অখন্ডিত বা সামান্য দপ্তর, পত্রবৃন্ত খাটো, প্রায় ৫ মিমি লম্বা, গৌণ শিরা ৪-৭ জোড়া, উপরিভাগ অনুজ্জ্বল, নিম্নভাগ স্পষ্ট।
প্যানিকল শীর্ষক, ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পুষ্প বৃন্ত খুবই খাটো, প্রায় ১ মিমি লম্বা, রোমশ। পুষ্প ৪-অংশক, সাইমে উৎপন্ন। বৃত্যংশ ৪টি, ডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র বা স্থূলা, প্রায় ১ মিমি লম্বা, সিলিয়াযুক্ত।
পাপড়ি প্রশস্ত উপবৃত্তাকার, অবতল, স্থূলাগ্র ৩.০-৪.৫ x ২ মিমি, স্বল্প স্বচ্ছ গ্রন্থিযুক্ত, ফিকে সবুজ থেকে হলুদাভ-সাদা। পুংকেশর ৮টি, একান্তর ভাবে খাটো এবং লম্বা, পুংদন্ড ২.০-৩.৫ মিমি লম্বা, প্যাপিলাযুক্ত বা মসৃণ, পরাগধানী উপবৃত্তীয় বা অর্ধহৃদপিন্ডাকার, সর্বমুখ, গাইনোফোর বালির ঘড়িআকৃতির, মসৃণ, প্রশস্ত বলয় থেকে প্রায় ১ মিমি লম্বা, শীর্ষ প্রায় ১ মিমি প্রশস্ত।
গর্ভাশয় ডিম্বাকার বা অর্ধগোলাকার, রোমাবৃত, ৪-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড বেলনাকার, স্থূল, সূক্ষ্মাগ্র, ১.৮ মিমি লম্বা, মসৃণ, গর্ভমুন্ড ক্ষুদ্র, অর্ধমুন্ডাকার, কদাচিৎ গর্ভদন্ড থেকে প্রশস্ত, প্রত্যেক প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ২টি ।
ফল আয়তাকার বেরী, ২০ মিমি পর্যন্ত চওড়া, অপরিণত অবস্থায় সবুজাভ-সাদা, পরিপক্ক অবস্থায় গোলাপী, ১ বীজী। বীজ আয়তাকার, বৃহৎ।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
চিরহরিৎ, ঝোপ এবং গ্রামের চারিদিকে বিশৃঙ্খল এলাকা, সর্বোচ্চ ১৫০০ মিটার উচ্চতায়, যেখানে এই প্রজাতি বড় গাছের নিচে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ সেপ্টেম্বর-নভেম্বর। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
পান কর্পূর-এর বিস্তৃতি:
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, দক্ষিণ তাইওয়ান, ফিলিপাইন এবং নিউ গিনি। বাংলাদেশের সিলেট এবং চট্টগ্রাম জেলার বনাঞ্চল থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
পেশীর ব্যথায় পত্রের রস প্রয়োগ করা হয় এবং মূল সিদ্ধ ক্বাথ ম্যালেরিয়াজনিত রোগে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদ উত্তেজনানাশক, টনিক এবং সঙ্কোচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নতুন কাবাজোল অ্যালকালয়েড খরগোশের লোহিত কণিকা জমাটবদ্ধকরণে বাধাদানের কারণে কার্যকরভাবে সঠিক রাখে (Ghani, 2003). চূর্ণ পাতা বা মূল ক্ষতে প্রলেপ দেয়া হয়, নাকের আলসারেও, বা কখনো চোয়ালেও।
পাতা সিদ্ধ ক্বাথ শিশু জন্মের পর নেয়া হয়। পাতা পতঙ্গনাশক (van Valkenburg and Bunyapraphatsara, 2002). পাতা এবং ছোট শাখা কারী সুগন্ধিতে ব্যবহৃত (Hajra et al., 1996).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
চীনে প্যারালাইসিস রোগে পাতার প্রলেপ ব্যবহৃত হয়। মালয়েশিয়ায় পেটের সমস্যায় পত্র ব্যবহৃত হয়। জাভায় কাঠ কুড়ালের হাতল তৈরীতে ব্যবহৃত। মূল সদৃশ কান্ডের শুষ্ক চূর্ণ কোল উপজাতীয়রা দন্ত ক্ষয়ে ব্যবহার করে (Kirtikar et al., 1935).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পান কর্পূর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে এটা সংকটের কোনো সম্ভবনা নেই ও বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে পান কর্পূর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি natureloveyou.sg থেকে নেওয়া হয়েছে।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।