বাঘনখী নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল জন্মানো গুল্ম

বাঘনখী প্রায় সর্বত্র জন্মে। তবে অঞ্চলভেদে কোথাও পতিত জমিতে, কোথাও রাস্তার ধারে কিংবা আবর্জনাপূর্ণ স্থানে অথবা সুড়কির স্তূপে জন্মে। উদ্ভিদটি অযত্নসম্ভূত এবং বর্ষজীবী। সারা বিশ্বের প্রায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি হয়ে থাকে। গাছটি সাধারণতঃ ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু হয়ে থাকে। পাতা বড় বড়, কোনটি ডিম্বাকৃতি, কোনটি-বা হৃৎপিণ্ডাকৃতি, কিনারা ঢেউ খেলানো। ফুল দেখতে অনেকটা তিলফুলের মতো, তবে আকারে কিঞ্চিৎ বড়, রঙ গোলাপী, পাপড়ির ভেতরের দিকটা সামান্য হলদে।

ফল কাঠের মত শক্ত, বোঁটা আছে, আয়তাকার, নিচের দিকে দু’টি বাঁকা কাঁটা থাকে, দেখতে বাঘের নখের মত, সেজন্যই গাছটির নাম বাঘনখী । বর্ষার সময় ফুল ও তৎপরে ফল হয়। বীজ থেকেই নতুন গাছ জন্মে। আকালের সময় গ্রামের লোকেরা এর পাতা রান্না ক’রে খেয়ে থাকেন ।

Martyniaceae পরিবারের Martynia annua Linn. হলো বাঘনখী, এর পূর্ব নাম ছিল Martynia diandra Glox., ইংরেজীতে একে Tiger Claw বলা হয় ।

বাঘনখী-এর গুণপনা

পাতা :—অপস্মার রোগে, ঘাড়ের কাছে যক্ষ্মা-গ্রন্থি হলে ব্যবহার্য। জলে পাতার রস মিশিয়ে কুলি করলে গলক্ষত সারে। পাতায় Chlorogenic acid আছে ।

ফল :— বোলতা বা বিছার হুলের দংশনে ফুলে যাওয়া অংশে ফল বেটে বা ঘষে লাগালে ফোলা ও যন্ত্রণা কমে। এটি প্রদাহনাশক ও রোগপ্রতিষেধক ক্ষমতা-সম্পন্ন । বর্তমানের রসায়নবিদ্‌গণ এই ফল থেকে একপ্রকার হালকা হলুদ রঙের তেল বের করতে সক্ষম হয়েছেন । এই স্বল্প উদ্বায়ী তেলে একটা অদ্ভুত গন্ধ আছে, অনেকটা অবশ্য আয়োডিনের মত মনে হবে। এই তেলে পামেটিক, স্টিয়ারিক, অ্যারাচিডিক, ওলিক ও লিনোলিক এসিড পাওয়া যায় ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৩০৪-৩০৫।

আরো পড়ুন:  নীল টেংরাকাঁটা ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Thingnam Girija

Leave a Comment

error: Content is protected !!