নিশিন্দা এশিয়া ও আফ্রিকার ঔষধি ছোট বৃক্ষ

ভূমিকা: নিশিন্দা বা নিসিন্দা বা বড় নিশিন্দা হচ্ছে ভাইটেক্স গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি। এটি এক প্রকার ছোট পর্নমোচী উদ্ভিদ যাদের প্রতি বছর পাতা ঝরে যায়। এটি গুল্ম অথবা বৃক্ষ হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক নাম: Vitex negundo.

ইংরেজি নাম: Indian Privet, Chinese Chaster Tree, Five-leaved Chaster Tree. স্থানীয় নাম:  বড়-নিশিন্দা, নিশিন্দা।জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots অবিন্যাসিত: Asterids  বর্গ: Lamiales  পরিবার: Lamiaceae গণ: Vitex প্রজাতি: Vitex negundo

নিসিন্দার বর্ণনা:

নিসিন্দা বৃহৎ গুল্ম থেকে ছোট বৃক্ষ, ৮ থেকে ১০ মিটার উঁচু। পাতা সুগন্ধি ও এর বাকল ফিকে হলুদ হয় ও দেখতে পাতলা, বাদামী, পুরাতন বৃক্ষ ফাটলযুক্ত ও উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের। এদের পাতা আঙ্গুলাকারে ৩-৫ পত্রকটি , পাতার আকার ৪-১২ x ১.৫-৪.৪ সেমি, দেখতে বল্লমাকার, হালকা দম্ভর, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, গোড়া কীলকাকার, পাতার উপরের দিক গাঢ় সবুজ, নিচের দিক সামান্য রোমশ এবং ফিকে, সাধারণ পত্রবৃন্ত ২-৫ সেমি লম্বা।

নিসিন্দার পুষ্পবিন্যাস প্রসারিত, শীর্ষক প্যানিকল, ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা। ফুল হালকা সুগন্ধি, ৩.০-৭.০ সেমি চওড়া, রক্ত-বেগুনি-নীল বা নীলাভ, পুষ্পমঞ্জরী অক্ষের উপর প্রতিমুখ সাইমে সজ্জিত বৃতি বিকোনাকার, সায়াথিসদৃশ, ১.৫-২.০ মিমি চওড়া, ঘন ধূসরবৎ, ঘন ক্ষুদ্র রোমাবৃত, ৫-শিরাযুক্ত, দন্তক ৫টি, সূক্ষ্মা, ফলে বৃতি অণুরোমাবৃত। দলমন্ডল রঙ্গনাকার, নীল বা ফিকে নীল থেকে বেগুনি, গোলাপী বা কখনো সাদা, নলাকার, নল ধুতুরাকার, ৩-৪ মিমি লম্বা, বাহিরে দীর্ঘ রোমাবৃত। পাপড়ি ৫টি, উপরের ওষ্ঠ ২-খন্ডিত, নিম্ন ওষ্ঠ ৩-খন্ডিত যা বৃহৎ মধ্য খন্ডকযুক্ত, বিডিম্বাকার, প্রান্ত তরঙ্গায়িত যা সাদা বা হলুদ এবং রক্ত-বেগুনি ছোপযুক্ত।

পুংকেশর ৪টি, দীর্ঘদ্বয়ী, খাটো বহির্মুখী। গর্ভাশয় ৪ কোষী, ডিম্বক প্রত্যেক কোষে ১টি, গর্ভদন্ড শীর্ষক, গর্ভমুণ্ড সামান্য দ্বিখন্ডিত। ফল ডুপ, ৩.০-৫.৫ মিমি লম্বা এবং প্রশস্ত, ডিম্বাকার, রোমহীন, সামান্য খাঁজযুক্ত এবং গ্রন্থিল দাগযুক্ত, পাকলে রক্ত বেগুনি থেকে কালো রঙের হয়। বাহিরের ত্বক রসালো, ভেতরের ত্বক শক্ত।

ফুল ও ফল ধারণ: এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪, ২৬, ২৮, ৩২, ৩৪ (Kumar and Subramaniam, 1986).

নিসিন্দার আবাসস্থল:

উন্মুক্ত পরিত্যক্ত এলাকা, জলাশয়ের পাশে, এমনকি উপকূলীয় এলাকায়, বসত বাড়ীর সীমানার প্রান্ত বরাবর, বাগানে আবাদী।

বিস্তৃতি: ভারত, নেপাল, ভুটান, ইন্দো-চীন, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া এবং মায়ানমার। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

পাতা, মূল এবং ফল বিভিন্নভাবে দেশীয় ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস ক্যান্সাররোধী গুণসম্পন্ন, কখনো ক্ষত এবং ঘা থেকে নির্গত দুর্গন্ধ দূরীকরণে লোশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের পাউডার অর্শ রোগে স্নিগ্ধকারক এবং কাঠ বাত জ্বরে ব্যবহৃত হয়। মূল, বাকল এবং পাতা কৃমিনাশক, মূত্রবৃদ্ধিকারক, শ্লেষ্ম বিদারক এবং পাকস্থলীয় বায়ুনাশক। শুষ্ক পাতার ধূমপান করা হয় মাথা ব্যথা, সর্দি কাশি নির্মূলে এবং প্রাথমিক বাতজনিত কারণে সন্ধিস্থানে স্ফীতাবস্থা দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়।

আরো পড়ুন:  মুথা ঘাস বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে পাতা এবং ফল পোকা নিবারনে ব্যবহৃত হয় এবং সংরক্ষিত শস্য-দানা ও ডালের উপর ছড়িয়ে দেয়া হয় (Alam and Mohiuddin, 1987). কখনো বসতবাড়ীতে বেড়া দেয়ার উদ্ভিদ হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। ফিলিপাইনে বীজ সিদ্ধ করে খাওয়া হয় (Alam and Mohiuddin, 1987). পাকিস্তানে পানির নালা বরাবর লাগানো হয় ক্ষয় রোধ করার জন্য (Jafri and Ghafoor, 1974).

গুণপর্যায় ও ব্যবহারবিধিঃ

নিশিন্দার পাতা, ফুল, ফল, কান্ডের ছাল, মূলের ছাল, এক কথায় সমগ্ৰ গাছ‌ই ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়‌। নিম্নে প্রতিটি ক্ষেত্রের একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মাত্রা বলা হয়েছে। বয়সানুযায়ী মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। নিশিন্দার আরাও অনেক লোকায়ত ব্যবহার পদ্ধতি আছে, বিশেষত বৈদিক যুগের‌ও আগে থেকেই প্রচলিত আদিম অধিবাসীদের চিকিৎসাপদ্ধতি।

বাতের অসুখঃ

সকালে বিকাল খালিপেটে ১০ মিঃ লিঃ (দুই চা-চামচ) নিশিন্দা পাতার রস ২-৩ টি গোলমরিচ গুঁড়ো সহ নিয়মিত ১০-১৫ দিন খেলেই বাতের কষ্ট কমে যাবে। এর সঙ্গে ১৫-২০ টি নিশিন্দা পাতা দেড় দু লিটার জলে ফুটিয়ে ঐ জলে ২০-২৫ গ্ৰাম নুন মিশিয়ে ছোট কাপড়ের টুকরো ডুবিয়ে আক্রান্ত স্থানে গরম গরম ভিজে সেঁক দিন, দ্রুত আরাম পাবেন। অসহ্য সায়াটিকার যন্ত্রনায় নিশিন্দা পাতার চূর্ণ এক গ্ৰাম, আধ কাপ গরম জলে মিশিয়ে দু বেলা নিয়মিত খেলে ব্যথা কমবেই, সঙ্গে সেঁকটা নিতেই হবে।

পেট ফাঁপা ও কলিক পেনঃ

শুকনো নিশিন্দা পাতার চূর্ণ ১-২ গ্ৰাম, আধ কাপ ঈষদুষ্ণ জলে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে সকালে বিকালে নিয়মিতভবে কয়েকদিন খেলেই বায়ুর চাপ ও কলিক ব্যথা কমে যাবে। যাদের দুর্বল হজমশক্তির জন্য কথায় কথায় পেটে বায়ু জমে, বায়ুটা নিচে সরে না, ওপরে ঢেঁকুর‌ও ওঠেনা, অস্বস্তিকর আই ঢাঁই অবস্থা, তারা এটি ব্যবহার করে দেখুন। হঠাৎ করে খিদে কমে গেছে, এই অবস্থায় এক চামচ হলুদবাটার সঙ্গে আধ চামচ নিশিন্দাপাতা চূর্ণ দুপুরে গরম ভাতের সাথে সামান্য সরষের তেল ও নুন মেখে ৩-৪ দিন নিয়মিত খেলেই চনমনে খিদে এসে যাবে। খিদে বাড়ানোর জন্য নিশিন্দা ফুল বা কচি পাতা সামান্য কয়েক ফোঁটা গাওয়া ঘিয়ে ভেজে গরম ভাতে মেখে কয়েদিন খেলেই হবে। এই গাওয়া ঘিয়ে ভাজা নিশিন্দাপাতা জিভের পুরনো ঘা সারাতেও খুব ভাল কাজ করে।

আরো পড়ুন:  চীনাবাদাম পুষ্টিগুণসম্পন্ন সহজলভ্য ভেষজ বিরুৎ

ক্রিমীঃ

কুঁচো ক্রিমীর উপদ্রব কমাতে পর পর ৩-৪ দিন সকালে খালিপেটে সিকি চামচ নিশিন্দা পাতার গুঁড়ো ঠান্ডা জলে মিশিয়ে খেতে হবে।

ক্ষত, ফোঁড়া ও চুলকানিঃ

৩-৪ চামচ নিশিন্দা পাতার রস ৫০ গ্ৰাম তিল তেল বা নারকেল তেলের সঙ্গে ফেনা সম্পুর্ণ মরে যাওয়া পর্যন্ত ফুটিয়ে রেখে দিন। এই তেল লাগালে এটিই ফোঁড়া পাকিয়ে ফাটিয়ে শুকনো করে দেবে। এই তেল নিয়মিত মাখলে চুলকানি ও খোসের ঘা সেরে যাবে। শয্যাক্ষত বা বেড সোর‌ও এই তেল নিয়মিত ব্যবহারে সেরে যাবে। কানের পূঁজেও এটি ভাল কাজ করে।

জিঞ্জিভাইটিস টনসিলাইটিস ও ফ‍্যারিঞ্জাইটিসঃ

এই রোগগুলো আজকাল ঘরে ঘরে, ওষুধ খেয়ে দু দিন কম থাকে, আবার যেই কে সেই। অথচ শুরুতে নিশিন্দার আশ্রয় নিলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবেন। ১০০ মিঃ লিঃ জলে ৪-৫ টি পাতা ফুটিয়ে নিন, এবার জলটা ছেঁকে নিয়ে সামান্য নুন মিশিয়ে গড়গড়া বা গার্গল করুন, দিনে দু বার আহারের পর। ৫-৭ দিনেই টনসিলাইটিস ও ফ‍্যারিঞ্জাইটিস কমে যাবে। জিঞ্জিভাইটিসে এই জলে নুনের সঙ্গে যৎসামান্য ফিটকিরি মিশিয়ে নিয়ে এক‌ইভবে কুলকুচি করুন ক’দিন, মাড়ির কষ্ট ও মুখের দুর্গন্ধ দুইই কমে যাবে।

শয্যামূত্রঃ

অনেক বয়স পর্যন্ত বাচ্চা রাতে বিছানায় পেচ্ছাপ করে ফেলছে, কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সকাল সন্ধ‍্যে খালিপেটে এক গ্ৰাম নিশিন্দাপাতার চূর্ণ আধ কাপ গরম জলে মিশিয়ে নিয়মিত দিন সাতেক খাওয়ান, রোগটা সেরে যাবে। বৃদ্ধ বয়সে পেচ্ছাপ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে গেলে, রাতে বার বার উঠতে বাধ্য হলে, বিকেলে দু গ্ৰাম পাতার চূর্ণ এক‌ইভবে ক’দিন নিয়মিত খান, প্রকোপ অনেকটা কমে যাবে।

পুরানো কাশি ও হাঁপানিঃ

৩-৫ গ্ৰাম শুকনো নিশিন্দা ছাল সামান্য আদা বা শুঁঠচূর্ণ সহ ১০ মিঃ লিঃ জলে ফুটিয়ে জলটা মেরে অর্ধেক করে ছেঁকে নিয়ে সকাল সন্ধ‍্যে নিয়মিত খান। বহুদিনের পুরনো ঘং ঘঙ্গে কাশি ও হাঁপানীর টান ১০-১২ দিনেই কমে যাবে।

যোনি ক্ষতেঃ

দীর্ঘস্থায়ী সাদা স্রাবের কারনে যোনিতে জ্বালা যন্ত্রনা ও ঘা হলে নিশিন্দা পাতা ফোটানো জলে দিনে ২-৩ বার, রাতে শোবার আগে অবশ্যই, যোনিস্থান ধুলে কয়েকদিনে সব উপসর্গ কমবে।

ছুলি, খুসকি ও টাকপড়াঃ

১০০ গ্রাম নারকেল তেলে ১০-১২ টি নিশিন্দাপাতা কুঁচো করে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এই তেলটি স্নানের ঘন্টাখানেক আগে নিয়মিত মাখুন। কয়েদিন ব্যবহারে ছুলি ও খুসকি কমবেই, দীর্ঘদিন ব্যবহারে হঠাৎ টাকপড়াও (বংশগত নয়) সেরে যাবে।

আরো পড়ুন:  গন্ধবেণা, গন্ধ তৃণ বা লেমন ঘাস বাংলাদেশে জন্মানো ভেষজ তৃণ

স্থুলত্ব কমাতেঃ

এক গ্রাম পরিমান নিশিন্দাপাতা চূর্ণ সকাল খালিপেটে এক গ্লাশ ঠান্ডা জলে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ভূঁড়ি ও স্থুলত্ব কমবে। সঙ্গে তৈলাক্ত আহার বর্জন করতে হবে।

মাথাধরা ও মাইগ্রেণঃ

কাঁচা বা শুকনো পাতা হাতে ডলে খানিক্ষন শুঁকলে মাধরা কমে যাবে। শুকনো নিশিন্দাপাতার বালিশ তৈরি করে রাত্রে মাথায় দিয়ে শোয়ার অভ্যাস করুন, যে মাইগ্ৰেন ওষুধে সারেনি তাও ভাল হয়ে যাবে। সাইনোসাইটিস – ১০-১৫ মিঃ লিঃ নিশিন্দা পাতার রস সামান্য আদা ও মধুসহ দিন দু বার নিয়মিত ভবে কয়েকদিন খেলেই ভাল হয়ে যাবে।

ফণাধর সাপের কামড়ে

ফণাধর সাপের কামড়ে যেখানে স্নায়ুতন্ত্র আসাড় অকেজো হয়ে যায়, নিশিন্দার টাটকা মূলের ছাল ৪-৫ গ্ৰাম ২-৩ টি গোলমরিচ সহ বেটে বেশ খানিকটা জলে গুলে রুগীকে খাওয়াতে পারলে বিষক্রিয়ার গতি স্তিমিত হবে, রুগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আ্যন্টিভেনম দেওয়ার সময় পাবেন।

শুকনো নিশিন্দাপাতার ধোঁয়া মশা ও মাছি তাড়াবার নিরাপদ পদ্ধতি। ন‍্যাপথালিনের পরিবর্তেও শুকনো নিশিন্দা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

বংশ বিস্তার: নিসিন্দা গাছের বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে। শাখা থেকে কলম এবং মূলের উর্ধ্বধাবক দ্বারাও নতুন চারা করা যায়।

অন্যান্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রাণী জ্ঞানকোষের দশম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  বর্তমানে প্রজাতিটির সংকটের উল্লেখ নেই। বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা আশংকা মুক্ত (lc)। বাংলাদেশে এটিকে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৯৪-৪৯৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!