সর্পগন্ধা ২ প্রকার। এ দুটি প্রজাতি ওষধি গাছ Apocynaceae ফ্যামিলীভুক্ত। নাকুলী অর্থাৎ সর্পগন্ধা বোটানিক্যাল নাম Rauwolfia serpentina, এটির বাংলায় চলতি নাম ছোট চাঁদড় আর উর্দুতে বলে ইসরোল এবং গন্ধনাকুলীর বর্তমান নাম Rauwolfia tetaphylla, এটাকে বলা হয় বড় চাঁদড়। বর্তমানে নব্য বৈজ্ঞানিক বলছেন যে, বড় চাঁদড় less toxic অথচ কয়েকশত বৎসর পুর্বে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল লিপিবদ্ধ করে গেছেন, তাই তারা বলেছেন-ছোট চাঁদড় অপেক্ষা বড় চাঁদড়ের মূল কিঞ্চিৎ শ্রেষ্ঠ।
সর্পগন্ধা বা ছোট চাঁদড়ের গাছগুলি সাধারণত ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় দীর্ঘ হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত উচু হতেও দেখা যায়, গাছে বিশেষ শাখা-প্রশাখা হয় না। পাতাগুলি দেখতে অনেকটা মালতীফুলের গাছের পাতার মতো, কিন্তু পত্রাগ্র একটু সরু ও লম্বা। পুষ্পদণ্ডে অল্প গুচ্ছবদ্ধ গোলাপী ফুল হয়, পুষ্পধি টকটকে লাল, বীজগুলি প্রথমে সবুজ, পরে পাকলে বেগুনী কালো হয়, বীজগুলি প্রায় ক্ষেত্রে জোড়া হয়। মূলগুলি দেখতে মোটা, প্রায় ১ থেকে দেড় ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত ও ভঙ্গুর। মূলের রঙ ধুসের পীতবর্ণের। এর মূল চেনার উপায় হলও; কাঁচা মূলের গন্ধ কাঁচা তেতুলের মতো।
আরো পড়ুন: সর্পগন্ধা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ গুণসম্পন্ন বন্য প্রজাতি
বড় চাঁদড়ের গাছগুলি ৪/৫ ফুট লম্বা হয়, কাষ্ঠগর্ভ মূল। শাখায় তিনটি করে পাতা বিন্যস্ত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চারটি পাতাও হয়ে থাকে। এটার মূলের গন্ধও অবিকল কাঁচা তেতুলের গন্ধ। ঔষধার্থে ব্যবহার হয় গাছের মূল।
ব্যবহার:
১ . বাংলার দুই চিকিৎসাক স্বর্গত কবিরাজ গণনাথ সেন ও ডাক্তার কার্তিকচন্দ্র বসু, তাঁদের মতে ‘ইহার মূল অত্যন্ত উত্তেজনানাশক ও নিদ্রাকারক, ইহার মূল চূর্ণ উপযুক্ত মাত্রায় সেবন করিলে সুনিদ্রা হয় ও উন্মত্ততার হ্রাস হয়। ইহার উপক্ষার (Alkaloid) হৃৎপিণ্ডের উপর অবসাদক ক্রিয়া করিয়া থাকে এবং রক্তবহ সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম শিরাগুলিকে বিস্ফারিত করিয়া থাকে। এই ক্রিয়ার জন্য এই ঔষধটির ব্যবহারের দ্বারা রক্তের স্রোতে বাহিত বায়ুর চাপ কমিয়া যায়’।
২. তাঁদের মতে- নিদ্রাকারক মাত্রা ১৫ থেকে ২০ গ্রেণ অর্থাৎ ১ গ্রাম-সওয়া গ্রাম মাত্রায়। রক্তগত বায়ুর বৃদ্ধিতে ৫ গ্রেণ মাত্রায় দিনে একবার প্রয়োজন হলে বায়ুর আধিক্যে দুইবার দেওয়া হয় দুধ ও চিনি সহ।
৩. তাঁরা আরও লিখেছেন যে, সকল প্রকার মনোবিকারে (Insanity) ইহা ফলদায়ক হয় না। শরীর দুর্বল ও নিস্তেজ বোধ হলে এবং মানসিক অবসাদজনিত রোগে (Melancholy) সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। বিশেষতঃ low ব্লাড-প্রেসার রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪. পূর্বে উন্মাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সময় ৫ থেকে ৭টি গোলমরিচ বাঁটা এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হতো। হয়তো এর উদ্দেশ্য সর্পগন্ধার অবসাদ আনা দোষটাকে সে অনেকটা কাটিয়ে দেয়, যেহেতু গোলমরিচ হৃদবলকারক, উষ্ণগুণবিশিষ্ট ও উত্তেজক।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Alkaloids viz, ajmaline, ajmalinine, ajmalicine, serpentine, serpentinine, isoajmaline, neoajmaline, rauwolfine.
(b) Other basic constituents.
(c) Oleoresin, serposterol.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৯৮-২৯৯।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
সর্পগন্ধা ভেষজ উদ্ভিদটি আমার প্রয়োজন, আমার উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা আছে, তাই এটি আমি নিতে চাই। এই গাাছের চারা কিভাবে পাবো? বাসা চিরিরবন্দর, দিনাজপুর। মোবাইল ০১৭২২৬০৮৪৮৭
আপনি আশেপাশের কোনো নার্সারিতে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। আমরা শুধু উদ্ভিদের উপকারিতা নিয়ে লিখি।