ছোট কন্টকারি ভেষজ গুল্ম

ছোট কন্টকারি অযত্নে জন্মায়। এটিকে ঝোপেঝারে দেখা যায়। ছোট বাচ্চারা এর পাকা ফল নিয়ে খেলা করে। এই গুল্মে নানা ভেষজ গুণ আছে। গ্রামীণ মানুষ এটার কিছু ভেষজ ব্যবহার জানে। গবেষণাগারে এর পরীক্ষা নিরীক্ষা যেহেতু নেই তাই পরিমিত ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায় নি।

ছোট কন্টকারি-এর পরিচিতি

ছোট কন্টকারি লতানে গুল্ম জাতীয় গাছ। কাণ্ড কখনো কখনো ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। অযত্নসম্ভূত, রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে, জঙ্গলের আশেপাশে ভারতের সর্বত্র কম বেশি জন্মে। কাণ্ড থেকে যেসব শাখা-প্রশাখা বেরোয়, সেগুলোও লম্বা হয়ে থাকে। সমগ্র গাছ হুকের মত কাঁটাযুক্ত থাকে। পাতা ডিম্বাকৃতি গোল, অগ্রভাগ ভোঁতা, কিনারা অসম। পাতার মধ্য শিরায় কাঁটা থাকে, কোনো কোনো পাতায় আবার থাকে না। ফুল বেগুনী-লাল রঙের, দেখতে খুবই সুন্দর। ফল থোকা থোকা, পাকলে লাল। বীজ মসৃণ, তবে সামান্য দাগ বিশিষ্ট।

অন্যান্য নাম

সংস্কৃত নাম পূর্বে বলা হয়েছে। বাংলায় ছোট কণ্টকারি, অগ্নিদমনী প্রভৃতি নামে কোথাও কোথাও এটির পরিচিতি। বোটানিক্যাল নাম Solanum trilobatum Linn. ফ্যামিলী Solanaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ : পঞ্চাঙ্গ ।

প্রকারভেদ

তিন প্রকার কন্টকারীর দেখা যায়, তার মধ্যে এটি একটি। প্রথমত পুষ্প ভেদে ২ প্রকার, একটিতে বেগুনী এবং আর একটিতে সাদা রঙের ফুল হয়, তবে দুটো একই প্রজাতিভুক্ত (Solanum surattense Burm.f., পূর্বে এটির নাম ছিল Solanum xanthocarpum Schrad & Wendl.); দ্বিতীয়ত আলোচ্য ভেষজ অগ্নিদমনী, এটির বোটানিক্যাল নাম Solanum trilobatum L.

Solanum-এর আর একটি প্রজাতি পাওয়া যায়। যার ফুল সাদা, ক্ষুপ জাতীয় হলেও দাঁড়ানো গাছ, অথচ সেটি Surattense ( xanthocarpum) প্রজাতির অন্তর্গত নয়; ওটি বহিরাগত হলেও বর্তমানে রাস্তার ধারে যত্রতত্র দেখতে পাওয়া যায়, অযত্নসম্ভূত; বোটানিক্যাল নাম Solanum sisymbrifolium. তবে সাধারণ লোকে এটিকে কন্টকারী বা সাদা কন্টকারী প্রভৃতি বলে থাকেন। তবে এই নিবন্ধটি Solanum trilobatum -কে নিয়ে।

আরো পড়ুন:  তিতাপাট উষ্ণমন্ডলীয় দেশে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

ভেষজ গুণাগুণ

মূল ও পাতা : তিক্ত, পূর্বে ক্ষয়রোগে ব্যবহার করা হতো। খাদ্য হিসেবে মূল ও পাতার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তেলেগুদের বিশ্বাস এই যে, এর পাতা খেলে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। কচি ডালও এইসঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

ফুল ও ফল : সর্দি-কাসিতে ব্যবহৃত হয় ।

সমগ্র গাছ : সিদ্ধ ক’রে খেলে পুরাতন বা জীর্ণ ফুসফুসনলিকা প্রদাহ (chronic bronchitis) ভাল হয় ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৬১-৬২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Palak Thakor

Leave a Comment

error: Content is protected !!