ভূমিকা: বুনো গোলাপ (বৈজ্ঞানিক নাম: R osa clinophylla, ইংরেজি: Wild Rose) হচ্ছে রোজেসি পরিবারের রোজ গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে জঙ্গলের উদ্ভিদ হিসেবে ঝোপ-ঝারে অযত্নে বেড়ে ওঠে। এই গুল্মটি অনেকে বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করার জন্য লাগিয়ে থাকে।
বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa clinophylla Thory, Red. Roses 1: 43 (1817). সমনাম: Rosa involucrata Roxb. ex Lindl. (1820). ইংরেজি নাম: Wild Rose of Bengal. স্থানীয় নাম: বুনো গোলাপ। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Edicots; বর্গ: Rosales; পরিবার: Rosaceae ; গণ: Rosa ; প্রজাতি: Rosa clinophylla
বর্ণনা:
বুনো গোলাপ বলিষ্ঠ গুল্ম প্রকৃতির। এই গুল্ম খাড়াভাবে উঠে কিছুটা লতানো দেখতে। এর শাখাপ্রশাখা ধনুকের ন্যায় বাকানো ও গুল্মের গায়ে চ্যাপ্টা কাঁটা আছে। পাতা ৫ থেকে ১০ সেমি লম্বা, পত্রক ৭ থেকে ৯টি, সামান্য বৃন্তক। পাতার দৈর্ঘ্য ১.৫-৩.১ ও প্রস্থ ০.৫-১.৫ সেমি। পাতার আকার দেখতে আয়তাকার থেকে উপবৃত্তাকার-বল্লমাকার, অর্ধসূক্ষ্মাগ্র থেকে স্থূলা, গোড়া গোলাকার বা স্থূলাকার।
বুনো গোলাপ গাছের পাতা কিনারে করাতের মতো সূক্ষ্ম কাঁটা থাকে, মধ্যশিরা নিচের দিক রোমশ, পত্রক-অক্ষ রোমশ বা অনেকটা মসৃণ, কখনো কন্টকিত, সাধারণত ১ জোড়া বা উপপত্রের নিচে, সোজা, চ্যাপ্টা, কন্টকিত, উপপত্র ছোট। পাতা আকারে ০.৫-০.৭ সেমি লম্বা, ঝালরের মতো দেখতে, সাধারণত পত্রবৃন্তলগ্ন। ফুল খাটো একল, কদাচিৎ কাক্ষিক এবং লম্বা। পুষ্পবৃন্তযুক্ত, মঞ্জরীদন্ড বলিষ্ঠ, পত্র থেকে অনেক ছোট, পুষ্পবৃন্ত ছোট, মঞ্জরীপত্র সর্বোচ্চ ১.৭ সেমি লম্বা, বাহিরের রেখা বল্লমাকার, ঘনভাবে ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত।
বৃতি নল গোলাকার বা ডিম্বাকার, ০.৫ থেকে ৭.৫ সেমি চওড়া, বহির্ভাগ বাদামী বা ধূসর মখমলসদৃশ, খন্ডক ১.২ থেকে ১.৭ সেমি লম্বা, বল্লমাকার বা ডিম্বাকার-দীর্ঘাগ্র, ভিতরে রোমশ, ফলে ক্ষণস্থায়ী। পাপড়ি দেড় থেকে তিন সেমি লম্বা, প্রশস্তভাবে বিডিম্বাকার, শীর্ষ সখাঁজ, মসৃণ। পুংকেশর অসংখ্য, চাকতির প্রান্তে প্রবেশিত, গর্ভদন্ড মুক্ত, গর্ভমুন্ড চাকতি সদৃশ রোমশ, বহির্মুখী। ফল প্রায় ১.০-১.৩ সেমি লম্বা, গোলাকার, ঘনভাবে সূক্ষ্ম কোমল রোমাবৃত।
বুনো গোলাপের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই বুনো গোলাপের গাছে ফুল ধরে। মিঠা পানির জলাভূমির প্রান্ত বরাবর বুনো গোলাপ দেখা যায়। নলখাগড়াযুক্ত বনাঞ্চল এই গাছের জন্য উপযুক্ত। ঝোপ ঝাড়ে জন্মে থাকে বলে এই গাছের কোনো যত্নের প্রযোজন নেই। অনুকূল পরিবেশ পেলেই অনায়েসে জন্মে যায় এই গাছ। কেউ বাড়ির টবে লাগাতে চাইলে কিছুটা পরিচর্যা দরকার। বীজ থেকেই এই গাছ জন্মে।
বুনো গোলাপের বিস্তৃতি:
মায়ানমার, ভারত এবং মালয়া। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর সিলেট জেলার হাওর এলাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া বুনো গোলাপ হিমালয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার দেশে জন্মে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
এই উদ্ভিদ সাধারণত জোড়কলমে উন্নত গোলাপের জন্য মূলভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বুনো গোলাপ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থান ধ্বংসের কারণে সংকটাপন্ন এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কাগ্রস্থ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বুনো গোলাপ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। তবে প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে উদ্ভিদ রক্ষার জন্য এক্স-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন ও বাগানে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে এর সৌন্দর্যের কারণে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিঞা(আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।