ইসবগুল-এর ছয়টি উপকারিতা

ইসবগুল (বৈজ্ঞানিক নাম Plantago ovata Forsk.) হচ্ছে প্লান্টাগিনাসি পরিবারের প্লান্টাগো গণের সদস্য। এটি এক ধরণের ভেষজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।

লোকায়তিক ব্যবহার

১. কোষ্ঠবদ্ধতায়: এটি সাময়িকভাবে যেমন আসতে পারে, তেমনি দীর্ঘদিন ধ’রে থাকতে পারে। পুরাতন কোষ্ঠবদ্ধতায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরা অন্যান্য অনেক প্রকার রোগের কবলে পড়ে যান। যেমন অর্শ, দীর্ঘস্থায়ী পেটের গোলমাল প্রভৃতি। সাধারণতঃ নানা প্রকার জ্বর ও অন্যান্য কিছু কিছু রোগে ভোগার সময় কিংবা দীর্ঘ সময় যানবাহনে যাত্রা করার ফলে, অনিয়মিত আহার ও বিহারের কারণে সাময়িকভাবে কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেয় ।

পুরাতন কোষ্ঠবদ্ধতা হলে ঈশবগুলের বীজ কিংবা ভূষি ৫–১০ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে এক কাপ ঠাণ্ডা অথবা হালকা গরম জলে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর তাতে ২। ৩ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে ভালভাবে গুলে সকালের দিকে খালি পেটে একবার এবং এভাবে রাত্রে শোয়ার সময় একবার কিছুদিন খেতে হবে। দাস্ত নিয়মিত হওয়া আরম্ভ হলে কেবল রাত্রের দিকে একবার খেলেই চলবে। এভাবে কিছুদিন (মাস দুই আন্দাজ) খাওয়ার পর এটিকে সপ্তাহে ২। ৩ দিন, আরও পরে একদিন ক’রে ব্যবহার করা উচিত। বীজ জলে ভেজানোর পূর্বে ঠাণ্ডা জলে একবার ধুয়ে নিলে ভাল হয়।

অম্লপিত্ত রোগজনিত কোষ্ঠবদ্ধতায় চিনি না ব্যবহার করাই শ্রেয়। রোগভোগকালীন কোষ্ঠবদ্ধতায় সারাদিনে ঈশবগুলের ভূষির সরবত ৩। ৪ বার খাওয়া যেতে পারে। প্রতিবারে জল কাপ দেড়েক, ভূষি ৩৫ গ্রাম, চিনি ৩। ৪ চা-চামচ নিয়ে সরবত বানাতে হবে। বীজ ও ভূষির মাত্রা অবস্থা বিশেষে কম-বেশি করে নিতে হয়। যাতে অধিক দাস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখি— ঈশবগুলের বীজ কিংবা ভূষির মত এত নির্দোষ দাস্ত পরিষ্কারক ঔষধ খুবই কম আছে, যা মানুষ অতি সহজে বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করতে পারে এবং যেকোন রোগে ভোগার সময় দাস্ত পরিষ্কার রাখার জন্য ব্যবহার করলে কোন প্রকার অসুবিধায় পড়তে হয় না ।

আরো পড়ুন:  বড় দুধিয়া-এর সাতটি ভেষজ গুণাগুণ

২. অর্শে: তা সেও যেকোন প্রকারেরই অর্শ হোক না কেন, রক্ত পড়তেও পারে আবার নাও পড়তে পারে, সর্বক্ষেত্রেই কোষ্ঠবদ্ধতা কম-বেশি থাকেই। অর্শ রোগের একেবারে প্রথমাবস্থা থেকে ঈশবগুলের বীজ বা ভূষি খেয়ে দাস্ত পরিষ্কার রাখতে পারলে ওটা আর বাড়তে পারে না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বলি চুপসে যায়, রক্তপড়া বন্ধ হয়। দীর্ঘদিনের হলে অন্যান্য ঔষধ সেবনের সঙ্গে সঙ্গে এটির বীজ কিংবা ভূষি ব্যবহার করতে পারলে দাস্ত পরিষ্কার থাকবে, রক্ত পড়াও বন্ধ হবে। রোগ বাড়াবাড়ি অবস্থায় থাকলে অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে এর ব্যবহারে কোন কুফল দেখা যায় না। মাত্রা ও প্রস্তুত পদ্ধতি উপরিউক্ত যোগটিতে বলা হয়েছে।

৩. মূত্রকৃচ্ছ্র ও মূত্রপ্রদাহে: নানা কারণে এ উপসর্গ আসতে পারে এবং তা বহু রোগের ইঙ্গিত বহন করে থাকে। অত্যধিক রোদে ঘোরাফেরা, পরিশ্রম, রাত্রিজাগরণ, সেই সঙ্গে অনিয়মিত আহার ও বিহার যেমন সাময়িকভাবে মূত্রকৃচ্ছ্রতা ও প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে, তেমনি মূত্রাশয়, মূত্রনালী, বৃক্ক (কিডনী) ও পৌরুষ (প্রোস্টেট) গ্রন্থি সমূহের কোন না কোন রোগের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমে উল্লেখিত কারণে মূত্রকৃচ্ছতা প্রভৃতি দেখা দিলে ঈশবগুলের বীজ অথবা ভূষি ৫ গ্রাম নিয়ে তাতে কাপ দুই ঠাণ্ডা জল ও পরিমাণমত চিনি মিশিয়ে সরবত প্রস্তুত করে সকালের দিকে একবার এবং এভাবে বিকালের দিকে একবার খাওয়ালে দু’চার দিনের মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। অবশ্য প্রয়োজনে দু’বারের জায়গায় সরবত ৩। ৪ বারও খাওয়ানো যেতে পারে। অন্য (কান রোগের কারণে এসব উপসর্গ যখন আসে, তখন সেই রোগের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এর সরবত সেবনও চলবে। অবস্থা বিশেষে বীজ কিংবা ভূষির মাত্রা কম-বেশি করা যেতে পারে।

৪. জীর্ণ প্রবাহিকায়: পুরাতন আমাশা বলা হয়। এতে যেমন সাদা সাদা থোকা থোকা আমযুক্ত দাস্ত হয়ে থাকে, তেমনি রক্ত মিশ্রিত আম-সংযুক্ত দাস্তও হতে পারে। নানা প্রকার চিকিৎসার দ্বারা যখন নিরাময় হবার আশা ত্যাগ করা ছাড়া গতি থাকে না, তখনও যদি ঈশবগুলের ভূষি কিংবা বীজ ব্যবহার করেন, তাহলে দীর্ঘদিনের ব্যবহারে এই রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।

আরো পড়ুন:  নিসিন্দা গাছের ২৮টি ভেষজ গুণাগুণ ও ব্যবহার পদ্ধতি জেনে নিন

এক্ষেত্রে বীজ ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল, না পেলে ভূষি। প্রথমে ৮। ১০ গ্রাম বীজ নিয়ে ভালভাবে ধুয়ে তার সঙ্গে ২। ৩ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে সেটিকে সকালের দিকে একবার এবং এভাবে বৈকালের দিকে একবার কিছুদিন খেতে হবে। আবার ঐ সঙ্গে কাপখানিক জল মিশিয়ে সরবতের মত করেও খাওয়া চলে। এটি জীবাণুকে মেরে (ফলতে পারে না ঠিকই, তবে দাস্তের সঙ্গে বের করে দিয়ে শরীরকে সতেজ করতে পারে।

৫. জীর্ণ অতিসারে: দীর্ঘদিন ধরে যাঁদের পাতলা দাস্ত হচ্ছে, কখনো একটু গাঢ় তো কখনো বেশ পাতলা, কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য আম-সংযুক্ত, কখনো-বা রক্তমিশ্রিত দাস্ত, সেই সঙ্গে পেটফাঁপা, অজীর্ণ, পেটব্যথা প্রভৃতি; তাঁরা এর হাত থেকে রেহাই পেতে চাইলে উপরিউক্ত মাত্রায় ও পদ্ধতিতে ঈশবগুলের বীজ কিছুদিন খেয়ে যেতে হবে। মাঝে মাঝে ভূষি খেলেও চলবে ।

৬. শ্বাস-কাস-প্রতিশ্যায়ে (সর্দিতে): এগুলি নতুন কিংবা পুরাতন যে অবস্থায়ই দেখা দিক না কেন, তখন যদি ঈশবগুলের ভূষি কিংবা বীজের সরবত সারা দিনে ২ বার ক’রে লাগাতার কিছুদিন খাওয়া যায়, তাহলে প্রথমের দিকে কাসি ও সর্দি চলে যায়। শ্বাস রোগের ক্ষেত্রে (বিশেষতঃ Bronchial asthmaতে) দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে সরবত হালকা গরম জল দিয়ে তৈরী করা উচিত। শ্বাস রোগের আনুষঙ্গিক চিকিৎসা চালানো প্রয়োজন হলে চালিয়ে যেতে হবে ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১০২-১০৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!