ভূমিকা: দাদমর্দন (বৈজ্ঞানিক নাম: Senna alata) উষ্ণ অঞ্চলের গুল্ম। এই প্রজাতিটি রাস্তা, ডোবা বা ঝোপ-জঙ্গলে অযত্নেই বেড়ে ওঠে। এই গুল্মের আছে নানা ভেষজ গুণাগুণ।
দাদমর্দন-এর বর্ণনা:
দ্রুত বর্ধনশীল, নরম কাষ্ঠল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, প্রায় ১-৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু। কান্ড পত্র দাগ ও স্থায়ী উপপত্র। যুক্ত, উপপত্র ২টি, ৬-৯ মিমি লম্বা, ব-দ্বীপাকার, কর্ণ সদৃশ। অভিক্ষেপ যুক্ত। পত্র অচূড় পক্ষল যৌগিক, পত্রক ৮-১৪ জোড়া, ৩-১৯ x ২.৭-৫.৭ সেমি, তির্যক, মূলীয় অংশ থেকে দীর্ঘায়ত, অখন্ড, স্থলাগ্র বা সখাঁজ, গৌণ শিরা ১০-১৮ জোড়া, অঙ্কীয় পৃষ্ঠে সুস্পষ্ট। পত্রক অক্ষ ৩০-৬০ সেমি। লম্বা, উধ্বাংশ শক্ত ও খাঁজ যুক্ত।
পুষ্পবিন্যাস রেসিম, ১৫-৩০ সেমি লম্বা, স্পাইক সদৃশ শক্ত এবং উপরের দিকে নির্দেশিত, পুষ্প উজ্জ্বল হলুদ, সদুর্শন, সহপত্রী, পুষ্প মুকুল মঞ্জরীপত্রে আচ্ছাদিত, মঞ্জরীপত্র ১.৫-৩.০ X ১.২-১.৭ সেমি, তীর্যক, ডিম্বাকার, ধূসর সুবজ থেকে কমলা বর্ণযুক্ত বা পাপড়িবৎ, আশুপাতী। বৃত্যংশ ৫টি, মুক্ত, ১.৫-২.০ x ০.২-০.৬ সেমি। পাপড়ি ৫টি, মুক্ত, একপ্রতিসম, ২.৫-৩.২ x ১ সেমি, ডিম্বাকাকার-বৃত্তাকার, চমসাকৃতি, শিরাল এবং খাটো দলবৃন্ত যুক্ত।
পুংকেশর ৯-১০ টি, উর্বর পুংকেশর মাত্র ২টি, পরাগধানী ১ সেমি, পুংদন্ড খাটো ও মোটা, পরাগধানী দ্বিখন্ডিত, পাদলগ্ন, শীর্ষীয় ছিদ্র দ্বারা উন্মুক্ত। গর্ভাশয় ও গর্ভদন্ড রোম বিহীন, গর্ভমুন্ড ক্ষুদ্র। ফল পড়, দীর্ঘায়ত, পক্ষসহ ১০-১৮ x ১.৫-৩.৫ সেমি, চ্যাপ্টা, পক্ষ অনুপ্রস্থ সূক্ষ্ম সভঙ্গ যুক্ত, বিদারী বীজ ডিম্বাকার, ঠোটযুক্ত, ৬-৮ x ৪.৫-৫.৫ মিমি, পুরু, ঠোটের প্রতি পাশে ২টি উজ্জ্বল ভল্লাকার অ্যারিওল বিদ্যমান।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১২ (Senn, 1938).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
বাহারি গাছ রূপে উদ্যানে জন্মে, কখনও পতিত জমি, ডোবার পাশ্ববর্তী ভূখন্ড, ধান ক্ষেতের মধ্যবর্তী স্থান এবং অনাবাদী জমিতে জন্মিতে দেখা যায়। ফুল ও ফল ধারণ সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও শাখা কলমের মাধ্যমে।
বিস্তৃতি: পৃথিবীর উষ্ণাঞ্চলে বিস্তৃত। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
দাদমর্দন বাহারি ও ভেষজ ওষুধের গাছ। ক্রাইসোফেনিক এসিড থাকার ফলে চর্মরোগে বিশেষ করে দাদ, ঘা, পাঁচড়া ইত্যাদিতে উপকারী। ঝলসানো পাতা রেচক (Ali, 1973), যৌনব্যাধির। চিকিৎসায় এর গুরুত্ব আছে। বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড়ে এবং সাধারণ টনিক রূপেও এর ব্যবহার রয়েছে। অ্যান্টিবাইয়োটিক রূপে বিশেষকরে গ্রাম পজেটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী (Hassan et al., 1988)। ব্যাপক বৃদ্ধি ও বিস্তারের ফলে নিউগিনিতে এই গাছটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: দাদের বাহ্যিক নিরাময়ের জন্য বাংলাদেশীরা টাটকা পাতার লেই ব্যবহার করে থাকে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দাদমর্দন প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দাদমর্দন সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ১৪১-১৪২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Filo gèn’
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।