বর্ণনা: ছিটকি বা পানিছিটকি ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গণের অতিশয় শাখান্বিত গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ। এরা প্রায় ৫ মিটার উঁচু, বাকল পতন শীল, ধূসর-বাদামী, তরুণ শাখা, পত্র, পুষ্প বৃন্ত অণুরোমশ বা রোমশ বিহীন, হলুদ। পত্র, সোপপত্রিক, উপপত্র, তুরপুন আকার-ভল্লাকার, ০.৮-১.৫ মিমি লম্বা, দীর্ঘা, মূলীয় অংশ কর্তিতা, বাদামী, সবৃন্তক, ১.৪-৩.৫ মিমি লম্বা, কাগজবৎ, পত্রফলক উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার, ১৫-৩০ x ৬-১২ মিমি, শীর্ষ স্থূলা থেকে গোলাকার, মূলীয় অংশ কর্তিতগ্র, পার্শ্বীয় শিরা ৫-৯ জোড়া প্রগৌণ শিরা জালকাকার, রোমশ বিহীন। পুষ্প উভলিঙ্গ, প্রতি পর্বে ১-২টি স্ত্রীপুষ্প এবং একাধিক পুংপুষ্প।
পুংপুষ্প সবৃন্তক, বৃন্ত ৫-১০ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৫-৬টি, অসম, ০.৭- ১.৫ x ০.৫-১.২ মিমি, উপবৃত্তাকার থেকে বিডিম্বাকার, অখন্ড, চাকতি গ্রন্থি ৫ টি, শঙ্কবৎ, ব্যাস ০.৫ মিমি, পুংকেশর ৫টি, অসম, বাইরে ২টি মুক্ত খাটো, ভিতরের ৩টি যুক্ত, লম্বা, পুংদন্ড শক্ত, পরাগধানী ০৩-০.৫ মিমি লম্বা, অনুদৈর্ঘ্য বিদারী।
স্ত্রীপুষ্প: বৃত্যংশ ৩-৭ মিমি লম্বা, সরু, বংশ ৫-৬টি, ২-৩টি সারিবদ্ধ, অসম ১.৫-১.৮ x ০.৮-১.২ মিমি, দীর্ঘায়ত-উপবৃত্তাকার বা অর্ধ-গোলাকার, চাকতি গ্রন্থি ৫-৬টি, মুক্ত দীর্ঘায়ত বা বিডিম্বাকার, চ্যাপ্টা, গর্ভাশয় ৪-১২ কোষী, মসৃণ, আড়াআড়ি ১ মিমি, গর্ভদন্ড মুক্ত, শীর্ষ ২ খন্ডিত, খন্ড রৈখিক। ফল ক্যাপসিউল, গোলাকার, ব্যাস। ৪-৬ মিমি, মসৃণ কালো বা বেগুনি লাল । বীজ ত্রিকোণাকার, ১.৫-২.০ মিমি লম্বা, অস্পষ্ট জালকাকার, বাদামী । ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২৬ (Lemmens and Wulijarni-Soetjipto, 1991).
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: ছিটকি বা পানিছিটকি সৈকত নিকটবর্তী পানি প্লাবিত ভূখন্ড, গুলু ভূমি, পতিত জমি, মিশ্র চিরহরিৎ অরণ্য। বীজে বংশ বিস্তার। ফুল ও ফল ধারণ মার্চ-অক্টোবর।
বিস্তৃতি: আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, ফিলিপাইনস, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম । বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব দিক: ফল সঙ্কোচক, অঙ্গ স্ফীতি ও রক্তের পীড়ায় উপকারী, বাকল স্বাস্থ্য রক্ষাকারী ও রক্তপাতলাকারী। পত্র মূত্র বর্ধক, শীতলতা দানকারী, পাতার রস কপুরের সাথে মিশ্রিত করে পিল তৈরী করা হয় যা মাড়ির রক্তপড়া বন্ধ করে।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পাকা ফল থেকে ফিলিপাইনে কালো কালি তৈরি হয়। ইন্দোনেশিয়ায় কান্ড ও পাতার ক্বাথ তুলা কালো করতে ব্যবহৃত হয়। ভারতে মূল থেকে লাল রং তৈরি হয়। ভারতের কয়া ও কোন্দা রেডিস আদিবাসী সম্প্রদায় গবাদি পশুর আমাশয় নিরসনের জন্য পাতার লেই ব্যবহার করে। এই গাছ থেকে গুটিবসন্ত, সিফিলিস ও চোখে ক্ষত রোগের ওষুধ তৈরি হয় (Kirtikar et al., 1035; Rao and Henry, 1996)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ছিটকি বা পানিছিটকি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ছিটকি বা পানিছিটকি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭৮-৪৭৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।