কেও বা কেঁউ (বৈজ্ঞানিক নাম: Cheilocostus speciosus) বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। কিছু এলাকায় এটি চাষাবাদ করা হয়েছে এবং অনেক জায়গায় একটি আগ্রাসী প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কেও গাছ ঝোপালো। শিকড় থেকেই অনেক ডালপালা বেরিয়ে ঘন ঝোপ সৃষ্টি করে। কেঁউ ঝোপ ৫-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বোটানিক্যাল নাম Costus speciosus (Koen:) Sm. ও ফ্যামিলি Zingiberaceae. ব্যবহার্য অংশ- মাটির নীচের কাণ্ড।
কেও বা কেঁউ-এর ঔষধি গুনাগুণ:
জ্বর, র্যাশ, এজমা, ব্রংকাইটিসে কাজে লাগে। এ গাছের মাটির নিচের কাণ্ড বা মূল ওষুধরূপে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে এই গাছের ঔষধি ব্যবহারের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।[১]
১. চর্ম রোগে: চামড়ার ওপর দাদ, খোস, চুলকানি হয়েই থাকে অনেক কারণে। কেও গাছের মূল বেটে তার রস নিয়ে দেহে মাখুন। কিছুক্ষণ পরে গা ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে চর্মরোগ দূর হয়।
২. ক্রিমিতে: কোন ধরনের ক্রিমিতে কেউ মূলের ব্যবহার ফলপ্রদ হয়। অর্থাৎ অন্ত্রস্থ ক্রিমি রোগে প্রায়ই বমি হয়, মুখে লোনা জল ওঠে, মাঝে মাঝে চোখ দুটি যেন কোটরে ঢুকে যায় কিম্বা চোখের চারদিকে যেন কালো দাগ পড়ে, সেই ক্ষেত্রে কেউ মূলের রস সকালে এক চা-চামচ ও বিকালে এক চা-চামচ ২/৩ চামচ জল মিশিয়ে ৩/৪ দিন খাওয়ার পর কোন একটা মদ জোলাপ খাওয়ালে ক্রিমি প’ড়ে যায়—সে জীবন্ত পড়ুক আর মৃত পড়ুক, প্রায় ক্ষেত্রেই বেরিয়ে যায়। না বেরুলেও তার উপদ্রব কমে যাবেই।
৩. দেহের লাবণ্য বৃদ্ধিতে: খাওয়ার কমতি নেই অথচ দুর্বলতা কাটে না, দেহে কোন জৌলুস নেই। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ ভিটামিন খাওয়ার ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। এমন যে ক্ষেত্র, সেখানে কেও মূলের রস ২/৩ চা-চামচ সমপরিমাণ জল মিশিয়ে একটু, গরম করে প্রত্যহ সকালে অথবা বিকালে একবার করে খেয়ে দেখুন। শরীরের সমস্যাটার উন্নতি হবে।
৪. অগ্নিমান্দ্য: কেও গাছের মূলের রস এক থেকে দেড় চা-চামচ নিয়ে, তার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে একটু গরম করে সকালে ও বিকেলে খাবেন। অগ্নিমান্দ্য দূর হবে।
৫. প্রমেহ রোগে: এরকম অবস্থা এলে কেও মূলের রস (একটু তেতো/তিক্ত) এক চা-চামচ করে সকালে বিকাল দু’বার প্রত্যহ ৩-৪ দিন খেলে কত সহজেই এর থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
৬. সর্দি-জ্বর: যে জ্বর গ্রীষ্ম বর্ষা প্রভৃতি সব ঋতুতেই হয়। ওই সময় সব চেয়ে বেশী কষ্ট জ্বরের তাপটায় আর সব থেকে বেশী কষ্ট হয় মাথা ধরায়, তার সঙ্গে গায়ে-হাতে ব্যথা; ক্ষিধে তো থাকেই না। এক্ষেত্রে কেও মূলের রস গরম করে সকালের দিকে একবার এবং বিকালের দিকে একবার এক/দেড় চা-চামচ করে খেতে হবে; তবে গরম করার পূর্বে ওই রসটাতে ৪-৫ চা-চামচ জল মিশিয়ে গরম করাই ভাল, অল্প রস কিনা তাই গরম করার আগেই জল মিশাতে হয়। এর দ্বারা একদিন পরেই খাওয়ার প্রবৃত্তি আসবে, যেহেতু অগ্নিমান্দ্য কমে যাবে। গায়ের হাতের কামড়ানি কমে যাবে। দু-তিন দিন খেলে জ্বর নিরাময় হবে।
৭. সঙ্গমে ব্যর্থতায়: ‘যাকে বলে আছে গরু, না বয় হাল’—দাম্পত্য জীবনে এ অবস্থা কারও কারও আসে, অথচ আকাক্ষার অভাব নেই, এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, “ফিজিকাল, আনফিট” অর্থাৎ মনে উত্তেজনা আছে কিন্তু দেহে নেই। ওই অবস্থা এলে ১৫ গ্রাম মূল সিদ্ধ করে (আলু সিদ্ধ খাওয়ার মত) খেতে হয়; কয়েকদিন খেলেই ওই অসুবিধেটা আস্তে আস্তে চলে যায়।[১][২]
CHEMICAL COMPOSITION
Costus speciosuş (Koen.) Sm. Syn – Banksia speciosa Koenig The rhizome contains: — Starch and fibre.[২]
তথ্যসূত্র:
১. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, আক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ২০৬।
২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৬৪-১৬৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।