ডিকামালী শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণসম্পন্ন গুল্ম

নাড়ীহিংগু গাছটির বোটানিক্যাল নাম Gardenia gummifera Linn. f., এই প্রজাতিটি এবং Gardenia lucida Roxb. নামক প্রজাতি, এই দুটি গাছ থেকে যে নির্যাস বা আঠা সংগৃহীত ও ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাকে বলা হয় ডিকামালী এবং দুটি প্রজাতির নির্যাস একই গুণসম্পন্ন ও বাজারে ডিকামালী, ডেকামালী, ডেকমালী, নাড়ীহিংগু প্রভৃতি নামেই বিক্রয় হয়। এই প্রবন্ধে দুটি প্রজাতির পরিচিতি পৃথক পৃথক ভাবে দেওয়া হচ্ছে।

নির্যাস— উগ্রগন্ধযুক্ত, উত্তেজক, তীব্র কটুস্বাদযুক্ত ও বিশেষ ধরনের ক্ষতিকর স্বাদুগন্ধ সমৃদ্ধ। বহিঃপ্রয়োগে পচন নিবারক বা জীবাণুনাশক, পশু চিকিৎসায় মশা-মাছির প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি উদরশূল, অজীর্ণ, আধান (পেটফাঁপা), অপতন্ত্রক (হিস্টিরিয়া), গোল বা কেঁচো ক্রিমি, গিনিয়া ক্রিমি (Guinea worm), বাচ্চাদের দন্তোদগমের সময় অতিসার ও নাড়ীঘটিত রোগে ব্যবহার্য। এছাড়া এটি ঘর্মস্রাবকারক ও কফ নিঃসারক।

ডিকামালী-গাছের পরিচিতি

Gardenia gummifera Linn. f. মাঝারি ধরনের ঝোপঝাড়যুক্ত গাছ। এটি বিশেষতঃ মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায়। এছাড়া দক্ষিণ মহারাষ্ট্র, উত্তর কন্নড়তেও জন্মে। এই প্রজাতিটি ছাড়া অন্য একটি প্রজাতি (G. lucida) পাওয়া যায়। এই দুটি গাছের আঠা বা নির্যাসই ডিকামালী নামে খ্যাত এবং ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়। আঠার গন্ধ হিংয়ের মতো, অনেকটা বিড়াল মূত্রের গন্ধবিশিষ্ট। গাছের ছাল থেকে আঠা বেরোয় না। ছোট গাছের কোমল শাখা বা পত্র মুকুল ভাঙ্গলে পীতবর্ণের আঠা বেরোয়। এই আঠা পীতাভকৃষ্ণবর্ণের বড় বড় টুকরোর আকারে বাজারে ডিকামালী নামে পাওয়া যায়।

পত্রবহুল গাছ, পাতা প্রায় পেয়ারা পাতার মতো, তবে একটু বড় ও লম্বা, অনেকটা গন্ধরাজ ফুলের পাতার মতো। ফুল গন্ধহীন, ফোটার সময় সাদা, পরে পীতবর্ণের হয়ে যায়, দেখতে অনেকটা গন্ধরাজ ফুলের মতো, ১৩টি করে একসঙ্গে থাকে। ফল অনেকটা পেয়ারার মতো, এটি লোকে খায়। কাঠ হরিদ্রাভ-শ্বেত বর্ণের, প্যাকিং বাক্স ও অন্যান্য ছোটখাটো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন:  তিতাকুঞ্জ লতা গ্রীষ্মাঞ্চলে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ

Gardenia lucida Roxb. ছোট ঝোপঝাড়যুক্ত গাছ। পত্রবহুল, পাতা প্রায় নাড়ীহিংগুরই মতো। এ গাছটিও বিশেষ করে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে জন্মে। কাঠ হরিদ্রাভ শ্বেত ও শক্ত। বৎসরের একটা সময়ে গাছ থেকে সমস্ত পাতা ঝরে যায়। ফুল সন্ধ্যেবেলা ফোটে, প্রথমে সাদা পরে। হলদেটে হয়ে যায়; সুগন্ধযুক্ত, অনেকটা গান্ধাল রঙ্গনের (Ixora parviflora Vahl.) গন্ধের মতো। এই ফুল নিয়ে বনপ্রদেশের অধিবাসীদের মনের কথা হচ্ছে— মালাকার-পত্নী (মালিন) যেভাবে সৌরভযুক্ত ফুল নিয়ে বাজারে বসে লোকের মন আকৃষ্ট করে, তেমনি এর ফুলের সৌরভ বনবাসী তথা অন্যেরও ধ্যান আকর্ষণ করে। তাই বনপ্রদেশের অধিবাসীগণের কাছে এই গাছটির আদরের নাম ‘মালণ’-মালিন থেকে মালণ হয়েছে। ফল নাড়ীহিংগুরই ফলের মতো, এটিকে লোকে খায়। পাতায় জীবাণুনাশক ক্ষমতা আছে। এটির কোমল শাখা ও পত্রমুকুল ভাঙ্গলে হলদে আঠা বেরোয় এবং ডিকামালী নামে বাজারে পাওয়া যায়। নাড়ীহিংগু ও মালণ এই দু’টি গাছের আঠা একই গুণসম্পন্ন এবং একই নামে (ডিকামালী, ডেকামালী, ডিকমালী প্রভৃতি) পরিচিত। নির্যাস দুর্গন্ধযুক্ত।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ১৬৭-১৭০।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!