কামোদ্দীপক, পুষ্টিকর ও অগ্নিবর্ধক এবং অজীর্ণ, অতিসার, প্রবাহিকা, প্রসবাস্তিক ও রোগান্তিক দুর্বলতা, মস্তিষ্ক দৌর্বল্য, স্নায়ুদৌর্বল্য, কৃশতা, হৃৎদ্দৌর্বল্য ও রক্তদোষ প্রভৃতিতে ব্যবহার্য।
পাঞ্জা সালম-এর ঔষুধি ব্যবহার
এখানে যে মুষ্টিযোগগুলি লেখা হচ্ছে, সেগুলি পাঞ্জা সালমকে (Orchis latifolia) নিয়ে, তবে তা না পাওয়া গেলে মুঞ্জাতক সালম বা অন্য সালম ব্যবহার করতে পারেন।
১. অপুষ্টিতে: পুষ্টিকর আহারের অভাবে অপুষ্টি আসাটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি পেটের গোলমাল অর্থাৎ অজীর্ণ, অগ্নিমান্দ্য, অতিসার, আমাশা প্রভৃতির মধ্যে এক বা একাধিক দীর্ঘদিন ধরে থাকলে অপুষ্টি আসে। শিশুদের ক্ষেত্রে গ্রাম মাত্রায় পাঞ্জা সালম চূর্ণ দিনে ২ বার জল বা দুধসহ সেব্য। মাস দুই লাগাতার খাওয়ার পর প্রয়োজনে একবার ক’রে আরো কিছুদিন। বড়দের ক্ষেত্রে মাত্রা হলো ১ গ্রাম করে দিনে ২ বার।
২. প্রসবাস্তিক ও রোগান্তিক দুর্বলতায়: প্রসবের পর স্বাভাবিকভাবে একটা দুর্বলতা দেখা দেয় এবং সময়মতো সেটিকে সারিয়ে না তুললে পরে বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়। যেকোন রোগে দীর্ঘকাল ভোগার পরও দুর্বলতা আসে। এক্ষেত্রে পাঞ্জা সালম চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার করে, আধকাপ হালকা গরম দুধ সহযোগে খেতে হবে। প্রসবের দু’চারদিন এবং রোগমুক্তির ঠিক পর থেকেই ২। ৩ মাস খাওয়া উচিত। প্রসূতিদের জন্য আরও কিছুদিন একবার করে খাওয়া ভাল। এর দ্বারা শরীর ও মন ভাল থাকবে। স্তন্যাল্পতাও হবে না।
৩. মস্তিষ্ক-দৌর্বল্যে: কোনো কিছু করতে, ভাবতে, নতুন করে গড়ে তুলতে হলে যে মানসিক স্থৈর্যের প্রয়োজন, তা তাতে নেই, সর্বদা ভয় ভয় ভাব; সেক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতি ও মাত্রায় পাঞ্জা সালম চূর্ণ ৫ । ৬ মাস খেলে উপকার পাবেন।
৪. মেধাহ্রাসে: পড়ে, শোনে, কিন্তু স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে না, যাকে বলে ভুলো মন, সেটা অবশ্য বুড়ো বয়সে হলে আলাদা, অল্প বয়সে হলে তো সমস্যা চরমে; এক্ষেত্রে পাঞ্জা সালম চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার দুধ সহ কিছুদিন খেতে হবে।
৫. হৃদ্দৌর্বল্যে: বুক ধড়ফড়, ভ্রম, মাথা ঘোরা, সামান্যতে বিরক্তি ভাব, হঠাৎ হঠাৎ ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া, সেইসঙ্গে খাদ্যে অরুচি, কাজে অনীহা প্রভৃতি; এমতাবস্থায় পাঞ্জা সালম চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার দুধসহ অর্থাৎ সকালে একবার এবং বিকালে একবার মাস দেড়েক খেলে চলবে। তারপর প্রয়োজন হলে একবার করে আরও মাস দেড়েক খাওয়া ভাল।
৬. শুক্রাল্পতায়: অত্যধিক ক্ষয়ের ফলে যেখানে এ অবস্থার সৃষ্টি, সেখানে অবস্থার অবনতির গুরুত্ব পর্যালোচনা করে পাঞ্জা সালম চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার করে ২-৬ মাস খেতে হবে। যখন অবস্থা আয়ত্তের মধ্যে আসবে, তখন থেকে দুবারের পরিবর্তে একবার করে আরও কিছুদিন ব্যবহার করা বিধেয়।
৭. উত্তেজনাহীনতায়: নারী আর পুরুষ সময় থাকতে যদি যৌবনের উত্তেজনাঘন মুহূর্তগুলোর মুখোমুখি না হতে পারলো, তখন বিষাদ তো আসবেই। সেই মনমরা আনমনা অবস্থা থেকে নানাপ্রকার মানসিক ও শারীরিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, এমন-কি সংসার জীবনে চরম অবনতির কিংবা বিপর্যয়ের সংকেত যেকোন মুহূর্তে আসাটা তখন মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অসহায়ত্বের শিকার হয়ে চিরবিদায়ের পথও কেউ কেউ বেছে নিয়েছে। সেজন্য এ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা প্রথম থেকেই করা ভাল। প্রথমের দিকে এক গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার করে দুধসহ মাসখানিক খাওয়ার পর ২ গ্রাম মাত্রায় আরো মাসখানিক খাওয়া উচিত। তারপর ২ গ্রাম ক’রে একবার মাসখানিক এবং ১ গ্রাম মাত্রায় আরো মাসখানিক সেব্য। অবস্থার উন্নতির উপর মাত্রা কম-বেশি করা যায়।
৮. জীর্ণ অতিসার ও প্রবাহিকায়: মাঝে মাঝে পাতলা দাস্ত, সেইসঙ্গে আমাশা, এটা যেন দীর্ঘদিনের সাথী হয়ে গেছে, কখনো কখনো ওটাকে রোগ বলে মনেই হয় না। এক্ষেত্রে পাঞ্জা সালম চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে দুবার জলসহ সেবন হিতকর। মাসখানিক খেলেই স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। তারপর আরও কিছুদিন এক বা দু’বার ক’রে খাওয়া উচিত।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৫৮-২৫৯।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: T. Kebert
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।