দামেস্ক গোলাপ-এর গুণাগুণ, উপকারিতা ও প্রয়োগ

ঘন কাঁটাবিশিষ্ট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পাতা দেখতে অনেকটা গোলাকার ও কিনারা করাতের মতো খাঁজ কাটা। কচি কাণ্ডের অগ্রভাগে ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট ফল হয়, কোন কোন প্রদেশে জলবায়ু, এবং মাটির গুণে ফলের, গন্ধের ও আকারের তারতম্য ঘটে। বিভিন্ন রঙের গোলাপ হয়। ফল অনেকটা টোপা কুলের মত, তবে আর একটি কথা বলে রাখি, এর বীজেও গাছ হয়, তা কদাচিৎ কিন্তু কলমেই গাছ হয় এবং তাতেই ফল হয়ে থাকে।

দামেস্ক গোলাপ-এর অন্যান্য নাম:

এই গণের (Genus) প্রায় ৩০টি প্রজাতি বর্তমান। এদের মধ্যে ৯টি প্রজাতি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বিহার, উত্তর প্রদেশ, অমৃতসর ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। নিঘণ্টকারদের মতে এর নাম শতপত্রী, বাংলায় প্রচলিত নাম গোলাপ, দামেস্ক গোলাপ ও হিন্দী এবং ইউনানীদের কাছে গলাব নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল, নাম Rosa damascena Mill. ও ফ্যামিলি Rosaceae.

গুণাগুণ:

রসে তিক্ত, ধারক, বলকারক, হদযন্ত্রের হিতকর, মদবিরেচক, পিত্তপ্রশমক ও মেদোজনক। ঔষধ হিসাবে প্রয়োগ করা হয় ফল। মাথার যন্ত্রণায়, চক্ষুরোগে ও অতিরিক্ত ঘম নিঃসরণে হিতকর। কচি মুকুল ধারক ঔষধ হিসেবে ও শিরঃপীড়ায় বহুল ব্যবহত হয়। অনেকের মতে এটা দেহের অতিরিক্ত সন্তাপ দূরীকরণে সহায়ক। ব্যবহার্য অংশ ফল।

দামেস্ক গোলাপ-এর উপকারিতা:

ঔষধার্থে ব্যবহার হয় ফল। এটি প্রধানভাবে কাজ করে রসবহ স্রোতে।

১. অরুচি রোগে: অরুচি কথাটি যেমন পরিচিত, রোগটাও তেমনি অনুভূতির। রোগটি যদি দেহে হয়, তবে সে রোগ মনে এবং হদয়েও হয়, যার ফলে হৃদরোগের সৃষ্টি হতে পারে। এই জন্যই অরুচি দেখা দিলেই ভিতরে ভিতরে একটি সক্ষম রোগেরও সৃষ্টি করে, সেটা হলো, মাঝে মাঝে গলার স্বরটা একটু চেপে যায়, এটা সর্বদা থাকে না। অতএব অরুচিকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না। এক্ষেত্রে কাঁচা গোলাপ ফুল ৫-১০ গ্রাম জলে বেটে অল্প চিনি বা ২ চা-চামচ মধু মিশিয়ে এক গ্লাস সরবত করে প্রত্যহ একবার করে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই অসুবিধেটা চলে যাবে অর্থাৎ অরুচিটার উপশম হবে, অবশ্য কয়েকদিন খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  বন ভেণ্ডী বা স্বর্ণ ভিণ্ডী ভেষজ গুল্ম

২. পিত্ত বমনে: জ্বরে, রৌদ্র লাগায়, অজীর্ণ হলে প্রায়ই বমি হয়। সঙ্গে গায়ে হাতে জ্বালাও থাকে, এই সময় গোলাপ কুড়ি (আধ ফোটা) বেটে সরবত করে খেলে এটা কমে যাবে। ফুলের কুড়ি ৫। ৭ গ্রাম হলেও চলবে।

৩. কুষ্ঠের প্রথমাবস্থায়: যদি লক্ষণ দেখা দিলে গোলাপফুল ৭। ৮ গ্রাম বেটে সরবত করে সকালে একবার ও বিকালের দিকেও একবার খেতে হবে। এইভাবে ১০। ১৫ দিন খাওয়ার পর থেকে ঐ কুষ্ঠের প্রথমাবস্থার উপসর্গগুলি ধীরে ধীরে চলে যাবে। এটা বেশ কিছুদিন খেলে আর অন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না; যদি একটু বেশী হয়, তাহলে গোলাপ ফুল বেটে ওইসব জায়গায় লাগাতে হবে। কিছুদিন লাগালে ক্ষতগুলি শুকিয়ে যাবে।

৪. বাতরক্তে: এই রোগের উপসর্গগুলি কুষ্ঠের প্রথমাবস্থার লক্ষণের মতো। এক্ষেত্রে গোলাপ ফুল বাটার সরবত কাজ করে।

৫. অপুষ্টিতে: তা শিশু, বৃদ্ধ, যুবক যে বয়সেরই হোক না কেন, গোলাপ পাপড়ির হালুয়া খেলে শরীর পুষ্ট হবে। মাত্রা ৫ গ্রামের মতো ২ বার-এটা পূর্ণ মাত্রা। বয়সানুপাতে মাত্রা হিসেব করে দিতে হবে; তবে মনে রাখতে হবে—একটুআধটু, বেশী খেলেও ক্ষতি হয় না।

হালয়া প্রস্তুত করার নিয়ম:

এই হালয়ার ইউনানি নাম “গুলকন্দ”, হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চলে এই নামেই পরিচিত। কাঁচা গোলাপ পাপড়ি যত পরিমাণ (ওজনে) ততটা চিনি মিশিয়ে চটকাতে হবে, বেশ খানিকটা সময় চটকাবার পর রৌদ্রে দিতে হবে। সন্ধ্যার দিকে তাকে ভাল করে ঢেকে রাখতে হবে, তার পরের দিন পুনরায় চটকে তাকে আবার রৌদ্রে দিতে হবে। এইভাবে তাকে ৭।৮ দিন শুকিয়ে নিলে “গুলকন্দ” তৈরী হয়।

CHEMICAL COMPOSITION

Rosa damascena Mill. The flower contains: — Essential oil (citronellol 45-51%; and geraniol); volatile oil .05%; ketone 1%; a bitter principle; tanning matter 237; fatty oil; organic acids. The red colouring matter consists of:Cyanin (9-10%); quercitrin and dyestuff. Pollen from the flower contains: — Carotene 0.76 mg/100 g; sugars 1% and chlorogenic acid (1.5%). Hips contains:-The pigments lycopene. £-and ßcarotenes; rubixanthin; zeaxanthin; xanthophyll and taraxanthin.

আরো পড়ুন:  বীরতরু বৃক্ষের পাঁচটি ভেষজ গুণাগুণের বর্ণনা

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২০১-২০৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!