আশশেওড়া বা মটকিলা গাছ চিরহরিৎ ছোট ঔষধি উদ্ভিদ

আশশেওড়া

বৈজ্ঞানিক নাম: Glycosmis pentaphylla. সমনাম: Glycosmis arborea (Roxb.) A. DC. Glycosmis cochinchinensis Pierre ex Engler Limonia arborea Roxb. (1788), Lizonia pentaphylla Retz. (1788), বাংলা নাম: দাতমাজন, মটকিলা; বনজামির, কওয়াটুটি, মটমটি, আশশেওড়া, Aidali, Fatik, Ban Jamir. ইংরেজি নাম: Toothbrush Plant, Motar tree. আদিবাসি নাম: তাতিয়াং (মারমা), হতিজ্ঞিরা (চাকমা), সি মা সেরে (মারমা), মোয়াতন (গারো).
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants উপরাজ্য: Tracheobionta – Vascular plants অধিবিভাগ: Spermatophyta – Seed plants বিভাগ: Magnoliophyta – Flowering plants শ্রেণী: Magnoliopsida – Dicotyledons উপশ্রেণি: Rosidae বর্গ: Sapindales. পরিবার: Rutaceae – Rue family. গণ: Glycosmis Correa – glycosmis. প্রজাতি: Glycosmis pentaphylla (Retz.) A. DC.

ভূমিকা: আশ-শেওড়া বা মটকিলা বা বনজামির বা দাঁতমাজন (বৈজ্ঞানিক নাম: Glycosmis pentaphylla) হচ্ছে রুটেসি পরিবারের গ্লাইকসমিস গণের ছোট বৃক্ষ। জঙ্গলে অযত্নে এই প্রজাতিটি দেখা যায়।

আশশেওড়া-এর বর্ণনা:

আশ-শেওড়া বা মটকিলা চিরহরিৎ গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ। এর উচ্চতা ১ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। শাখাপ্রশাখা কাষ্ঠল, বেলনাকার, মসৃণ, অপরিণত অংশ সূক্ষ্ম তামাটে রোমাবৃত।

পত্র বৃন্তক, পত্রবৃন্ত ২.৫-৫.৫ সেমি লম্বা, সাধারণত ৩-৫ পত্রক, কদাচিৎ ৭-পত্রক, পত্রক প্রতিমুখ এবং একান্তর, আয়তাকার-উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার থেকে বিবল্লমাকার, কদাচিৎ রেখাকারউপবৃত্তাকার।

পাতার আকার ৭-২০ X ২-৬ সেমি, চর্মবৎ, গোড়া কীলকাকার বা স্থূলা, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, দীর্ঘাগ্র, স্থূলাগ্র বা গোলাকার, সূক্ষ্মভাবে করাত দস্তুর বা কখনো অস্পষ্টভাবে গোলাকার দন্তর বা অণুদন্তর বা কদাচিত।

পাতার প্রান্ত অখন্ডিত, মসৃণ, গৌণ শিরা ১০-১৮ জোড়া, পত্রকবৃন্ত ৩-৮ মিমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক এবং শীর্ষক, প্যানিকল সদৃশ, মঞ্জরীদন্ড দীর্ঘায়িত, ১৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ধূসর বা তামাটে রোমাবৃত।

পুষ্প সাধারণত ঘন গুচ্ছাকার, অধিকাংশ ৫অংশক, প্রায় বৃন্তহীন, মঞ্জরীপত্রিকা ২টি, ডিম্বাকার, অক্ষাভিমুখে তামাটে-রোমশ, অক্ষমুখে মসৃণ, প্রান্ত সিলিয়াযুক্ত।

পাপড়ি ৫টি, প্রান্ত-আচ্ছাদী, উপবৃত্তাকার-ডিম্বাকার, ২.৫-৪.৫ x ২-৩ মিমি, শীর্ষ স্থূলা, নিম্নভাগ সরু, ক্রীমসদৃশ-সাদা, মসৃণ।

আরো পড়ুন:  চোকলা এশিয়াসহ বাংলাদেশ ভারতের চিরসবুজ বৃক্ষ

পুংকেশর ১০টি, প্রায় ৪ মিমি লম্বা, পুংদন্ড উপরিভাগে ক্রমশ চ্যাপ্টা, মসৃণ, পরাগধানী প্রায় ১ মিমি লম্বা, আয়তাকার, নিম্নভাগ হৃৎপিন্ডাকার, স্পষ্টভাবে গ্রন্থিলশীর্ষ।

গর্ভাশয় ডিম্বাকার-বেলনাকার বা কোণাকাকার, ২.৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা, নিকৃষ্টভাবে পাস্তুলার-গ্রন্থিল, সাধারণত ৫-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড কদাচিৎ স্পষ্ট।

তবে গর্ভমুন্ড কর্তিতা বা গোলাকার, অস্পষ্টভাবে খন্ডিত, কোষ একক ডিম্বকযুক্ত।

ফল বেরী, অর্ধগোলাকার, ১০.০-১৩.৫ মিমি চওড়া, ক্ষুদ্র উপবৃদ্ধিযুক্ত, পাকলে ক্রীম থেকে রক্ত লাল বা গোলাপী, ১-৩ বীজ। বীজ গোলাকার থেকে সমোত্তল, অর্ধআয়তাকার, সবুজ। [১]

এদের ফল পাকলে গোলাপি রং ধারণ করে।ফল মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। প্রতি থোকায় ২০-৫০ পর্যন্ত ফল থাকে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৬, ১৮[২]

আবাসস্থল:

সারেদেশের গ্রামীণ জঙ্গলে, রাস্তার দুই ধারে, জমির আইল, বাড়ির পেছনে, পুরনো দালানের ইটের খাঁজে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে, ঘন ঝোপের আড়ালে।

সর্বোপরি প্রায় সকল জায়গাতেই জন্মাতে, বেড়ে ওঠতে পারে এরা। কোনো যত্নের প্রয়োজন নেই এই গাছে। 

বীজ এবং অর্ধ পরিণত শাখা কলম দ্বারা চারার জন্ম হয়। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সারা বর্ষব্যাপী। চারা বীজ থেকেও জন্মায়।

বিস্তৃতি: দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ চীন এবং অষ্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।

আশশেওড়া-এর ঔষধ হিসাবে ব্যবহার:

ভারতীয় ঐতিহ্যগত ঔষধে উদ্ভিদটি ডায়রিয়া, কাশি, বাতজ্বর, রক্তশূন্যতা এবং জন্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাতার রস ব্যবহৃত হয় জ্বর, যকৃৎ পীড়া এবং কৃমিনাশকে।

পাতা আদার সাথে মিশ্রিত করে লেই তৈরী করা হয় যা চর্মরোগ এবং অন্যান্য চর্ম পীড়ায় ব্যবহৃত হয়। মূল সিদ্ধ কৃাথ মুখমন্ডলের প্রদাহে ব্যবহৃত হয় (van Valkenburg and Bunyapraphatsara, 2002).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

জাভায় মূল সিদ্ধ কৃাথ পিত্তাধিক্য আক্রমণে ব্যবহৃত। পাতা এবং মূল সিদ্ধ কাথ অন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।

ভিয়েতনামের লোকজ ঔষধে, থেতলাতো পাতা মহিলাদের সন্তান প্রসবের পর ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে পরামর্শ দেয়া হয়।

আরো পড়ুন:  সিভিট বাংলাদেশে সংকটাপন্ন দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃক্ষ

এছাড়া তাইওয়ানের লোকজ ঔষধে, চুলকানি, স্ক্যাব, উত্তেজনা এবং আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় (van Valkenburg and Bunyapraphatsara, 2002).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১oম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আশশেওড়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং আশশেওড়া বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে আশশেওড়া সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[৩]

তথ্যসূত্র:

১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১o (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭৬-১৭৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.  

৩. এম আমান উল্লাহ প্রাগুক্ত, প.  ১৭৬-১৭৭

Leave a Comment

error: Content is protected !!