মহাশতাবরী বা সহস্রবীর্যা ‘সফেদমুসলি’ নামেও পরিচিত। কারণ মহাশতাবরীর শুকনা মূলই সফেদ মুসলি। যদিও-বা সফেদমুসলি নামে আরও কয়েকটি গাছের মূল বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যায়, তথাপি অধিকাংশ উদ্ভিদবিদ্গণের মতে মহাশতাবরীর অর্থাৎ Asparagus adscendens Roxb.-এর মূলই আসল সফেদমুসলি।
সফেদমুসলি-এর গুণাগুণ
১. অপুষ্টিতে: সাধারণতঃ শিশুরাই এই সমস্যায় বেশী পড়ে। বড়দের ক্ষেত্রে যে হয় না তা নয়। ৪। ৫ বছর থেকে ১০। ১২ বছরের বাচ্চাদের জন্য সফেদ মুসলির চূর্ণ ১-৩ গ্রাম মাত্রায় দিনে একবার, প্রয়োজনে ২ বার সামান্য দুধ সহ খাওয়াতে হবে। বড়দের জন্য মাত্রা হলো ১–৩ গ্রাম হিসেবে দিনে ২ বার কিংবা ৫ গ্রাম মাত্রায় একবার আধ কাপ খানিক হালকা গরম দুধ সহ খেতে হবে। মাসখানিক নিয়মিত খেলে উপকারটা বুঝতে পারবেন। তারপর একদিন ছাড়া একদিন মাসখানিক খেলেই চলবে। খুব প্রয়োজনে আরও কিছুদিন খাওয়ানো যেতে পারে।
২. রোগান্তিক দুর্বলতায়: যেকোন রোগভোগের পর একটা সাধারণ দুর্বলতা প্রায় অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তখন সফেদ মুসলি চূর্ণ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১–২ গ্রাম ও বড়দের ক্ষেত্রে ৩ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার করে দুধ সহ মাসখানিক খেলে দুর্বলতাটা থাকে না।
৩. শ্বেতপ্রদরে: যেক্ষেত্রে অপুষ্টিটাই এর প্রধান কারণ, সেইসঙ্গে দুর্বলতা, সেক্ষেত্রে ৩ গ্রাম মাত্রায় সফেদ মুসলির চূর্ণ আধ কাপ হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকালের দিকে একবার এবং এভাবে বিকালের দিকে একবার খেতে হবে। মাস দুই খেলে সাদা স্রাব কমে গিয়ে দেহে-মনে একটা আনন্দের জোয়ার বইবে, শরীরটা ঝরঝরে হবে, ক্ষুধাও বাড়বে।
৪. স্তন্যাল্পতায় ও প্রসবান্তিক দুর্বলতায়: প্রসবের দু’চার দিন পর থেকে সফেদ মুসলি চূর্ণ ৩ গ্রাম মাত্রায় দিনে দুইবার করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রত্যেক বারের জন্য দুধ কাপ) নিয়ে খেতে হবে। মাসখানিক এভাবে খাওয়ার পর আরও ৪ । ৫ মাস একবার করে খাওয়া উচিত। এর দ্বারা প্রসবাস্তিক অর্থাৎ প্রসবের পরের দুর্বলতা চলে যাবে এবং বুকের দুধে টান পড়বে না। তাছাড়া পেটের গোলমাল, দুর্বলতা, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অপুষ্টি প্রভৃতিও থাকবে না।
৫. তারুণ্য ধরে রাখতে: কিবা নারী আর কিবা পুরুষ, বয়স যতই বাড়ুক না কেন, শরীরটাকে তরতাজা করে রাখতে চায় অনেকে। বার্ধক্য আসুক, কিন্তু দেহ থাক সুঠাম, কর্মক্ষম, মনে থাকুক আনন্দের ছোঁয়া, যেন মনে হবে—বয়স হয়েছে ঠিকই, তাহলেও দেহ-মনে চির তারুণ্য। এই আহ্বানে সাড়া দিতে মন চাইলে ৪৫ । ৫০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যহ একবার করে ৩ গ্রাম মাত্রায় সফেদ মুসলি চূর্ণ সামান্য দুধ সহ খেয়ে যান।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৪৭-২৪৮।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Seema Bin Zeenat
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।