বামনহাটি গুল্ম-এর সাতটি ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ

বৃহৎ আকারের গুল্ম হলেও আয়ুর্বেদীয় পরিভাষা অনুযায়ী এটি বক্ষের পর্যায়ে পড়ে, যেহেতু এটির ডাল (শাখা) কেটে দেওয়ার পর তার পাশ থেকে পুনরায় নতুন গাছ বের হয়। সাধারণতঃ ৪ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়, কাণ্ড সরল, শাখাহীন ও অভ্যন্তর ভাগ ফাঁপা। গোড়ার দিককার পাতাগুলি পেকে ঝরে গিয়ে কাণ্ডের অগ্রভাগের পাতা থাকে। পাতা ৬ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা, ১ থেকে দেড় ইঞ্চি চওড়া ও বোঁটা সিকি ইঞ্চির মতো লম্বা হয়।

ফুল সাদা কিন্তু বাহিরের আবরণ সবুজ অথবা লাল আভাযুক্ত, ফলটি বেশ কিছুদিন থাকে। পুষ্পদণ্ড ১০ থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা, গাঢ় সবুজ অথবা ঈষৎ লালচে রঙের। ফল গোলাকার কিন্তু ৪ ভাগে বিভক্ত, প্রত্যেকটি ভাগে মটরের ন্যায় বীজ থাকে। বর্ষার প্রারম্ভে ফল ও পরে ফল হয়। এটি ৬০০০ ফুট উচুতেও জন্মে। বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণাংশে, কুমায়ুন অঞ্চলে ও বঙ্গদেশে জন্মাতে দেখা যায়।

অন্যান্য নাম:

এর সংস্কৃত নাম ভাগী, বাংলায় প্রচলিত নাম বামনহাটী বা ব্রহ্মষ্টি ও হিন্দী নাম বামনহাটী। বোটানিক্যাল নাম Clerodendrum indicum (L.) O. পরিবার: Verbenaceae. ব্যবহার্য অংশ—পাতা ও মূলের ছাল।

বামনহাটি গুল্ম-এর ভেষজ গুণাগুণ:

১. হাঁপানিতে: এই রোগটি সারাতে সময় বামনহাটির মূলের ছাল এক বা দেড় গ্রাম ছোট একটা টুকরো আদা (১/১ই গ্রামের মত) একসঙ্গে বেটে গরম জলসহ খেলে ২/৫ মিনিটের মধ্যে হাঁপের টান কমে যাবে; এইরকম সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে হবে। অবশ্য এই রোগ কখনও নির্মূল হয়ে সারে না।

২. বুকের ব্যথায়: যে শ্লেষ্ম বুকে বসে বুকের স্পন্দন স্তব্ধ করে দেবার অবস্থা ঘটায় এবং মনে হবে বুকে-পিঠ সেটে ধরেছে, আর বায়ু ব্যাকুলিত হয়ে যন্ত্রণা হয়, ওই সময় বামনহাটির মূলের ছাল কাঁচা ৩ গ্রাম (শুকনো হলে ২ গ্রাম) বেটে গরম জলসহ খেতে হবে। দু/তিন দিন খেলেই ওটা সেরে যাবে।

আরো পড়ুন:  উচুন্টি উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

৩. বাত কাশিতে: বামনহাটির ক্বাথ দিয়ে ঘি তৈরী করে (সমগ্র গাছ সিদ্ধ করে সেই ক্বাথ দিয়ে ঘি পাক করতে হবে। সেই ঘি সকালে ও বিকালে একটু, গরম দুধে মিশিয়ে দুই/তিন দিন খেলেই কাসির উপশম হবে। কয়েকদিন খেলেই ওটা সেরে যাবে।

৪. ক্রিমিতে: যেসব ক্রিমি শ্লেষ্মাবিকার থেকে হয়, বেশী গুড়, পিঠে (পিষ্টক) মিষ্টি জিনিস খেয়ে হয়, সেসব ক্রিমি তাড়াতে বামনহাটির মুল ও পাতা সমান পরিমাণে নিয়ে বেটে, মটর পরিমাণ বড়ি করে শুকিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজন মতো একটি থেকে ৩টি পর্যন্ত বড়ি খাওয়া যায়; অবশ্য বয়সানুপাতে প্রয়োজন মত দু’বেলাই খাওয়া যায়।

বামনহাটি গুল্ম-এর বাহ্য ব্যবহার

৫. শোথে (ফুলে যাওয়া): আমাশয় রোগে ভুগে ভুগে অনেকের শোথ হয়, সেক্ষেত্রে বামনহাটির পাতা ও মূলের ছাল একসঙ্গে বেটে অল্প গরম করে পায়ে প্রলেপ দিলে এবং সেই সঙ্গে পাতা ও মুল ৫ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সেই জলটাও খেতে হবে। একই সঙ্গে ওর প্রলেপ এবং কাথ খাওয়ালে ফোলাটাও সেরে যাবে।

৬. গাল-গলা ফুলে গেলে: বামনহাটি মুলের ছাল বেটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিলে গলার ফোলাটা কমে যাবে।

৭. গায়ের জ্বালায়: যাঁরা প্রায়ই গায়ের জ্বালায় ভোগেন তাঁরা বামনহাটি গাছ, মূল, পাতা অর্থাৎ সমগ্র গাছ অন্তত ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম এক লিটার জলে। (৫/৬ কাপ) সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে, সেই জলে শরীরটা মুছতে হবে। এইভাবে ৩/৪ দিন মাখলে গায়ের জ্বালাটা কমে যাবে।

CHEMICAL COMPOSITION

Clerodendrum indicum (Linn.) O. Kuntze

Bark contains : – D-mannitol 7.8% and sorbitol; Alkaloid and resin.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৯৭-৯৮।

আরো পড়ুন:  নীলকলমী দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ লতা

Leave a Comment

error: Content is protected !!