বাগান সুরুযঘূর্ণি, সুরুযঘূর্ণি, হেলিওট্রপ,
বৈজ্ঞানিক নাম: Heliotropium arborescens L.
সমনাম: Heliotropium corymbosum Ruiz & Pav.; Heliotropium peruvianum L.
সাধারণ নাম: garden heliotrope,
বাংলা নাম: বাগান সুরুযঘূর্ণি, সুরুযঘূর্ণি, হেলিওট্রপ,
অন্যান্য নাম:
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
অবিন্যাসিত: Eudicots
অবিন্যাসিত: Asterids
বর্গ: Boraginales
পরিবার: Boraginaceae
গণ: Heliotropium
প্রজাতি: Heliotropium arborescens L.
পরিচিতি: বাগান সুরুযঘূর্ণি হচ্ছে Heliotropium গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। সাধারণত বাগানে লাগানো হয় বলে এদের এরকম নামকরণ করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium arborescens, এরা Boraginaceae পরিবারের সদস্য। আদিবাস পেরুতে, বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই সপুষ্পক উদ্ভিদ ২৫০ থেকে ৩০০ প্রজাতির আছে বলে জানা যায়। ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে সুরুযঘূর্ণি ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়।
সুগন্ধি ফুল হিসেবে সুরুযঘূর্ণির তুলনা নাই। প্রজাপতি, মৌমাছি, ভ্রমর এই কারণে আকর্ষিত হয়ে এর ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। অনেকটা ভ্যানিলার মত সুবাস এই ফুলের। অনেক আগের দিনে এই গাছ সুরুযঘূর্ণি ছাড়াও “চেরি পাই” গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল সুগন্ধির কারণে। চেরি পাইয়ের মত ঘ্রাণ থেকে এই নামকরণ করেছিলেন সেকালের দাদী, নানীরা।
বাগান সুরুযঘূর্ণি সৌন্দর্য আর সুরভিতে পরিপূর্ণ। হেলিওট্রপ গাছ মনে হয় অনবরত তার ফুলকে সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। ভোরে সূর্য উদয়ের সময় সূর্যের দিকেই নুয়ে থাকে এই ফুল। দেখে মনে হয় যেন সূর্য ওদের দেবতা, তাকে প্রণাম করছে দিনের শুরুতে। সারাদিন সূর্য যেদিকে ঘুরতে থাকে তারাও সূর্যকে অনুসরণ করতে থাকে। সন্ধ্যায় সূর্যের অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত তারা সূর্যের সঙ্গে পশ্চিম দিকে ঘুরে থাকে। রাতের অন্ধকারে আবার নিজেরাই পূর্ব দিকে ঘুরে আসে এবং সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করে।
বিবরণ: বাগান সুরুযঘূর্ণি গাছ সাধারণত ৪ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা গাঢ় সবুজ রঙের এবং একটু কুঁচকানো ধরনের হয়। ছোট ছোট অসংখ্য ফুল যখন দল বেঁধে থোকা হয়ে ফোটে তখন দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে, দেখে মন ভরে যায়। সাধারণত হেলিওট্রপের পাপড়ির কিনারে বেগুনী আর মাঝখানে শাদা মিশানো হালকা বেগুনী রঙের ফুল হয়। এ ছাড়াও গারো বেগুনী, লাল মিশ্রিত বেগুনী রঙের ফুল হয়। সুরুযঘূর্ণি গাছে জুলাই মাস থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ফুল ফুটতে থাকে।
চাষ পদ্ধতি: হেলিওট্রপ বা সুরুযঘূর্ণি অধিক তাপ ও আলোতে ভালো জন্মে। সকালের সূর্যের আলোতে এই গাছ তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। আলো-ছায়ায় ও এরা মোটামুটি ভালো জন্মায়। শীত প্রধান দেশেই এদের বসতি। সুরুযঘূর্ণি গাছ ছোট ঝোপের মত ও হয় আবার একটু লম্বাটে গাছের মত ও হয়। ঝোপ বানাতে চাইলে গাছ একটু বড় হলে উপরের ডাল ছেঁটে দিতে হয়। আর লম্বা গাছের মত রাখতে চাইলে নিচ থেকে ডালপালা ছেঁটে দিতে হয়। বীজ থেকে এর গাছ জন্মায় এবং গাছের ডাল কেটে লাগালেও গাছ হয়। এই গাছ টবে লাগিয়ে ঘরে যেখানে সূর্যের আলো বেশিক্ষণ থাকে সেখানে রাখা যায়। যখন ফুল ফোটে মিষ্টি ঘ্রাণে সারা বাড়ী মৌ মৌ করে।
ব্যবহার: যে সময় থেকে ফ্রেঞ্চ খাবার জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে সেই সময় থেকে ইউরোপিয়ান বাগান সুরুযঘূর্ণি ফুলের রস ফরাসী খাবারে খাবারের রং হিসাবে ব্যবহার করা হতো। দক্ষিণ ইউরোপে সুগন্ধি দ্রব্য বা পারফিউম তৈরির কাজে বাগান সুরুযঘূর্ণি ফুল ব্যবহার করা হতো। এখনো এই ফুল থেকে পারফিউম তৈরি করা হয়। কিছু প্রজাতির সুরুযঘূর্ণি বাগানের গাছ হিসেবে জনপ্রিয়। কিছু প্রজাতির সুরুযঘূর্ণিকে আমরা আগাছা বলেই জানি। বাগান সুরুযঘূর্ণি গাছ নানা রকম ঔষধি গুণে ভরপুর। উল্লেখ্য যে এদের বীজ বিষাক্ত।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।