ক্ষেতপাপড়া গুল্ম-এর পাঁচটি ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ

ভূমি প্রসরণশীল বর্ষজীবী গুল্ম লতাটি ভারতের সর্বত্র, এমনকি ৬০০০ ফুট উচু পার্বত্য প্রদেশেও জন্মে। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র পতিত জমিতে, জমির আলের ধারে, বাগানের আগাছারপে প্রচুর পরিমাণে হতে দেখা যায়। ঘনসন্নিবদ্ধ গাছগুলি ৩। ৪ ইঞ্চি থেকে ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, একটু বড় হলেই গড়িয়ে পড়ে, শাখা-প্রশাখা অনেক, কখনো কখনো গাছগুলি অল্প রোমশও হয়। শাখা-প্রশাখাগলি ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

পাতাগুলি পাতলা, লম্বাটে ও ডিম্বাকৃতি, ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ছোট ছোট ফলগুলি একত্রে ৩ থেকে ৪টি বা ততোধিকও হয়, দেখতে শ্বেতবর্ণের, ফল গোলাকার, তার মধ্যে বীজ থাকে। এই গাছ বিভিন্ন আকৃতিরও দেখতে পাওয়া যায়, অনেক সময় Oldenlandia diffusa Roxb. থেকে পৃথক করা যায় না। গাছগলি আষাঢ়-শ্রাবণে জন্মে এবং মাঘ-ফাঙ্গুন মাসে মরে যায়। গাছে ফল। হলে বীর্যবান হয়। | এটিকে সংস্কৃতে পপট, পপটক, বরতিক্ত, কবচ, ক্ষেত্ৰপপটী; বংলায় ক্ষেতপাপড়া, হিন্দীতে দমনপাপড়া, পিতপাপড়া বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Oldenlandia corymbosa Linn., piraat Rubiaceae.

দ্বিতীয়তঃ পীত পর্পটক বলে আর একটি গাছ কোন কোন প্রদেশের বৈদ্যক সম্প্রদায় ব্যবহার করে থাকেন, সেটির বোটানিক্যাল নাম Fumaria perviflora Lam., ফ্যামিলি Fumariaceae. এর প্রচলিত বাংলা নাম বনশলফা।

ঔষধ হিসাবে প্রয়োগ:

ইহার ক্বাথ পিত্তজ জ্বরে এবং পাকস্থলীর পীড়ায় খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। ক্ষেতপাপড়া ও ধনে একত্রে সিদ্ধ করে খেলে বহুদিনের পুরাতন জ্বর সেরে যায়। এছাড়া পাড়ুরোগেও এর ব্যবহার দেখা যায়। এটি স্নায়ুগত পীড়ায় হিতকর।

ক্ষেতপাপড়া গুল্ম-এর ভেষজ গুণাগুণ:

১. প্রবল অতিসারে: সেক্ষেত্রে দুর্গন্ধযুক্ত মল প্রবল বেগে নিঃসারিত হচ্ছে, অথবা তাতে মল নেই বললেই হয়, রোগী ঝিমিয়ে পড়েছে, মলদ্বারে জ্বালা এবং স্বারটা হেজে গিয়েছে, কখনও বা একটু, লাল আভাযুক্ত মল নিঃসরণ হচ্ছে; এইক্ষেত্রে ক্ষেতপাপড়া গুল্ম কাঁচা হ’লে ১৫ গ্রাম থেতো ক’রে দেড় বা দুই কাপ গরম জলে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে, তাকে ছেকে নিয়ে ওই জলটা একটু একটু করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্তর খাওয়াতে হবে।

আরো পড়ুন:  চিনা ঢেকিয়া দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ ফার্ন

শুষ্ক হ’লে ৬-৭ গ্রাম নিয়ে জল দিয়ে থেতাে করে নিয়ে, তাকে ৩ কাপ জলে ফটিয়ে আন্দাজ ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, সেটাকে ছেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্তর ৪-৫ চামচ ক’রে খাইয়ে যেতে হবে, এর দ্বারা দাস্ত বন্ধ হবে এবং ক্ষিধে লাগবে, এর দ্বারা প্রস্রাবও হবে।

২. রক্তদোষে: শরীরের কোথাও কিছু রোগ হয়তো দেখা যাচ্ছে না, প্রস্রাব ও মল পরীক্ষা করেও কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। এদিকে কোন জায়গায় কেটে গেলেও তাড়াতাড়ি রক্তটা বন্ধ হতে চায় না অর্থাৎ রক্তটা জমাট বাঁধতে চায় না, শরীরে কোন কোন জায়গায় ফোঁড়াও হয়তো হয়েছে কি হচ্ছে, সেগুলি সারছে না, ভোগাচ্ছে, একটা পাকছে, ফাটছে, শুকাচ্ছে, আবার নতুন ফোড়া উঠছে; এই ক্ষেত্রে ক্ষেতপাপড়া গুল্ম ৬। ৭ গ্রাম নিয়ে জলে ভিজিয়ে তাকে থেতো করে এক গ্লাস গরম জলে তাকে ১০।১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে (রাত্রে ভিজালে ভাল হয়) পরের দিন সকালে ওটাকে ছেকে নিয়ে সকালে ও বিকালে দু’বারে ওই জলটা খেতে হবে। তবে ওটাকে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে ওটা দু’বারে খেলে রক্তদোষজনিত ফোড়া হওয়া বন্ধ হবে। তবে এটাও দেখা দরকার যে, ব্লাড সুগার আছে কিনা। এই দোষ থাকলে ফোড়া বা কোন ঘা সারতে চায় না সুতরাং সঙ্গে সঙ্গে এর চিকিৎসাও করতে হবে।

৩. কফ বিকারে: শিশুর কফ, বন্ধের কফ যদি এলো তাহলে আর যেতে চায় না; এই ক্ষেত্রে ক্ষেতপাপড়া কাঁচা হলে ১০ গ্রাম এবং শুষ্ক হলে ৫ গ্রাম নিয়ে ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে, ওটাকে সকালে ও বিকালে দুই বারে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই কফের দোষটা সেরে যাবে।

৪. তৃষ্ণা রোগে: ক্ষেতপাপড়া ৭-৮ গ্রাম (কাঁচা) থেতো করে এক গ্লাস গরম জলে, ৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সেটাকে ছেকে ওই জলটা সমস্তদিনে দুই-তিন বারে খেতে হবে। আর শুকনো হলে ৫ গ্রাম খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর তাকে থেতো করে ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, সেটা কমে গিয়ে আন্দাজ ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে সকালে ও বিকালে দু’বারে খেতে হবে। এর দ্বারা তৃষ্ণা রোগটি চলে যাবে।

আরো পড়ুন:  জাতেরি বড়মালা ভেষজ বিরুৎ

৫. হাত-পা জ্বালায়: এর আর যুক্তি-বিজ্ঞানের প্রয়োজন হয় না, এটা বাড়ে গ্রীষ্মে, বর্ষায় ও শরতে। এই ক্ষেত্রে শুকনো ক্ষেতপাপড়া ৫। ৭ গ্রাম অল্পক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখার পর সেটাকে থেতো করে, তারপর তাকে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে দুই কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে সকালে ও বিকালে দু’বারে খেতে হবে, এর দ্বারা ওই হাত-পা জালাটা চ’লে যাবে।

CHEMICAL COMPOSITION

Oldenlandia corymbosa Linn. Air dried plant contains :- Alkaloid 0.12%; biflorin; biflorone. Stored plant contains : — Ursolic acid; sitosterol; ebanolic acid.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১০৭-১০৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!