ভূমিকা: দুধসর গাছের প্রচলিত বাংলা নাম মনসা বা সেহুন্দ মনসা বা সেন্দ মনসা বা কাঁটা মনসা। সমগ্র পৃথিবীতে ইউফরবিয়া গণের প্রায় ৮০০টি প্রজাতি আছে; এটি একটি পুজার বৃক্ষ, ভারতের বহু স্থানে এমন কি সিকিম ও ভুটানেও এটি পাওয়া যায়; বাংলাদেশে পলিমাটিতে এর বাড় বৃদ্ধি যেমন, তেমনি পাথরে ও কাঁকুরে মাটিতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে।[১]
দুধসর বা সেন্দ মনসা-এর বিবরণ:
গুলা বা ছোট বৃক্ষ, প্রায় ৫ মিটার উঁচু, পর্ণমোচী, সামান্য রসালো, মূলীয় অংশ কন্টকিত। কান্ড ও শাখা সন্ধিযুক্ত নয়, পাদদেশ গোলাকার বা ৫ কোণাকৃতি, কাটার বর্ম ৫ সারিযুক্ত, তরণ শাখা প্রায় ১৫ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, কাটার বর্মের মধ্য খাঁজযুক্ত, কাটার বর্ম ২-৩ সেমি দূরবর্তী, কাঁটা জোড়াবদ্ধ, ২ মিমি লম্বা, বাদামী বা কালো, স্থায়ী।
পত্র একান্তর, ৭-২৫ x ২-৬ সেমি, বিডিম্বাকার থেকে সরু বিভল্লাকার, শীর্ষ স্থূলাগ্র বা গোলাকার, মূলীয় অংশ সরু, প্রান্ত অখন্ড, রোমশ বিহীন, রসালো, শিরা অষ্পষ্ট, অঙ্কীয় পৃষ্ঠে মধ্যশিরা সুস্পষ্ট, বৃন্ত খাটো, ২-৪ মিমি লম্বা, উপপত্র কালো কন্টক সদৃশ, ৩-৫ মিমি, জোড়াবদ্ধ। মঞ্জরীপত্রাবরণ প্রতিটি কাক্ষিক সাইমে ৩টি, মঞ্জরীদন্ড যুক্ত, মঞ্জরীদন্ড ৬-১২ মিমি লম্বা, সায়াথিয়াল গ্রন্থি ৫টি, রসালো পুরু ও অখন্ড, ১ x ৩ মিমি।
পুংপুষ্প অনেক, মঞ্জরীপত্র রৈখিক, ৪ মিমি লম্বা, পুংকেশর ১টি, পরাগধানী ২ কোষী, পাদলগ্ন, অনুদৈর্ঘ্য বিদারী। স্ত্রী পুষ্প সবৃন্তক, গর্ভাশয় মসৃণ, প্রতিটি গর্ভপত্রে ডিম্বক ১টি, গর্ভমুন্ড ২ খন্ডিত। ফল ক্যাপসিউল, ১০-১২ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, রোমশ বিহীন। বীজ ২.৫ মিমি ব্যাস যুক্ত, গোলাকার, মসৃণ।[২]
বৈশিষ্ট্য:
গাছ বেশি উচু ও ডালপালাবিশিষ্ট্য হয় না, সোজা হয়ে ওঠে। এদের আকার গোল এবং গাছের গায়ে ও ডালে ছোট ছোট ঘন কাঁটা হয়। ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা মাংসল পাতার মাথার দিকটা এক থেকে দেড় ইঞ্চি চওড়া, কিন্তু গোড়ার অর্থাৎ বোঁটার দিকটা ক্রমশ সরু।
গাছ কাটলে বা পাতা ভাঙ্গলে প্রচুর পরিমাণ দুধের মতো আঠা বের হয়, এটা শুকিয়ে গেলে রবার সল্যুশনের মতো চিট হয়। ডাল বা শাখা কেটে পুতলেই গাছ হয়, ছোট ছোট হলুদ ফুল হয় বসন্তকালে। হিন্দিভাষী অঞ্চলে একে বলে সেহুন্দ উড়িষ্যার অঞ্চল বিশেষে একে বলে কন্টা সিজু।[১]
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2m = ৬০ (Datta, 1967).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার: ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জুন থেকে নভেম্বর। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি:
চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভুটান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের সব জেলায় পাওয়া যায়।[২]
চাষ পদ্ধতি:
সেন্দ মনসা বিশেষ যত্ন ছাড়ায় জন্মে থাকে। পলিমাটি , কাঁকর মিশ্রিত মাটি প্রভৃতিতে জন্মে থাকে এই গাছ। বসন্ত কালে ফুল ফোটে।
ব্যবহৃত অংশ:
ঔষধ হিসাবে ব্যবহত হয় মূল, কান্ড, শুকনো আঠা বা ক্ষীর এবং পাতার রস। এছাড়া পাতা দিয়ে তেল তৈরি করা যায়। নানা রোগের প্রথমিক চিকিৎসার জন্য খুবই কার্যকরী উদ্ভিদ এটি।[১]
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
তরু ক্ষীর রেচক এবং আঁচিল অপসারণকারী। মূল ও গোলমরিচ একত্রে সাপের কামড়ের স্থানে প্রয়োগ করা হয়। পাতা থেকে তরু ক্ষীর নিষ্কাশনের পর জোলাপে সংরক্ষণ করে খাওয়া হয়। বাহারি উদ্ভিদরূপে রোপণ করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
মালাক্কায় এই গাছের রস কর্ণপ্রদাহে, চীন দেশে এর পাতা রেচক রুপে ব্যবহৃত। ভারতের রাজপুতনার মরু-অঞ্চলের অধিবাসীরা পাতার রস কাশি নিরাময় ব্যবহার করে, এছাড়া চামড়ার ওপরও তারা এই রস প্রয়োগ করে (Caius, 1998)।
দুধসর বা সেন্দ মনসা-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দুধসর বা সেন্দ মনসা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটি হুমকির সম্মুখীন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে দুধসর বা সেন্দ মনসা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। তবে প্রস্তাব করা হয়েছে চাষাবাদ সম্প্রসারণ প্রয়োজন।[২]
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২০০-২০১।
২. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৩৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।