ভূমিকা: দামেস্ক গোলাপ (বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa damascena, ইংরেজি: Summer Damask Rose) হচ্ছে রোজেসি পরিবারের রোজ গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এই গুল্মটি বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করে।
বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa damascena Mill., Gard. Dict. (ed.8): 15 (1768) সমনাম: জানা নেই। ইংরেজি নাম: Summer Damask Rose. স্থানীয় নাম: দামেস্ক গোলাপ। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Edicots; বর্গ: Rosales; পরিবার: Rosaceae; গণ: Rosa; প্রজাতি: Rosa damascene
বর্ণনা:
দামেস্ক গোলাপ বহু শাখাবিশিষ্ট একটি গুল্ম। সাধারণত দেড় মিটার পর্যন্ত এটি উঁচু হয়। অনেক শাখা-প্রশাখা হওয়ার কারণে বেশ ঘন ঝপালো হয় এই গুল্মোটি। গায়ে ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত ও ছোট বড়ো কাঁটা থাকে; তবে বড় হয়ে গেলে বড়শির মতো মনে হয়। গ্রন্থিল লোমমিশ্রিত, লোম স্বল্প সংখ্যক থাকে। পাতা পক্ষল, পাতার কিনারায় করাতের দাঁতের মতো। ফুল বড়ো হয়, একল, বৃন্তক, দ্বিগুণ, মঞ্জরী পত্রহীন থাকে। এই প্রজাতির গোলাপ সুন্দর সুগন্ধি ভরা। বৃত্যংশ ফুলের পেছনে বাঁকা থাকে। ফল রোমহীন ও বীজ ছোট।[১]
বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
এই গাছের ফুল কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে ফুটে না। বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী শীতকাল থেকেই গোলাপ ফুলের প্রতিটি প্রজাতির গাছে ধরা শুরু করে। এই গোলাপ উন্নত জাতের হাইব্রিট ফুল। এর গড়ন বেশ শক্ত ও দ্রুত বড় হয়। ফুল বেশ বড় হয় ও সুগন্ধযুক্ত। এজাতের গোলাপ একসাথে অনেকগুলো ফুটে ও ঝোপালো হয়। শক্ত গড়নের এই গাছ খুব একটা ছাঁটায় করারা দরকার হয় না।[২]
বাড়ির বা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বর্ধনে জন্য লাগানো হয়। এই উদ্ভিদ আংশিকভাবে আবাদী এবং প্রচুর ঝোপঝাড়ের আকারে হয় বলে বেড়ার জন্য উপযুক্ত। শাখাকলম এবং জোড় কলম করে এর বংশ বিস্তার করা হয়। যেকোনো সময়ে চারার জন্য কলম করা যায় তবে অক্টোবর থেকে নভেন্বর মাস একাজের জন্য উপযোগী। কলম করার জন্য পরিপক্ক ডাল থেকে ২০-২৫ সেমি লম্বা ও পেন্সিলের মতো মোটা কান্ড নেওয়া উচিত।[৩]
ক্রোমোসোম সংখ্যা:
2n = ২৮, ৪২.[৪]
বিস্তৃতি:
বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ফ্রান্স, ভারত, মরক্ক, তিউনিসিয়া, এশিয়া, ইউরোপসহ সারা পৃথিবীতে এই সুগন্ধি প্রজাতিটি পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
আতর এর জন্য আবাদী (Prain, 1903). পাপড়ি সংকোচক হিসেবে বহির্ভাগে প্রয়োগকৃত এবং চিনির সাথে বলকারক হিসেবেও ব্যবহৃত (Chopra et al., 1956). কুঁড়িও সংকোচক এবং ধারণা করা হয় মৃদু বিরেচক ঔষধ, উত্তেজক, শিরঃপিড়ানাশক, হুল ফোটানোর ক্ষত এবং উদাসীন মনোভাব দূর করে (Chopra et al., 1956).
ভেষজ ব্যবহার:
পত্র খাবার সুগন্ধিতে ব্যবহৃত হয় এবং অপরিণত বিটপ জাভায় কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয় (Kunkel, 1984).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দামেস্ক গোলাপ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাস ধ্বংস দেখা যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দামেস্ক গোলাপ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে এর সৌন্দর্যের কারণে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিঞা(আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -৩৬-৩৭ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. শেখ সাদী উদ্ভিদকোষ প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ১৩৬-১৩৮। আইএসবিএন 984-483-319-1
৩. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ফুলের চাষ প্রথম সংস্করণ ২০০৩ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ১১৫। আইএসবিএন 984-483-108-3
৪. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।