অড়হর গুল্মের ভেষজ গুণ সম্পন্ন ডালজাতীয় শস্য গুল্ম by Dolon Prova - November 9, 2020March 4, 20210 LikeShareTweetPinLinkedIn ডালঅড়হরবৈজ্ঞানিক নাম: Cajanus Indicus ইংরেজি নাম: pigeon pea. স্থানীয় নাম: অড়হর ।জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Cajanus. প্রজাতি: Cajanus Indicus ভূমিকা: অড়হর (বৈজ্ঞানিক নাম: Cajanus Indicus ইংরেজি নাম: pigeon pea) হচ্ছে ফেবাসি পরিবারের কাজানুস গণের বর্ষজীবি সপুষ্পক গুল্ম। অড়হর চাষ করা হয় ডাল হিসাবে খাওয়ার জন্য। বিবরণ: অড়হর গুল্মজাতীয় শাখাপ্রশাখাযুক্ত উদ্ভিদ। এ প্রজাতি উচ্চতায় ৪ থেকে ৮ বা ১০ ফুট পর্যন্ত উচু হতে দেখা যায়। গাছ কাষ্ঠগর্ভ হলেও ডালগুলি নরম। সাধারণত একটি বৃত্তের তিনটি শাখাবৃত্তে এক একটি করে পাতা থাকে; পাতা লম্বায় ২-৩ ইঞ্চি, চওড়া আধ ইঞ্চিরও বেশী, সবুজ পাতার উল্টোপিঠ অপেক্ষাকৃত সাদা, ফুল হলদে, ফল আকারে ছোট কড়াইন শুটির মতো, কিন্তু একটু চ্যাপ্টা হয়, প্রত্যেক শুঁটিতে ৩-৫টি বীজ থাকে।[১] বিস্তার: কোন কোন প্রাচীন পুস্তকে অড়হরের গাছের বর্ণনা দেখা যায় ; এতে বোঝা যায় অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে এই ডালের চাষ হয়ে আসছে। ১৬৮৬ অব্দে মালাবার উপকূলখণ্ডে এর চাষ হয়। সাদা ও লাল দুই রকম অড়হরের চাষ ভারতের বোম্বাই প্রদেশে চাষ হয় এবং পরে তথা এর ভাল বীজ ভারতের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এর আদি নিবাস বোম্বাই, মাদ্রাজ, যুক্তপ্রদেশ, মায়ানমার, মহীশূর, বেরার, রাজপুতনা, মধ্যভারত, বাংলায় ও আসামে চাষ হয়। চাষাবাদ: মাঘ মাসে বৃষ্টি হলে অড়হরের জমিতে দেড় বার চাষ দিয়া মাটি আগা ও তৃণহীন করতে হবে। পরে কালবৈশাখীর প্রথম বৃষ্টিতেই বিঘা প্রতি সাড়ে ৫ সের বীজ বুনে চাষ ও মই দিতে হইবে। কিন্তু যদি ২ হাত অন্তর ২ থেকে ১টি করে বীজ দেওয়া হয়। গাছ পাতলা হলে ফল বেশী হবে। গাছ এক হাত উচু হলে আইল বেঁধে দিলে গাছ ভাল হয়। সমতল ভূমি অপেক্ষা আইলের গাছ ভাল হয়। আরো পড়ুন: খেসারি এশিয়ায় জন্মানো সহজলভ্য ভেষজ উদ্ভিদ বর্ষায় এই গাছের জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অড়হর ও ভুট্টা একসঙ্গে বোনা যায়। ভুট্টা পেকে গেলে অড়হর গাছ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যে এই গাছ বোনা হয়, তাকে মাঘী এবং আষাঢ় মাসে বোনা অড়হরকে চৈতালী অড়হর বলে। অড়হর মাদ্রাজে বেশী চাষ হয়। অড়হর বাংলাদেশে ফাল্গুন চৈত্র মাসে পেকে থাকে। জমির উর্বরতা অনুযায়ী ৭ মণ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মাটির পক্ষে কুমিল্লার অড়হরই শ্রেষ্ঠ। গাছের পরিচর্যা: অড়হর গাছে একরূপ পোকা ধরে সমস্ত ফসল নষ্ট করে দেয়। গাছগুলি ছোট থাকতে প্রজাপতি গাছের গায়ে ডিম পাড়ে ; সেই ডিম থেকে যে পোকা হয় তাহা গাছের ভিতর প্রবেশ করিয়া গাছের রস খায়। সুটি ধরলে সেই পোকাই তাহার ভিতর প্রবেশ করে ফল নষ্ট করে দেয়। যে জমিতে অড়হর চাষ করা হয়, অড়হর পাকার পর গাছগুলি ঐ জমিতে পুড়িয়ে দিলে এবং পতিত রাখিলে, অথবা অড়হরের সাথে ভূট্টার গাছ লাগালে পােকার হাত হতে রক্ষা পাওয়া যায়। অড়হরের গালা: উত্তরবঙ্গে ও আসামে গালা চাষের জন্য অড়হর চাষ করা হয়। তথাকার চাষীরা গালার পোকা অড়হর গাছে ছড়াইয়া দেয়। পোকাগুলি বংশ বিস্তার করিতে করিতে সকল গাছেই ছড়াইয়া পড়ে। গালার জন্য চাষ করতে হলে কুমিল্লার অড়হরই শ্রেষ্ঠ, কেননা তিন বৎসর গাছগুলি জীবিত থাকে। গালার জন্য লাগাতে হইলে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জমি উত্তমরূপে চাষ করে।[২] ভেষজ গুণ: এই প্রজাতিটির নানা রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। ঔষধার্থে ব্যবহার হয় এর পাতা, মূল ও বীজ। মুখের ক্ষত, কাসি, হাত পা জ্বালা করা, অরুচি দূর করতে বেশ উপকারি। তথ্যসূত্রঃ ১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৩৯। ২. ডা: শ্রীযামিণী রঞ্জন মজুমদার: খাদ্যশস্য, মি: বি ছত্তার, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৫১, পৃষ্ঠা, ৭৩-৭৫। LikeShareTweetPinLinkedIn