শঠি বা শটি কন্দের নানাবিধি ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

শঠি বা শটি-র চাষ ভারতের প্রায় সর্বত্র অল্পবিস্তর হয়ে থাকলেও আপনা-আপনিই প্রায় সব প্রদেশেরই যেখানে-সেখানে হয়ে থাকে, এই পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, ২৪ পরগণা, হুগলী, হাওড়া প্রভৃতি স্থানের কোথাও কোথাও ব্যাপক চাষ যে হয় না তা নয়। বাংলাদেশে শঠীর পালো তৈরী কুটির শিল্পের মতই ছিল। কন্দজাতীয় উদ্ভিদ, কন্দ গোলাকার, লম্বাটে, বাঁকা বাঁকা, দেখতে অনেকটা আদার মত। গাছগুলি দেখতে অনেকটা হলুদ গাছের মত, পাতা ২/৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, পুষ্পদণ্ড এক ফুট পর্যন্ত লম্বা, তারই চারিদিকে ফুল হয়, ফুলের রং ২। ৩ রকম রঙের (পীত, শ্বেত, বেগুণী) মিশ্রণ।

বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুল ও পরে ফল হয়। গাছের কমল থেকে আদার মত চারিদিকে মুখী বেরিয়ে পড়ে, সেগুলিই প্রচলিত শঠী। এই কন্দমূলকে কুটে (কুট্টিত করে) তাকে জলে চটকে থিতিয়ে রেখে নিচে জমে যাওয়া শ্বেতসারটি শুকিয়ে নিলে ময়দার মত জিনিস পাওয়া যায়—সেইটাই শঠী। এ থেকে আবির তৈরী হতো। এটিকে বাংলা হিন্দী ও সংস্কৃতে শঠী বা শটী বলে। এটির বোটানিক্যাল নাম Curcuma zedoatia Rose, ফ্যামিলি Zingiberaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ কন্দ (মূল) এবং তজ্জাত শ্বেতসার।

শঠি বা শটি-এর উপকারিতা:

১. জ্বরে: যে জ্বরে পিত্ত প্রাধান্য থাকে (বমি, মাথাধরা, পিপাসা, বেশী উত্তাপ) সেক্ষেত্রে শঠীচূর্ণ ৫ গ্রাম আন্দাজ ২ কাপ গরমজলে ২। ৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে, ওটাকে ছে’কে সেই জলটা ৩। ৪ বারে খেতে হবে।

২. অতিসারে: পাতলা দমকা দাস্ত, তার সঙ্গে পেটে মোচড়ানি, পিপাসা, এক্ষেত্রে শঠীমূল চর্ণ ৫। ৬ গ্রাম ৪/৫ কাপ জলে সিদ্ধ করে দু’কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, ওই পাতলা জলটা ২। ৩ বারে খেতে হবে। এটা সব বয়সের অতিসারেই খাওয়া চলে।

৩. অর্শে: যে অর্শে জ্বালার সঙ্গে ছরছর করে রক্ত পড়ে সেটা পিত্তপ্রধান অর্শ। এক্ষেত্রে প্রত্যহ ১৫। ২০ গ্রাম শঠীমূল চূর্ণ একসের জলে (১ লিটার) সিদ্ধ করে আধসের থাকতে (আন্দাজ আধ লিটার) নামিয়ে, ছে’কে, তলানি বাদ দিয়ে ওই জলটা ৩। ৪ বারে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই জ্বালাটা থাকবে না।

আরো পড়ুন:  বুটি ডুমুর বাংলাদেশে জন্মানো ভেষজ গুল্ম

৪. শিশুদের ক্রিমিতে: যে ক্রিমির উপদ্রবে পেটটা বড় হয়, শিরা বেরিয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে শঠীচূর্ণ ১০ গ্রাম দেড়/দুই কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে, ওটাকে ছেকে সারাংশের জলটি খেতে হবে।

৫. প্লীহায়: যেখানে প্লীহার উপদ্রবে জ্বর হতে থাকে এবং তার বৃদ্ধিটা লক্ষণীয় হয়, সেখানে ৪। ৫ গ্রাম শঠীমূল চূর্ণ আধ কাপ গরম জলে আধঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে, ওটাকে ছে’কে ওই জলটা খেতে হবে। এর দ্বারা জ্বর ও প্লীহা দুইই কমে যাবে।

৬. উঠতি ফোঁড়ায়: জলা এবং টনটনানি দুই-ই থাকে, সেক্ষেত্রে শঠীমূল জল দিয়ে বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ায় প্রলেপ দিলে জলা যন্ত্রণা কমবে এবং ফোড়াটা ফেটে যাবে।

CHEMICAL COMPOSITION

Curcuma zedoaria d—pinene (1.5%); d-canphene (3.5%); Cineol (9.6%); d-camphor (4.2%); d-Borneol (1.5%); Sesquiterpenes (10%); Sesquiterpene alcohols (48%) and Residue (21%).

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১৩-১৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!