পপি ফুলের মোসুমী চাষ, পরিচর্যা ও সংরক্ষণের পদ্ধতি

পপি ফুল অতীব সুন্দর শীতকালীন ফুল যে ফুলে মধু নেই। পপি মানে পোস্ত ফুল। মৌমাছি এই ফুলের আকর্ষণে ছুটে আসে এবং ফুলের অসংখ্য পরাগ গ্রহণ করে। পরাগায়নে সাহায্য করে থাকে। পপি বা আফিম ফুলের সৌন্দর্যে আলোকিত হয়ে ওঠে। সমতল অঞ্চলে অক্টোবর মাসে ও পার্বত্য অঞ্চলে মার্চ মাসে পপির বীজ স্থায়ী জমিতে বপন করতে হয়। কারণ চারা তৈরি করে তুলে লাগানোর সময় চারা মারা যেতে পারে। হালকা বেলে এবং দো-আঁশ মাটি পপি চাষের উপযোগী।

পপির জাত:

সাদা, লাল, চকলেট, গোলাপী রঙ এর সিঙ্গল ও ডবল পপি দেখা যায়। পপি বর্ষজীবী ও বহুবর্ষজীবী উভয় ধরণের হতে দেখা যায়। জাত হিসেবে অনেক জাতের যেমন— ফ্রেঞ্চ, ক্যালিফোর্নিয়া ইত্যাদি। পপি ফুলের গাছ ৫০-৬০ সেঃ মিঃ উচু হয়।

আইসল্যাণ্ড ও সার্লি নামে দুই জাতের পপি ফ্রেন্স পপির অন্তর্ভুক্ত। ফ্রেন্স পপির গাছ বেটে, পাতা কাটা কাটা, ফুলের বোঁটা রোম এবং ফুল সিঙ্গল ও ডবল। ক্যালিফোর্নিয়ান জাতের গাছ অপেক্ষাকৃত বড়, পাতা কাটা কাটা, ফুল উজ্জ্বল হলদে রঙ এর বেশ বড়।

পপি ফুল চাষের জমি প্রস্তুত:

পপির বীজ সমতল অঞ্চলে মার্চ মাসে এবং পার্বত্য অঞ্চলে অক্টোবর মাসে সরাসরি প্রস্তুতকৃত জমিতে বপন করতে হয়। পপির স্থায়ী বাগানের জমিতে সরাসরি বীজ ফেলতে হয় বিধায় জমি প্রস্তুত এক ধাপেই করতে হয়।  

ক. নির্বাচিত জমি লাঙ্গল বা কোদাল দিয়ে ৪/৫ বার হালকা গভীরভাবে কর্ষণ করে মাটিকে ঝুরঝুরে করতে হবে।

খ. আগাছা ইট পাটকেল, পাথর, আবর্জনা ইত্যাদি পরিষ্কার করে প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জায়গায় ২০০ কেজি পাতা পচা-সার বা গোবর সার ৬-১০ কেজি কাঠের ছাই, ২-৩ কেজি এস এস পি সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

গ. মাটির ধরন এটেল হলে সামান্য চুন মাটিতে মিশিয়ে নিলে ভালো হবে, তবে দোআঁশ মাটিতে চুন লাগবেনা।

ঘ. মাটি শোধনের জন্যে ১০০ বর্গ মিটার জায়গায় ৩৫ গ্রাম এলড্রিন এবং ২৫০ গ্রাম ব্রাসিকল ২০ সামান্য গুড়া সারের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

ঙ. মাটি প্রস্তুত হলে যত্ন সহকারে পপির বীজ সামান্য ছাই এর সাথে মিশিয়ে বপন করে মাটি সমান করে দিতে হবে।

চ. এই অবস্থায় কিছুদিনের মধ্যেই চারা গজাতে শুরু করলে পরবর্তী পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে।

পপি ফুলের পরিচর্যা ও যত্ন:

পপি ফুল পেতে ৩-৫ মাস সময় লাগবে। এই সময় কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নিতে হবে। যেমন—

ক. গাছের চারা ১৫-২০ সেঃ মিঃ উচু হলে গাছ যাতে বাতাসে নুয়ে পড়তে না পারে সেজন্য গাছে খুটি দিতে হবে।

খ. মাটি শুষ্ক হয়ে গেলে সামান্য পানি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে পানি যাতে সামান্য পরিমানেও কাঁদার সৃষ্টি বা জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

গ. পানি সামান্য বেশি হলেই জলচসা রোগ হতে পারে। তাই গাছের চারা অবস্থায় বা কুড়ি আসার সময় যাতে জল বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঘ. চারা অবস্থায় যেনো প্রখর রোদ না লাগে সেজন্যে কোন কোন সময় আচ্ছাদন দিতে হবে ।

ঙ. পপির শিকড় উপরের দিকে চলে আসে বিধায় কুড়ি ধরার সময় ৩-৪ সেঃ মিঃ উচু পরে চাপান সার দিতে হবে।

চ. মাসে মাসে সামান্য তরল সার দিতে হবে । তরল সার, গোশালার আবর্জনা, পাতা পচা সার ইত্যাদি এ গাছের জন্যে খুবই উপযোগী।

ছ. রোগ দেখা দেবার সাথে সাথেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে রোগ যাতে না হয় সে লক্ষ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রায়ই উত্তম।

পপি ফুল সংগ্রহ:

সুদৃশ্য খাঁজকাটা সামান্য পাতাসহ পপি ফুল সংগ্রহ করতে হবে। নিজস্ব ব্যবহারের জন্যে হলে সরাসরি গৃহে শয্যায় ব্যবহার করা যাবে। আর বাজারে বিক্রির জন্যে হলে চাহিদানুযায়ী ফুল সংগ্রহ পূর্বক বাজারে পাঠাতে হবে।

তথ্যসূত্র:

১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১১০-১১২। আইএসবিএন 984-461-128-7

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Kora27

আরো পড়ুন:  রজনীগন্ধা ফুলের ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ ও পরিচর্যা পদ্ধতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!