পুদিনা ভেষজ গুণসম্পন্ন বর্ষজীবী গুল্ম

পুদিনা (M. spicata) বর্ষজীবী ক্ষুপ, উগ্রগন্ধ বিশিষ্ট। মূল থেকে পুনরায় গাছ জন্মে। পাতা পুরু, কোমল, কিনারা কাটা কাটা, অগ্রভাগ সরু। গুচ্ছাকারে ফুল হয়। যত্নের সঙ্গে চাষ করা হয়। পাতার চাটনী এবং শরবত উপাদেয় খাদ্য ও পানীয়।

খাদ্য ও পানীয় এবং এর থেকে তৈল প্রস্তুতের জন্য পুদিনার বিভিন্ন প্রজাতির চাষ এদেশে হয়ে থাকে। পুদিনা থেকে প্রস্তুত তৈল nint oil নামে খ্যাত। এসব থেকে menthol পাওয়া যায় প্রায় সব প্রজাতির author মহামতি লিনিয়াস (Linn.) ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ : সমগ্র গাছ (গাছের কাথ, পাতার রস, তৈল প্রভৃতি)।

পুদিনা-এর অন্যান্য প্রজাতি

সমগ্র বিশ্বে প্রায় ২৫টি প্রজাতির পুদিনা (mint) পাওয়া যায়। তন্মধ্যে বেশ কয়েকটির যথা- Mentha arvensis, M. aquatica, M. longifolia, M. pulegium, M. incana, M. piperita, M. rotundifolia, M. spicata প্রভৃতি। এগুলো চাষ বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হয়ে থাকে। এই ভেষজটি বহিরাগত ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভারতে এসেছে। আয়ুর্বেদের প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এর হদিশ পাওয়া যায়নি। পুদিনার হাইব্রিড সহজেই তৈরী হয়। ভারত তথা বিশ্বের প্রায় সর্বত্র যে প্রজাতিটি পাওয়া যায়, সেটির নাম Mentha spicata; এটি পুদিনা বা পাহাড়িয়া পুদিনা নামে পরিচিত এবং এই প্রজাতিটি Mentha longifoliaMentha rotundifolia এর সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে। M. spicataM. aquatica-এর সংমিশ্রণে M. piperita প্রজাতিটির সৃষ্টি। Mentha aquatica-কে জলজ পুদিনা, M. longifolia কে জংলী পুদিনা বলে। সবগুলিরই সাধারণ নাম পুদিনা বা পোদিনা, ইংরেজীতে mint. যেসব প্রজাতি ভারতে জন্মে, সেগুলির সবই সর্বত্র পাওয়া যায় না। এর কিছু ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমালয়-সংলগ্ন স্থানসমূহে বেশি জন্মে, আবার কতকগুলি সমতলভূমিতে এবং কতকগুলি উভয় স্থানে জন্মে।

উপকারিতা:

বলকর, জীর্ণতার সহায়ক, বায়ুবিকারে উপশমক, তীক্ষ্ণ, শীতল, সুমিষ্ট গন্ধবিশিষ্ট, জীবাণু নাশক, সংকোচক, বিষণ্ণ, বমন নিবারক, প্রস্রাবকারক, জ্বরঘ্ন, আক্ষেপনিবারক কফনিঃসারক, ঋতুস্রাবকারক; এটি উদরশূল, অতিসার, আধমান, অরুচি, অগ্নিমান্দ্য, ক্রিমি, কাশি, হৃদ্দৌর্বল্য, হিক্কা, মূত্রকৃচ্ছতা, বমি, কষ্টার্তব, রজোরোধ, জ্বর ও জ্বরান্তিক দুর্বলতা, প্রসবান্তিক জ্বর, পাকস্থলীর প্রদাহ, কামলা, গলব্লাডার ও পাকস্থলীর ক্রিয়াবৈকল্য, ব্রঙ্কাইটিস, বাত প্রভৃতিতে ব্যবহার্য।

আরো পড়ুন:  বন কাঞ্চন দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

শিশুদের নানাবিধ কষ্টের লাঘব করেও গর্ভাবস্থায় বমি ও মূছা বন্ধ করে। বহিঃপ্রলেপে বাতের যন্ত্রণা ও মাথাধরা কমে এবং দুর্গন্ধযুক্ত ব্রণ সারে। এটিকে দিয়ে সুস্বাদু খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুত করা হয়। পাতার সঙ্গে অম্ল মিশিয়ে চাটনী উপাদেয় খাদ্য, এটি অরুচি নষ্ট করে, ক্ষুধা বাড়ায়। মুখ-দৌর্গন্ধে পাতার রস জলে মিশিয়ে কুলি করলে কাজ হয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৮৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!