পাচৌলি বা পচাপাতা উপকারী গাছ

পাচৌলি বা পচাপাতা-এর পরিচিতি ও গুণপনা

১. Pogostemon heyneanus Benth. (Syn.-P. patchouli Hook. f. non Pelletier): এই দেশি পাচৌলিটি পচাপাতা নামে বাংলায় পরিচিত। অত্যন্ত গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। সাধারণতঃ ২। ৩ ফুট লম্বা হয়। পাতা ডিম্বাকৃতি, প্রায় তুলসী পাতার মতো দেখতে, কিনারা খাঁজ কাটা, সামান্য রোমশ, পাতলা। লম্বা পুষ্পদণ্ডের উপর গোলাকারভাবে ছোট ছোট ফুল ফোটে। ফুলও অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। বীজ থেকে গাছ জন্মে। তবে কাটিং পদ্ধতিতেও সহজে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদটি বহিরাগত হলেও দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক চাষ হয়। এই উদ্ভিদটির পাতা থেকে পাচৌলি তেল অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। গাছের ডাঁটা ও মূল থেকেও অল্প তেল প্রস্তুত হয়।

গুণাগুণ

সমগ্র উদ্ভিদটি হজমকারক, বায়ুনাশক হজমকারক, বায়ুনাশক ও প্রস্রাবকারক জামাকাপড়ের মধ্যে শুকনো পাতা রেখে দিলে পোকামাকড়ের হাত পাওয়া যায়। পাতার গুঁড়ো হাঁচি উপশম করে। পাতার ক্বাথ সর্দি, কাসি ও হাঁপানিতে উপকারী। মূলের ক্বাথ শোথ রোগে ব্যবহার্য। মূল থেকে প্রস্তুত লোশন বাতরোগে উপকারী। পাচৌলি তেলে পাচৌলিন, পাচৌলি অ্যালকোহল, ইউজিনল প্রভৃতি থাকে ।

২. Pogostemon cablin Benth. (Syn. P. patchouli var-sauvis Hook. f.): Pogostemon গণের এ গাছটি থেকেও পাচৌলি তেল প্রচুর পরিমাণে তৈরী হয়। তাহলেও পচাপাতা বলে এটিকে বলা হয় না। অবশ্য প্রথমের দিকে এটিকে P. patchouli-এর একটি উপ-প্রজাতিই ভাবা হতো। যাই হোক না কেন, এটিও অত্যধিক সুগন্ধযুক্ত গাছ। ৩। ৪ ফুট লম্বা, বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। পাতা ডিম্বাকৃতি, খাঁজকাটা, সামান্য রোমশ, পাতার তলার দিকটা গ্লাণ্ড ডট থাকে। বীজ ও কাটিং উভয়ের দ্বারাই নতুন গাছের সৃষ্টি হয়।

আদি বাসস্থান নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকে এটিকে ফিলিপাইনস দ্বীপপুঞ্জের গাছ মনে করলেও, অনেকে আবার এটির আদি বাসস্থান ভারত বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।

গুণাগুণ

ভারতে এর প্রচুর চাষ হয় পাচৌলি তেলের জন্য । এই তেল সাজসজ্জার সুগন্ধি দ্রব্য করতে ও ঔষধ তৈরীতে কাজে লাগে। চন্দন তেলের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে পৃথিবী-বিখ্যাত আতর প্রস্তুত হয়। সাবান প্রস্তুতের জন্য এর ব্যবহার অপরিহার্য। নানাবিধ প্রসাধন দ্রব্যের সঙ্গে পাচৌলি তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদ্ভিদটির পাতা জলে ভিজিয়ে স্নান করলে বাতের ব্যথা কমে। পাচৌলি বা পচাপাতা তেল জীবাণুনাশক। পোকামাকড় এই তেলের গন্ধে পালায়। তাই পোকামাকড় নাশক ঔষধ তৈরীর কাজে এটি লাগে। পাতার সে বা পাতা ভিজানো জল মাসিক ঋতুস্রাবের গোলমালে ব্যবহৃত হয় । আরো নানাবিধ কাজে পাতা ও তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

আরো পড়ুন:  মুথা ঘাস বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৪০-২৪১।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি tropical.theferns.info থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Benutzer:Denis Barthel

Leave a Comment

error: Content is protected !!