বন জুঁই বা যুথি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার জনপ্রিয় আলংকারিক ফুল

ভূমিকা: জুঁই বা যুথি ( বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum auriculatum, ইংরেজি নাম: Jasmine) হচ্ছে Oleaceae পরিবারের Jasminum গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করে। এটি আকারে বেশি বড় হয় না।

বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum auriculatum Vahl. ইংরেজি নাম : Jasmine. স্থানীয় নাম: জুঁই, যুথি । জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots অবিন্যাসিত: Asterids বর্গ: Lamiales   পরিবার: Oleaceae  গণ: Jasminum   প্রজাতি: Jasminum auriculatum.

জুঁই গাছের বর্ণনা:

জুঁই এক ধরনের লতা বা আরোহী গুল্ম অথবা ভাইন। এটি একটি মধ্যপ্রসারি উদ্ভিদ। এদের কান্ড কিছুটা রোমশ থেকে কোমল রোমাবৃত থাকে এবং বৃত্তাকার হয়। পাতাগুলো যৌগিক, প্রতিটি পাতায় তিনটি বা কোনো কোনো পাতায় পাঁচটি করে পত্রক থাকে। পত্রকগুলো দৈর্ঘ্য ২.০ থেকে ৪.৫ ও প্রস্থ ১.০ থেকে ২.৫ সেমি হয়। পাতা দেখতে সরু উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকৃতি অথবা স্থুল ডিম্বাকার। পাতার ত্বক রোমশ থেকে কাগজের মতো মসৃণ। এদের শীর্ষ তীক্ষ্ণ থেকে গোলাকৃতি, নিম্নপ্রান্ত গোলাকৃতি, কিনারা অখন্ড, মধ্যশিরার উভয়পাশে প্রাথমিক শিরা ২-৩টি, পার্শ্বশিরা ১২ জোড়া, পত্রবৃন্ত ২-৫ মিমি লম্বা।

পুষ্পমঞ্জরী প্রান্তীয় অথবা সর্বশীর্ষের পাতার কক্ষে এবং সহায়ক কাক্ষিক বিটপ বিশিষ্ট, নিয়ত পুষ্পবিন্যাসবিশিষ্ট যৌগিক মঞ্জরী, উপছত্রমঞ্জরী, ২-৬ সেমি লম্বা, ১২ থেকে অসংখ্য পুষ্পবিশিষ্ট, পুষ্পবৃন্ত ১-২ মিমি লম্বা। বৃতির নল ১.৫-২.০ মিমি লম্বা, কোমল রোমাবৃত থেকে রোমশ, খন্ডক ৪-৫টি, গোলাকৃতি, তীক্ষ, ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, খন্ডকগুলোর পাদদেশ অবশিষ্ট বৃতির নলের সাপেক্ষে কিছুটা উথিত। দলমন্ডল রঙ্গনাকার, সাদা, সুগন্ধিময়, নল ১.০-১.৬ সেমি লম্বা, খন্ডক ৫-৭টি, সরু, তীক্ষ, ৭-৯ থেকে ২-৪ মিমি।

পুংকেশর ২টি, পুংদন্ডগুলো খর্বাকার, পরাগধানীগুলো অনুদৈর্ঘ্য বরাবর বিদারিত হয়। গর্ভাশয় দ্বি-প্রকোষ্ঠী, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ২টি, গর্ভদন্ড প্রান্তীয়, গর্ভমুণ্ড দ্বি-খন্ডিত। ফল বেরী, উপবৃত্তীয় থেকে বৃত্তাকার, দৈর্ঘ্য ৬-৮ ও প্রস্থ ৫-৬ মিমি, পরিপক্ক অবস্থায় বেগুনি কালো। [১]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ২৬ (Mukherjee, 1981).

জুঁইয়ের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

বীজ এবং কান্ডের সাহায্যে এর বিস্তৃতি হয়। এটি গ্রীষ্ম ও বর্ষার ফুল। অরণ্য, ঝোপ-ঝাড় এবং তৃণভূমিতে বা অনেকেই লাগিয়ে থাকে। সাধারণত জুঁই গাছে জুলাই মাসে চারা রোপণ করা হয়। কাটিং বা শাখা-কলম, দাবা-কলম (দুটি) অথবা মাতৃ উদ্ভিদ হতে শিকড়সহ পৃথক চারা বংশ বিস্তারের জন্য ব্যবহৃত হয়। গাছে ফুল উৎপাদন নির্ভর করে পাতা বা শাখা-প্রশাখা ছাঁটাইয়ের উপর। জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করতে হয়। ছাঁটায়ের ১৫ দিন আগে হতে জমিতে জলসেচ বন্ধ করতে হবে।

জুই গাছের বর্ধনশীল নরম কান্ড ও শাখায় পুষ্প মুকুল আসে বলে এদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট সার প্রয়োগ করা দরকার। গাছ ছাঁটাইয়ের পর জানুয়ারী মাসে একবার ও জুলাই মাসে আর একবার সার প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণত বসন্তকালের শুরু হতে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় হতে বিভিন্ন জাতের জুই গাছে ফুল ফুটিতে আরম্ভ করে এবং বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত ফুল ফোটা চলতে থাকে।[২]

বিস্তৃতি:

এটি ভারতীয় প্রজাতি। j. officinalis ইরান, উত্তর ভারত, চীনের প্রজাতি। পেনিনসুলার ভারত এবং থাইল্যান্ড। হেইনিগ (১৯২৫) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা থেকে ইহা লিপিবদ্ধ করেন। এছাড়াও নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা এই গাছ জন্মে থাকে।  

জুঁইয়ের ভেষজ গুণ:

ইহার পুষ্প ক্ষয়রোগে ব্যবহৃত হয়। শিকড় বিরেচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের লোধা আদিবাসীরা শিশুর এ আমাশয় চিকিৎসায় ইহার কান্ডের বাকলের ক্বাথ গোলমরিচের পেষ্টের সাথে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে। সাঁওতাল আদিবাসীরা মুখে বসন্ত রোগের ফলে সৃষ্ট দাগ দূর – করতে ইহার পাতা সরিষার তেলে ফুটিয়ে ঐ তেল  ব্যবহার করে থাকে।[১]

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  জুঁই বা যুথি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থল ধ্বংসের কারনে বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে জুঁই বা যুথি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি পুনরায় খুঁজে বের করার জন্য চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান চালাতে হবে। ইহার আবাসস্থলের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং মূল আবাসস্থলে প্রজাতিটিকে টিকে থাকতে সহায়তা করতে ইহার আবাসস্থলের সঠিক তত্তাবধান করতে হবে। ইহাকে সংরক্ষণের জন্য স্ব-স্থানে এবং স্ব-স্থানের বাইরে উভয় ধরণের সংরক্ষণ পদ্ধতিই অবলম্বন করতে হবে।[১]

তথ্যসূত্র:

১. রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪৪-৩৪৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১। আইএসবিএন 984-461-128-7

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg

আরো পড়ুন:  মাকড়শা হুড়হুড়ি উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে আলংকারিক বিরুৎ

Leave a Comment

error: Content is protected !!