অড়হর গাছ ভারতের অধিকাংশ প্রদেশে জন্মে; কিন্তু উত্তর প্রদেশে ও বিহারে ব্যাপক চাষ হয়। জুলাই-আগষ্ট মাসে ফুল ও শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল হয়। হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চলে একে বলে অড়হর; আহার্য হিসেবে ডাল ব্যবহার হয়। অপেক্ষাকৃত লাল রংয়ের একটা ডাল (ডাইল) পাওয়া যায়, কোনো কোনো গ্রন্থে বলা হয়েছে, সেইটাই একটু বেশী পুষ্টিকারক এবং বাতকারক দোষও নেই। এই গাছটির বোটানিক্যাল নাম Cajanus indicus spreng. ফ্যামিলি Leguminosae. ঔষধার্থে ব্যবহার হয় এর পাতা, মূল ও বীজ।
লোকায়তিক ব্যবহার
১. কাসিতে (পিত্তশ্লেষ্মাজনিত): অড়হর পাতার রস ৭ থেকে ৮ চামচ একটু গরম করে ১ চামচের মতো মধু মিশিয়ে খেলে কাসিটা কমে যায়।
২. কামলা রোগে (জন্ডিসে): অড়হর গাছের রোগের প্রথমাবস্থায় পাতার রস ৬।৪ চামচ, একটু গরম করে খেতে হবে।
৩. অর্শরোগে: অড়হর গুল্মের পাতার রস ২ চামচ একটু গরম করে সকালে ও বিকালে দুইবার খেতে হবে, এর দ্বারা অর্শের যন্ত্রণা কমে যায়। তবে এর সঙ্গে অড়হর ডালের যুষ একটু ঘি-এ সাঁতলে খাওয়া খুব ভাল, এটাতে দাস্ত পরিষ্কারও থাকবে।
৪. দাহে: যাঁদের হাত-পায়ে জ্বালা বোধ হয়, তারা অড়হর গুল্মের পাতার রস হাতে মাখবেন, তার ঘণ্টাখানেক বাদে ধুয়ে ফেলবেন, তবে এর সঙ্গে পিত্তনাশক কিছু খাওয়া উচিত।
৫. মধুমেহ রোগে (ডায়াবেটিসে): অড়হর গুল্মের পাতার রস একটু গরম করে খাবেন, তবে এর মূলের ছালের রস (একটু জল দিয়ে করতে হয়) অথবা মূল ৮ থেকে ১০ গ্রাম থেতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে আধ কাপ থাকতে নামিয়ে খেলে বেশী উপকার হয়, খাঁটি মধু হলে এক/আধ চামচ দেওয়াও চলে। এটি ব্যবহারের কালে আহার্যের সঙ্গে ডালের যুষও খাওয়া উচিত।
৬. রক্তপিত্তে: অড়হর গুল্মের পাতার রস ২।৩ চামচ একটু গরম করে ১৫ থেকে ২০ ফোঁটা মধু, মিশিয়ে অথবা শুধু রস গরম করে দু’বেলা খেতে হবে। এর সঙ্গে অড়হর ডালের যুষ (সারাংশ বাদ) খেলে ভাল হয়। যদি পেটের অবস্থা ভাল না থাকে ডাল খাওয়া চলবে না।
৭. অরুচিতে: অরুচি যতই পরানো হোক না কেন, অড়হর ডালের যুষ অল্প আদা মরিচ বাটা দিয়ে সাঁতলে তার সঙ্গে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে বারে বারে একটু একটু করে খেতে হবে। যুষ এক/দেড় কাপ সমস্ত দিনে খেলেই চলবে। ৫০ গ্রাম আন্দাজ ডালের যুষ করতে হবে।
৮. জিহ্বার ক্ষতে: অড়হর গুল্মের কয়েকটি কচিপাতা (সম্ভব হলে) ভাল করে ধুয়ে অল্প থেতো করে নিয়ে, সেটা আস্তে আস্তে চিবোতে হবে। এই সময় একটু জ্বালা করে; তবে ২ থেকে ৩ দিন এইভাবে করতে পারলে ওটা সেরে যায়। আর একটা কথা, চিবিয়ে পাতার ছিড়ে ফেলে দেওয়ার পর আর মুখ ধুতে নেই।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Two globulins wz, cajanin and concajanin.
(b) Sterols viz, gamasitosterol,betasitosterol,
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৩৯-২৪০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Filo gèn’
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।